মানব গর্ভধারণের সবচেয়ে রহস্যময় শুরুর অধ্যায় উন্মোচনের পথে বড় সাফল্য পেলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে মানব জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করে সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে মানব ভ্রূণ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই গবেষণা গর্ভপাত, চিকিৎসা জনিত জটিলতা এবং বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে তৈরি হলো কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ
গবেষকরা সুস্থ নারীদের কাছ থেকে নেওয়া জরায়ুর বায়োপসি নমুনা ব্যবহার করেন। সেখান থেকে আলাদা করা হয় দুই ধরনের কোষ। এক ধরনের কোষ জরায়ুর আস্তরণ কে কাঠামোগত শক্তি দেয়, অন্যটি আস্তরণের উপরের স্তর গঠন করে। প্রথম ধরনের কোষ রাখা হয় বিশেষভাবে তৈরি জৈব উপাদানের ভেতরে, আর তার ওপর বসানো হয় দ্বিতীয় ধরনের কোষ। এভাবেই তৈরি হয় জরায়ুর মতো একটি কার্যকর আস্তরণ।
ভ্রূণ প্রতিস্থাপন ও হরমোনের সাড়া
এই কৃত্রিম আস্তরণে আইভিএফ চিকিৎসা শেষে দান করা প্রাথমিক পর্যায়ের মানব ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রূণগুলো ঠিক যেভাবে মানবদেহে ঘটে সেভাবেই আস্তরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করে। একই সঙ্গে তারা এমন এক হরমোন নিঃসরণ করে, যা গর্ভধারণ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেখায়। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার রাসায়নিক যোগাযোগ সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান।

গর্ভধারণের শুরুর রহস্য উন্মোচন
নিষেকের প্রায় এক সপ্তাহ পর ভ্রূণ জরায়ুর দেয়ালে স্থাপন হয়, যা গর্ভধারণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এতদিন এই পর্যায় সম্পর্কে জ্ঞান ছিল খুবই সীমিত। নতুন এই পদ্ধতিতে ভ্রূণকে নিষেকের পর চৌদ্দ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এই সময়ে প্লাসেন্টা তৈরির সঙ্গে যুক্ত বিশেষ কোষগুলোর বিকাশও দেখা গেছে।
আইভিএফ সাফল্যে নতুন আশা
গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রূণ ও জরায়ুর মধ্যকার সংকেতের সামান্য গোলমালও প্লাসেন্টা গঠনে গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট এক ধরনের সংকেত বন্ধ করে দিয়ে সেই ত্রুটির প্রভাবও দেখিয়েছেন। গবেষকদের মতে, প্রায় অর্ধেক ভ্রূণই জরায়ুতে স্থাপন হতে ব্যর্থ হয়, কিন্তু এর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আইভিএফ চিকিৎসার সাফল্যের হার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক গবেষণার মিল
একই সময়ে চীনের গবেষকরাও অনুরূপ কৃত্রিম জরায়ু আস্তরণ তৈরি করে এমন কিছু ওষুধ চিহ্নিত করেছেন, যা বারবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ রোগীদের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চার দশকের বেশি সময় ধরে সহায়ক প্রজনন চিকিৎসায় প্রতিস্থাপনের হার খুব বেশি বাড়েনি। নতুন এই গবেষণা সেই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর পথ দেখাতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















