ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত নতুন শান্তি পরিকল্পনায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছাড় আদায় করেছে কিয়েভ। তবে রাশিয়া এই প্রস্তাবে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, পরিকল্পনাটি যুদ্ধ থামানোর পথ খুলে দিতে পারে, যদিও এতে এখনো কঠিন বাস্তবতা ও জটিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জড়িয়ে আছে।
শান্তি পরিকল্পনায় কী পেল ইউক্রেন
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনার মাধ্যমে তৈরি বিশ দফার এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের জন্য কিছু বড় স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। ডনেস্ক অঞ্চল থেকে অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহারের বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার দখলে যাওয়া ভূখণ্ডকে আইনগতভাবে রুশ এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার শর্তও সরানো হয়েছে। জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, প্রস্তাবের সব দিক তাঁর পছন্দ নয়, তবে কিয়েভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লাল রেখা অক্ষুণ্ন রাখা গেছে।
সেনা প্রত্যাহার ও নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলের ইঙ্গিত
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ডনেস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলে চুক্তি স্বাক্ষরের সময়কার সেনা অবস্থানকে কার্যত যোগাযোগ রেখা হিসেবে ধরা হবে। এতে ভবিষ্যতে নিরস্ত্রীকৃত এলাকা গঠনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। জেলেনস্কির ভাষায়, একটি কর্মদল গঠন করে কোন এলাকায় কীভাবে সেনা পুনর্বিন্যাস হবে এবং সম্ভাব্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাঠামো কেমন হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। এই বিষয়গুলো আগে ইউক্রেন যে অবস্থানে যেতে অনিচ্ছুক ছিল, এখন তা আলোচনার টেবিলে এসেছে।

ন্যাটো প্রশ্নে অবস্থান অপরিবর্তিত
এই পরিকল্পনায় ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগের শর্তও বাদ দেওয়া হয়েছে। জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ইউক্রেনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং সে লক্ষ্য থেকে তারা সরে আসেনি। যদিও বাস্তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
রাশিয়ার কঠোর অবস্থান ও যুদ্ধের বাস্তবতা
মস্কো এখনো পূর্ব ইউক্রেন থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের দাবি ছাড়েনি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে। এদিকে রুশ বাহিনী সামনের সারিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের শহর ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যুদ্ধের চার বছরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং লাখো মানুষ ঘরছাড়া।
গণভোট ও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত
যে কোনো পরিকল্পনায় ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহারের বিষয় থাকলে তা গণভোটে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। নিরস্ত্রীকৃত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের মতো প্রস্তাব বাস্তবায়নেও জনগণের সম্মতি প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পরই কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
#ইউক্রেন_যুদ্ধ #শান্তি_প্রস্তাব #জেলেনস্কি #রাশিয়া_ইউক্রেন #যুদ্ধ_সংকট #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















