০৪:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রিয়াদ: সংঘাত নিরসনে সৌদি আরবের সংজ্ঞায়িত বছর ইয়েমেনে বন্দিবিনিময়ে বড় অগ্রগতি, দুই হাজার নয়শ’ জনের মুক্তিতে সমঝোতা অর্থনীতি টিকে থাকলেও জীবনের চাপে ক্লান্ত আমেরিকা, দুশ্চিন্তায় নতুন বছর রাশিয়ার ভয়াবহ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো বিপর্যস্ত, শিশুসহ নিহত তিন আবু ধাবি–দুবাইয়ে বিদেশি ইয়ট চলাচল সহজ হচ্ছে জানুয়ারি থেকে কনটেন্ট ব্যয়ে নতুন হিসাব কষছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ঘন শহরে মানিয়ে নিচ্ছে নগর বন্যপ্রাণী কার্বন বাজার ঘিরে জলবায়ু আলোচনায় নতুন বিতর্ক ইন্দোনেশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতা চূড়ান্তের পথে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরের সম্ভাবনা ইউরোপের নতুন এআই বিধি নিয়ে প্রস্তুতিতে প্রযুক্তি জায়ান্টরা

ল্যাবরেটরিতে মানব জরায়ুর আস্তরণ, প্রথমবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে সাফল্য

মানব গর্ভধারণের সবচেয়ে রহস্যময় শুরুর অধ্যায় উন্মোচনের পথে বড় সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে মানব জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করে সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে মানব ভ্রূণ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণা গর্ভপাত, চিকিৎসা জনিত জটিলতা এবং বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কীভাবে তৈরি হলো কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ

গবেষকরা সুস্থ নারীদের কাছ থেকে নেওয়া জরায়ুর বায়োপসি নমুনা ব্যবহার করেন। সেখান থেকে আলাদা করা হয় দুই ধরনের কোষ। এক ধরনের কোষ জরায়ুর আস্তরণ কে কাঠামোগত শক্তি দেয়, অন্যটি আস্তরণের উপরের স্তর গঠন করে। প্রথম ধরনের কোষ রাখা হয় বিশেষভাবে তৈরি জৈব উপাদানের ভেতরে, আর তার ওপর বসানো হয় দ্বিতীয় ধরনের কোষ। এভাবেই তৈরি হয় জরায়ুর মতো একটি কার্যকর আস্তরণ।

ভ্রূণ প্রতিস্থাপন ও হরমোনের সাড়া

এই কৃত্রিম আস্তরণে আইভিএফ চিকিৎসা শেষে দান করা প্রাথমিক পর্যায়ের মানব ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রূণগুলো ঠিক যেভাবে মানবদেহে ঘটে সেভাবেই আস্তরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করে। একই সঙ্গে তারা এমন এক হরমোন নিঃসরণ করে, যা গর্ভধারণ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেখায়। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার রাসায়নিক যোগাযোগ সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান।

Scientists capture first footage of human embryo implanting in a uterus |  Science | The Guardian

গর্ভধারণের শুরুর রহস্য উন্মোচন

নিষেকের প্রায় এক সপ্তাহ পর ভ্রূণ জরায়ুর দেয়ালে স্থাপন হয়, যা গর্ভধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এতদিন এই পর্যায় সম্পর্কে জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। নতুন এই পদ্ধতিতে ভ্রূণকে নিষেকের পর চৌদ্দ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে প্লাসেন্টা তৈরির সঙ্গে যুক্ত বিশেষ কোষগুলোর বিকাশও দেখা গেছে।

আইভিএফ সাফল্যে নতুন আশা

গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার সংকেতের সামান্য গোলমালও প্লাসেন্টা গঠনে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট এক ধরনের সংকেত বন্ধ করে দিয়ে সেই ত্রুটির প্রভাবও দেখিয়েছেন। গবেষকদের মতে, প্রায় অর্ধেক ভ্রূণই জরায়ুতে স্থাপন হতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আইভিএফ চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আন্তর্জাতিক গবেষণার মিল

একই সময়ে চীনের গবেষকরাও অনুরূপ কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ তৈরি করে এমন কিছু ওষুধ চিহ্নিত করেছেন, যা বারবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ রোগীদের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চার দশকের বেশি সময় ধরে সহায়ক প্রজনন চিকিৎসায় প্রতিস্থাপনের হার খুব বেশি বাড়েনি। নতুন এই গবেষণা সেই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর পথ দেখাতে পারে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রিয়াদ: সংঘাত নিরসনে সৌদি আরবের সংজ্ঞায়িত বছর

ল্যাবরেটরিতে মানব জরায়ুর আস্তরণ, প্রথমবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে সাফল্য

০২:৩৮:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

মানব গর্ভধারণের সবচেয়ে রহস্যময় শুরুর অধ্যায় উন্মোচনের পথে বড় সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে মানব জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করে সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে মানব ভ্রূণ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণা গর্ভপাত, চিকিৎসা জনিত জটিলতা এবং বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কীভাবে তৈরি হলো কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ

গবেষকরা সুস্থ নারীদের কাছ থেকে নেওয়া জরায়ুর বায়োপসি নমুনা ব্যবহার করেন। সেখান থেকে আলাদা করা হয় দুই ধরনের কোষ। এক ধরনের কোষ জরায়ুর আস্তরণ কে কাঠামোগত শক্তি দেয়, অন্যটি আস্তরণের উপরের স্তর গঠন করে। প্রথম ধরনের কোষ রাখা হয় বিশেষভাবে তৈরি জৈব উপাদানের ভেতরে, আর তার ওপর বসানো হয় দ্বিতীয় ধরনের কোষ। এভাবেই তৈরি হয় জরায়ুর মতো একটি কার্যকর আস্তরণ।

ভ্রূণ প্রতিস্থাপন ও হরমোনের সাড়া

এই কৃত্রিম আস্তরণে আইভিএফ চিকিৎসা শেষে দান করা প্রাথমিক পর্যায়ের মানব ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রূণগুলো ঠিক যেভাবে মানবদেহে ঘটে সেভাবেই আস্তরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করে। একই সঙ্গে তারা এমন এক হরমোন নিঃসরণ করে, যা গর্ভধারণ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেখায়। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার রাসায়নিক যোগাযোগ সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান।

Scientists capture first footage of human embryo implanting in a uterus |  Science | The Guardian

গর্ভধারণের শুরুর রহস্য উন্মোচন

নিষেকের প্রায় এক সপ্তাহ পর ভ্রূণ জরায়ুর দেয়ালে স্থাপন হয়, যা গর্ভধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এতদিন এই পর্যায় সম্পর্কে জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। নতুন এই পদ্ধতিতে ভ্রূণকে নিষেকের পর চৌদ্দ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে প্লাসেন্টা তৈরির সঙ্গে যুক্ত বিশেষ কোষগুলোর বিকাশও দেখা গেছে।

আইভিএফ সাফল্যে নতুন আশা

গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার সংকেতের সামান্য গোলমালও প্লাসেন্টা গঠনে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট এক ধরনের সংকেত বন্ধ করে দিয়ে সেই ত্রুটির প্রভাবও দেখিয়েছেন। গবেষকদের মতে, প্রায় অর্ধেক ভ্রূণই জরায়ুতে স্থাপন হতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আইভিএফ চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আন্তর্জাতিক গবেষণার মিল

একই সময়ে চীনের গবেষকরাও অনুরূপ কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ তৈরি করে এমন কিছু ওষুধ চিহ্নিত করেছেন, যা বারবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ রোগীদের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চার দশকের বেশি সময় ধরে সহায়ক প্রজনন চিকিৎসায় প্রতিস্থাপনের হার খুব বেশি বাড়েনি। নতুন এই গবেষণা সেই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর পথ দেখাতে পারে।