উত্তর ইউরোপের ভাইকিংদের নাম শুনলেই চোখে ভাসে সমুদ্রপথে হানা, দীর্ঘ নৌকা আর আতঙ্কের গল্প। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের দিকে যাত্রা করা ভাইকিংদের ইতিহাস ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা সমুদ্রের বদলে বেছে নিয়েছিল নদীপথ, আর সেই পথ ধরেই গড়ে তুলেছিল বাণিজ্য, রাষ্ট্র এবং এক নতুন পরিচয়।
নদী ছিল তাদের প্রধান শক্তি
পূর্ব ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নদী গুলো ছিল যোগাযোগের মূল মাধ্যম। বাল্টিক অঞ্চল থেকে ভলকভ, নেভা কিংবা দিনিপ্র নদী ধরে ভাইকিংরা পৌঁছে গিয়েছিল গভীর স্থলভাগে। এসব নদী তখনকার সময়ে মহাসড়কের মতো কাজ করত, যা তাদের নিয়ে যেত বর্তমান রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের নানা অঞ্চলে।
বাণিজ্য আর অভিযোজনের কৌশল
পশ্চিম ইউরোপে যেখানে তারা দ্রুত আক্রমণ আর লুটতরাজে পরিচিত, সেখানে পূর্বে ভাইকিংরা হয়ে ওঠে ব্যবসায়ী ও সংগঠক। নদীর স্রোত, জলপ্রপাত আর শীতকালীন বরফের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তারা ব্যবহার করত ভিন্ন ধরনের নৌযান। কখনো বড় কাঠের নৌকা, কখনো শীতকালে বরফে চলার জন্য স্লেজ। এই অভিযোজনই তাদের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।

কিয়েভান রাসের উত্থান
নদী পথ ধরে দক্ষিণে এগোতে এগোতে ভাইকিংরা পৌঁছায় কিয়েভ অঞ্চলে। এখান থেকেই জন্ম নেয় কিয়েভান রাস নামের শক্তিশালী রাষ্ট্র। শুরুতে শাসকগোষ্ঠী ছিল নর্স বংশোদ্ভূত, তবে সাধারণ জনগণ ছিল মূলত স্লাভ। ধীরে ধীরে ভাষা, ধর্ম আর সংস্কৃতিতে মিশে গিয়ে ভাইকিং শাসকেরাও স্লাভ সমাজের অংশ হয়ে ওঠে।
সংস্কৃতির রূপান্তর
পূর্ব ইউরোপে ভাইকিংরা নিজেদের পুরনো ভাষা ও ধর্ম ধরে রাখতে পারেনি। নর্স ভাষার জায়গা নেয় পুরনো পূর্ব স্লাভ ভাষা, আর পৌত্তলিক বিশ্বাসের পরিবর্তে গ্রহণ করা হয় বাইজেন্টাইন খ্রিস্টধর্ম। এই রূপান্তরই তাদের আলাদা করে দেয় আইসল্যান্ড বা নরওয়ের ভাইকিংদের থেকে।
ভিন্ন পথে গড়া এক পরিচয়
শেষ পর্যন্ত পূর্ব ইউরোপের ভাইকিংরা পরিচিত হয় রাস নামে। তারা আর শুধু যোদ্ধা নয়, হয়ে ওঠে রাষ্ট্র নির্মাতা। ইতিহাসে এই অধ্যায় প্রমাণ করে, অভিযোজন আর স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়াই ছিল তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
#ভাইকিং #পূর্বইউরোপ #কিয়েভানরাস #ইতিহাস #নদীপথ #সভ্যতারউত্থান
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















