মহাকাশ যদি সবার নাগালে আসে, ঠিক যেমন আজ বিমানযাত্রা—এই কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চান বিজ্ঞানী ও মহাকাশচারী মালিক ম্যাক মালকাউই। তাঁর লক্ষ্য একটাই, মহাকাশ ভ্রমণকে বিমান চলাচলের মতোই সাধারণ ও সহজ করে তোলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভবিষ্যতের মহাকাশ ভ্রমণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন।
মালকাউই বলেন, একসময় প্রথম বিমান ওড়ার পর সেটিও ছিল ব্যয়বহুল ও সীমিত মানুষের জন্য। কিন্তু চাহিদা বাড়তেই উড়োজাহাজ ভ্রমণ দ্রুত সাধারণ মানুষের নাগালে আসে। ঠিক একই পথেই এগোতে পারে মহাকাশযাত্রা। বাণিজ্যিক মহাকাশযানের প্রথম সফল উৎক্ষেপণের পর থেকেই এই সম্ভাবনা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রার নতুন যুগ
দুই হাজার তেইশ সালের জুনে প্রথম বাণিজ্যিক উপ-কক্ষপথ মহাকাশযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন হয়, যেখানে পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়। মালকাউই মনে করেন, এটাই ছিল নতুন যুগের সূচনা। তবে শুধু যান তৈরি করলেই হবে না, এর জন্য প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং অভিজ্ঞ মানবসম্পদ।
বিশ্বব্যাপী মহাকাশ অর্থনীতিও দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহাকাশ খাতের আয় কয়েক বছরে কয়েক গুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর বড় অংশই আসছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে। এই প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতে মহাকাশ ভ্রমণকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতায় নতুন দিগন্ত
আবুধাবিভিত্তিক সংস্থা ব্লিঙ্ক মানব মহাকাশযাত্রা, মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা কার্যক্রমে কাজ করছে। সম্প্রতি রাস আল খাইমায় পরিচালিত এক বিশেষ পরীক্ষামূলক উড্ডয়নে অংশ নেওয়া হয়, যেখানে মহাকাশ উৎক্ষেপণের সময় শরীর যে তীব্র চাপের মুখে পড়ে, তা অনুকরণ করা হয়। এই উড্ডয়নে অংশগ্রহণকারীরা স্বল্প সময়ের জন্য স্বাভাবিক ওজনের কয়েক গুণ বেশি চাপ অনুভব করেন। মালকাউই বলেন, এই ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়া মহাকাশে কাজ করা প্রায় অসম্ভব।
মধ্যপ্রাচ্যে মহাকাশ কর্মসূচির সম্ভাবনা
মালকাউই মনে করেন, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অংশ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে এখনো মহাকাশ কর্মসূচি তুলনামূলকভাবে সীমিত। এখানেই ইউএইর বড় সুযোগ। তাঁর ভাষায়, এই দেশের নেতৃত্ব, দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো একে মহাকাশ প্রশিক্ষণ ও গবেষণার আদর্শ কেন্দ্র বানাতে পারে।
ইউএইর প্রাকৃতিক পরিবেশও এই উদ্যোগে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের কিছু অঞ্চলের মাটি গ্রহীয় ভূতত্ত্ব গবেষণার জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করেন মালকাউই। এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার তুলনায়ও কিছু ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হতে পারে। এই কারণেই সাবেক নাসা কর্মকর্তারা ইউএইতে এসে প্রশিক্ষণ সম্ভাবনা যাচাই করেছেন।
মানবকল্যাণ থেকে মহাকাশ স্বপ্ন
ব্লিঙ্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল মানবকল্যাণমূলক উদ্যোগ হিসেবে। দুই হাজার পনেরো সালে প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটি শরণার্থী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সৃজনশীল শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিতে কাজ করে। সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভর করেই আজ তারা মহাকাশ ভ্রমণকে সবার জন্য উন্মুক্ত করার স্বপ্ন দেখছে।
মালকাউই বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে মহাকাশে যাওয়া আর অচেনা কিছু থাকবে না। ঠিক যেমন আজ আকাশপথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা।
#মহাকাশভ্রমণ #মহাকাশচারী #বিজ্ঞানসংবাদ #ইউএই #ভবিষ্যৎপ্রযুক্তি #মহাকাশঅর্থনীতি #মানবমহাকাশযাত্রা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















