গ্রীষ্মের ছুটির শেষ প্রান্তে সেই রবিবারটি শুরু হয়েছিল নিরিবিলি ভাবেই। কিন্তু একত্রিশ আগস্ট ভোরে ব্রিটেন জেগে ওঠে শিউরে দেওয়া খবরে। প্যারিসের একটি সড়ক সুড়ঙ্গে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মারা যান ওয়েলসের রাজকুমারী ডায়ানা। তাঁর সঙ্গী দোদি ফায়েদ ও গাড়ির চালকও প্রাণ হারান। মুহূর্তে আনন্দহীন শোক নেমে আসে গোটা দেশে।
ট্যাবলয়েডের কেন্দ্র থেকে জাতীয় শোক
ডায়ানা ছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই শিরোনামের মানুষ। রাজবিবাহের রূপকথার ভাঙন, সাক্ষাৎকারে বৈবাহিক টানাপোড়েনের স্বীকারোক্তি, ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি বাঁক সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা করে নিয়েছিল। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কেনসিংটন প্রাসাদের সামনে জমতে থাকে ফুল আর বার্তা। রাষ্ট্রনায়ক থেকে মানবসেবীরা, সকলেই শোক প্রকাশ করেন।
বাকিংহাম প্রাসাদের নীরবতা ও ক্ষোভ
কিন্তু শোকের এই বিস্ফোরণের মাঝেই তৈরি হয় অস্বস্তি। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতির বাইরে আর কিছু শোনা যায় না। রানি তখন লন্ডন থেকে বহু দূরে বালমোরাল প্রাসাদে অবস্থান করছিলেন। নিয়মের খাতায় ডায়ানা তখন আর রাজপরিবারের সদস্য নন, এই যুক্তিতে প্রথা মানাই হয়েছিল অগ্রাধিকার। কিন্তু জনমনের ঢেউ অন্য কথা বলছিল। সংবাদপত্রে প্রশ্ন ওঠে, আমাদের রানি কোথায়। যতক্ষণ নীরবতা চলতে থাকে, ততই সন্দেহ আর ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

ভুল পাঠের মূল্য
নীরবতার ফাঁকে নানা জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। কারও চোখে রাজপরিবারের ভাঙন, কারও চোখে অবহেলা। এই সময়টিই হয়ে ওঠে রানির দীর্ঘ শাসনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়, যখন রাজতন্ত্র যেন জনতার আবেগের সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছিল।
হস্তক্ষেপ ও মোড় ঘোরা
শেষ পর্যন্ত নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ডায়ানার মৃত্যুর চার দিন পর রানি বালমোরালের ফটকে এসে ফুলের স্তবক দেখেন। পাঁচ দিন পর জাতির উদ্দেশে সরাসরি ভাষণ দেন তিনি, রানি হিসেবে যেমন, তেমনি দাদি হিসেবেও। সেই কথাতেই বরফ গলে। মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়, রাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরে আসে।
এই পর্ব ব্রিটেনকে শিখিয়েছিল একটি বড় শিক্ষা। নিয়মের শাসন যতই শক্ত হোক, জনমনের ভাষা না বুঝলে দূরত্ব তৈরি হয়। আর সেই দূরত্ব ভাঙতে কখনও কখনও প্রয়োজন সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো মানবিক কণ্ঠ।
#ডায়ানা #ব্রিটিশ_রাজপরিবার #রানি_এলিজাবেথ #ব্রিটেনের_ইতিহাস #রাজতন্ত্র #জাতীয়_শোক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















