০১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু চাঁদপুর–শরীয়তপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু, কুয়াশার কারণে ছিল দীর্ঘ বিরতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ ইনকিলাব মঞ্চের রোববার সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসায় কঠিন সময় পার করছেন ঘরে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতার বাবা ও চাচাকে কুপিয়ে হত্যা বিজিবির হস্তক্ষেপে জয়পুরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করল বিএসএফ জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে নাহিদ ইসলামকে অনুরোধ এনসিপির ৩০ নেতার রিহ্যাব মেলা ২০২৫-এর শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়, স্বপ্নের বাড়ির খোঁজে ক্রেতাদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত

লুথারের আহ্বানে বিদ্রোহ, লুথারের কলমেই নিন্দা: জার্মান কৃষকযুদ্ধের রক্তাক্ত মোড়

ষোড়শ শতকের বসন্তে ইউরোপ জুড়ে যখন সংস্কারের বাতাস বইছে, তখন জার্মান ভূখণ্ডে আগুন জ্বলছে। সাধারণ কৃষক, দিনমজুর ও গ্রামবাসীরা ঈশ্বরের নামে অস্ত্র হাতে উঠে দাঁড়ালেন অভিজাত প্রভু আর গির্জার ক্ষমতার বিরুদ্ধে। ইতিহাসে এই বিস্ফোরক অধ্যায় পরিচিত জার্মান কৃষকযুদ্ধ নামে। কিন্তু যে ভাবনার আগুনে এই বিদ্রোহ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল, সেই আগুনকেই পরে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মার্টিন লুথার নিজেই।

সংস্কারের স্বপ্ন থেকে সংঘর্ষের বাস্তবতা

লুথার চেয়েছিলেন এক শান্ত ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লব। গির্জার দুর্নীতি, পাপমোচনের নামে অর্থ আদায় আর পোপের একচ্ছত্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল তীক্ষ্ণ। বিশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তি, ধর্মগ্রন্থের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব আর সব বিশ্বাসীর সমান মর্যাদার ধারণা সাধারণ মানুষের কানে বিদ্যুৎঝড়ের মতো নেমে আসে। এই ভাবনা বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভের সঙ্গে মিশে গিয়ে কৃষকদের মনে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা জাগায়।

রুটি নয়, রক্তের অধিকার

সংঘাতের পেছনে দুটি ধর্মীয় ধারণা বিশেষভাবে কাজ করে। একদিকে পবিত্র ভোজে সাধারণ মানুষের জন্য রুটির সঙ্গে মদের অধিকার। খ্রিস্টের রক্তের প্রতীকী অর্থে যে মুক্তির কথা বলা হচ্ছিল, তা কৃষকদের কাছে বাস্তব স্বাধীনতার দাবিতে রূপ নেয়। অন্যদিকে ঈশ্বরসৃষ্ট প্রকৃতির ওপর সবার সমান অধিকার—নদীতে মাছ ধরা, বনে কাঠ কাটা, শিকারে অংশ নেওয়া—এসব দীর্ঘদিন ধরে প্রভুদের একচেটিয়া ছিল। কৃষকরা বললেন, এই পৃথিবী সবার।

Opinion | The Revolution of 1524

বারো অনুচ্ছেদের ঘোষণা

এই দাবিগুলো গুছিয়ে লেখা হয় বারো অনুচ্ছেদে। ন্যায্য খাজনা, যাজক বেছে নেওয়ার অধিকার, শিকার ও মৎস্য আহরণে স্বাধীনতা আর দাসত্বের অবসান—সবই সেখানে ছিল। দক্ষিণ ও মধ্য জার্মানির বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য কৃষক বাহিনী শহর ও দুর্গ দখলও করে।

লুথারের কঠোর প্রত্যাখ্যান

কিন্তু সহিংসতা বাড়তেই লুথার শিউরে ওঠেন। তিনি আশঙ্কা করেন, এই বিশৃঙ্খলা সংস্কার আন্দোলনকেই ধ্বংস করবে। তাই তিনি প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং শাসকদের কঠোর হাতে দমন করতে আহ্বান জানান। তাঁর বিশ্বাস ছিল, শাসনব্যবস্থা ঈশ্বরপ্রদত্ত, বিদ্রোহ মারাত্মক পাপ। এই অবস্থান কৃষকদের জন্য ছিল চরম বিশ্বাসঘাতকতা।

রক্তাক্ত পরিণতি ও দীর্ঘ ছায়া

শেষ পর্যন্ত রাজকীয় বাহিনী কামান আর অশ্বারোহী নিয়ে বিদ্রোহ চূর্ণ করে। কয়েক মাসে প্রায় এক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। বিদ্রোহ দমে যায়, প্রভুরা আরও শক্তিশালী হয়। তবু সংস্কার থেমে যায়নি। সাধারণ মানুষের জীবনে বিশ্বাস, ভাষা আর শিক্ষার নতুন দরজা খুলে যায়। জার্মান কৃষকযুদ্ধ তাই শুধু পরাজয়ের গল্প নয়, ক্ষমতা আর বিশ্বাসের টানাপোড়েনের এক গভীর পাঠ।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর

লুথারের আহ্বানে বিদ্রোহ, লুথারের কলমেই নিন্দা: জার্মান কৃষকযুদ্ধের রক্তাক্ত মোড়

১১:৪৭:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ষোড়শ শতকের বসন্তে ইউরোপ জুড়ে যখন সংস্কারের বাতাস বইছে, তখন জার্মান ভূখণ্ডে আগুন জ্বলছে। সাধারণ কৃষক, দিনমজুর ও গ্রামবাসীরা ঈশ্বরের নামে অস্ত্র হাতে উঠে দাঁড়ালেন অভিজাত প্রভু আর গির্জার ক্ষমতার বিরুদ্ধে। ইতিহাসে এই বিস্ফোরক অধ্যায় পরিচিত জার্মান কৃষকযুদ্ধ নামে। কিন্তু যে ভাবনার আগুনে এই বিদ্রোহ দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিল, সেই আগুনকেই পরে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মার্টিন লুথার নিজেই।

সংস্কারের স্বপ্ন থেকে সংঘর্ষের বাস্তবতা

লুথার চেয়েছিলেন এক শান্ত ধর্মতাত্ত্বিক বিপ্লব। গির্জার দুর্নীতি, পাপমোচনের নামে অর্থ আদায় আর পোপের একচ্ছত্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে তাঁর কলম ছিল তীক্ষ্ণ। বিশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তি, ধর্মগ্রন্থের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব আর সব বিশ্বাসীর সমান মর্যাদার ধারণা সাধারণ মানুষের কানে বিদ্যুৎঝড়ের মতো নেমে আসে। এই ভাবনা বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভের সঙ্গে মিশে গিয়ে কৃষকদের মনে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা জাগায়।

রুটি নয়, রক্তের অধিকার

সংঘাতের পেছনে দুটি ধর্মীয় ধারণা বিশেষভাবে কাজ করে। একদিকে পবিত্র ভোজে সাধারণ মানুষের জন্য রুটির সঙ্গে মদের অধিকার। খ্রিস্টের রক্তের প্রতীকী অর্থে যে মুক্তির কথা বলা হচ্ছিল, তা কৃষকদের কাছে বাস্তব স্বাধীনতার দাবিতে রূপ নেয়। অন্যদিকে ঈশ্বরসৃষ্ট প্রকৃতির ওপর সবার সমান অধিকার—নদীতে মাছ ধরা, বনে কাঠ কাটা, শিকারে অংশ নেওয়া—এসব দীর্ঘদিন ধরে প্রভুদের একচেটিয়া ছিল। কৃষকরা বললেন, এই পৃথিবী সবার।

Opinion | The Revolution of 1524

বারো অনুচ্ছেদের ঘোষণা

এই দাবিগুলো গুছিয়ে লেখা হয় বারো অনুচ্ছেদে। ন্যায্য খাজনা, যাজক বেছে নেওয়ার অধিকার, শিকার ও মৎস্য আহরণে স্বাধীনতা আর দাসত্বের অবসান—সবই সেখানে ছিল। দক্ষিণ ও মধ্য জার্মানির বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময়ের জন্য কৃষক বাহিনী শহর ও দুর্গ দখলও করে।

লুথারের কঠোর প্রত্যাখ্যান

কিন্তু সহিংসতা বাড়তেই লুথার শিউরে ওঠেন। তিনি আশঙ্কা করেন, এই বিশৃঙ্খলা সংস্কার আন্দোলনকেই ধ্বংস করবে। তাই তিনি প্রকাশ্যে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কলম ধরেন এবং শাসকদের কঠোর হাতে দমন করতে আহ্বান জানান। তাঁর বিশ্বাস ছিল, শাসনব্যবস্থা ঈশ্বরপ্রদত্ত, বিদ্রোহ মারাত্মক পাপ। এই অবস্থান কৃষকদের জন্য ছিল চরম বিশ্বাসঘাতকতা।

রক্তাক্ত পরিণতি ও দীর্ঘ ছায়া

শেষ পর্যন্ত রাজকীয় বাহিনী কামান আর অশ্বারোহী নিয়ে বিদ্রোহ চূর্ণ করে। কয়েক মাসে প্রায় এক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। বিদ্রোহ দমে যায়, প্রভুরা আরও শক্তিশালী হয়। তবু সংস্কার থেমে যায়নি। সাধারণ মানুষের জীবনে বিশ্বাস, ভাষা আর শিক্ষার নতুন দরজা খুলে যায়। জার্মান কৃষকযুদ্ধ তাই শুধু পরাজয়ের গল্প নয়, ক্ষমতা আর বিশ্বাসের টানাপোড়েনের এক গভীর পাঠ।