রাশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দুই হাজার ছাব্বিশ সালে শেষ হতে পারে। রাষ্ট্রীয় জনমত জরিপ সংস্থা ভিটসিওমের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে এমন প্রত্যাশা। কূটনৈতিক তৎপরতা যখন জোরালো হচ্ছে, ঠিক তখনই এই জনমত ফলাফলকে সম্ভাব্য শান্তি সমঝোতার বিষয়ে ক্রেমলিন জনমত যাচাইয়ের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
জনমনে আশার ছবি
বছর শেষের উপস্থাপনায় ভিটসিওমের উপপ্রধান মিখাইল মামোনভ জানান, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় সত্তর শতাংশ মানুষ মনে করছেন দুই হাজার ছাব্বিশ সাল রাশিয়ার জন্য চলতি বছরের তুলনায় বেশি সফল হবে। তাদের মধ্যে পঞ্চান্ন শতাংশের এই আশাবাদের মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের অবসান।
মামোনভ বলেন, মানুষের আশাবাদের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে বিশেষ সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার সম্ভাবনা এবং রাষ্ট্রপতির নির্ধারিত জাতীয় স্বার্থের লক্ষ্য অর্জন। তার বক্তব্যে স্পষ্ট, যুদ্ধ শেষ হওয়ার ধারণাই জনমনে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে।
আগের জরিপ ও বর্তমান বাস্তবতা
আগের বছরগুলোর জরিপে ভিটসিওম মূলত প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চারপাশে সমাজের সংহতি এবং ইউক্রেন বিষয়ে সামরিক লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়েছিল। তবে তখন যুদ্ধ কবে শেষ হতে পারে, সে বিষয়ে জনমতের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি।
দুই হাজার বাইশ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন প্রায় পঞ্চম বছরে পা রাখতে চলেছে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও ভিন্নমত দমনের কারণে সাধারণ মানুষের প্রকৃত যুদ্ধ ক্লান্তি পরিমাপ করা কঠিন বলেও স্বীকার করছেন বিশ্লেষকেরা।

শান্তির সম্ভাবনার কারণ
ভিটসিওমের উপপ্রধানের মতে, ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর চলমান অগ্রগতি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে অনীহা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের মতো আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পূর্ণমাত্রায় দেওয়া কঠিন হওয়াই সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পেছনের বড় কারণ। যুদ্ধ শেষে সাবেক সেনাদের সমাজে পুনর্বাসন এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনীয় অঞ্চল ও সীমান্ত এলাকার পুনর্গঠনকে ভবিষ্যতের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
শান্তি আলোচনায় জনসমর্থন
স্বাধীন জরিপ সংস্থা লেভাদা জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ শান্তি আলোচনার পক্ষে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ হার। যদিও সংঘাতের সময় সংস্থাটিকে বিদেশি এজেন্ট আখ্যা দেওয়া হয়েছে, তবু তাদের তথ্য জনমনের আরেকটি দিক তুলে ধরছে।
ক্রেমলিনের কূটনৈতিক বার্তা
এদিকে ক্রেমলিন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অবহিত করা হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূতদের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের বিষয়টি পর্যালোচনা করে মস্কো এখন নিজস্ব অবস্থান চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ হামলার মধ্যেই লভিভের সামরিক কবরস্থানে শহীদ ইউক্রেনীয় সেনাদের কবরে বড়দিন ও নতুন বছরের সাজ দেখা গেছে। যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়ার মধ্যেও এই দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, দুই পক্ষেই মানুষ শান্তির অপেক্ষায়।
দীর্ঘ যুদ্ধের ছায়ায় রাশিয়ার জনমনে কি তবে শান্তির আশা জাগছে? রাষ্ট্রীয় জরিপে উঠে এলো দুই হাজার ছাব্বিশে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা। বিস্তারিত জানতে পড়ুন সারাক্ষণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















