০১:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু চাঁদপুর–শরীয়তপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু, কুয়াশার কারণে ছিল দীর্ঘ বিরতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ ইনকিলাব মঞ্চের রোববার সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসায় কঠিন সময় পার করছেন ঘরে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতার বাবা ও চাচাকে কুপিয়ে হত্যা বিজিবির হস্তক্ষেপে জয়পুরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করল বিএসএফ জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে নাহিদ ইসলামকে অনুরোধ এনসিপির ৩০ নেতার রিহ্যাব মেলা ২০২৫-এর শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়, স্বপ্নের বাড়ির খোঁজে ক্রেতাদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত

রাজপ্রাসাদের নরক যন্ত্রণা: প্রিন্স রিজেন্টের ব্যর্থ বিবাহ ও ক্যারোলাইনের অপমানিত জীবন

ইতিহাসে রাজকীয় বিয়ে মানেই সুখ আর আড়ম্বর—এই ধারণাকে সবচেয়ে নির্মম ভাবে ভেঙে দিয়েছে প্রিন্স রিজেন্ট ও ব্রান্সউইক ক্যারোলাইনের দাম্পত্য। ব্রিটেনের রিজেন্সি যুগের কেলেঙ্কারিময় পত্রিকা আর ব্যঙ্গচিত্রে এই সম্পর্ক প্রায় পঁচিশ বছর ধরে দেশজুড়ে কৌতূহল, ক্ষোভ ও বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে।

দেনায় ডুবে রাজবংশের হিসাব

প্রিন্স রিজেন্ট ছিলেন অপচয়ী ও ঋণে জর্জরিত। গোপনে ক্যাথলিক নারী মারিয়া ফিটজহারবার্টকে বিয়ে করলেও রাজবংশের স্বার্থে তাঁকে বৈধ প্রোটেস্ট্যান্ট স্ত্রী গ্রহণ করতে হয়। দেখা না করেই পছন্দ করা হয় তারই চাচাতো বোন, ব্রান্সউইক ক্যারোলাইনকে। উদ্দেশ্য একটাই—কনের অর্থে দেনা শোধ। কিন্তু প্রথম দেখাতেই দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় ঘৃণা। কনে আসার মুহূর্তে বর অসুস্থতার অজুহাতে মদের গ্লাস চান, আর কনে হতাশ হন স্বামীর চেহারা দেখে। উভয়ের প্রতি তৃতীয় পক্ষের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও বিষিয়ে তোলে।

বিয়ের পর অপমান আর নির্বাসন

বিয়ের আগে টানা মদ্যপানের পরও দাম্পত্য কর্তব্য পালন করেছিলেন প্রিন্স রিজেন্ট। নয় মাস পর জন্ম নেয় তাঁদের কন্যা শার্লট। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। স্ত্রীর প্রতি অবহেলা ও মানসিক নির্যাতনে ক্যারোলাইনের জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে। অচিরেই তিনি ইউরোপে নির্বাসনে চলে যান। কোমোর কাছে হ্রদের ধারে এক ভিলায় বসবাস শুরু করেন। সেখানকার জীবন ছিল নিয়ম ভাঙা ও বিতর্কে ভরা। নানা গুজব ছড়ায় তাঁর আচরণ ও সম্পর্ক নিয়ে, যা রাজদরবারে পৌঁছাতে গুপ্তচর পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়।

Inside George's Breeches: The Health of George IV - Brighton & Hove Museums

বিচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধকালীন কেলেঙ্কারি

প্রিন্স রিজেন্ট প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। ক্যারোলাইনের কথিত প্রেমিকদের নাম ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়, যার মধ্যে বিদেশি সামরিক শাসকের নামও উঠে আসে। সে সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধ চলায় অভিযোগগুলো আরও বিস্ফোরক হয়ে ওঠে।

রানির অধিকার আর জনতার সমর্থন

রাজা তৃতীয় জর্জের মৃত্যুর পর ক্যারোলাইন ব্রিটেনে ফিরে নিজের রানির অধিকার দাবি করেন। কিন্তু নতুন রাজা তাঁকে ব্যভিচারের অভিযোগে পার্লামেন্টে বিচারের মুখে দাঁড় করান। অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলে ওয়েস্টমিনস্টারের দরজাও তাঁর জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার হলেও অপমানের ক্ষত সারেনি। আশ্চর্যভাবে লন্ডনের জনতা তাঁকে রাজ ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে। জনসমর্থন পেলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ক্যারোলাইন মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।

রাজতন্ত্রের প্রতি জনমনের টানাপোড়েন

এই দাম্পত্য কাহিনি শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতার গল্প নয়। এটি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের নৈতিকতা, ভণ্ডামি ও ক্ষমতার ব্যবহারের এক নগ্ন দলিল। একই সময়ে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের গোপন বিয়ে ও বিতর্কিত আচরণ জনতার সহনশীলতাকে চাপে ফেলে। প্রিন্স রিজেন্টের দাম্পত্য দুর্ভোগ তাই ইতিহাসে রয়ে গেছে রাজকীয় জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটি হিসেবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর

রাজপ্রাসাদের নরক যন্ত্রণা: প্রিন্স রিজেন্টের ব্যর্থ বিবাহ ও ক্যারোলাইনের অপমানিত জীবন

১১:৫৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ইতিহাসে রাজকীয় বিয়ে মানেই সুখ আর আড়ম্বর—এই ধারণাকে সবচেয়ে নির্মম ভাবে ভেঙে দিয়েছে প্রিন্স রিজেন্ট ও ব্রান্সউইক ক্যারোলাইনের দাম্পত্য। ব্রিটেনের রিজেন্সি যুগের কেলেঙ্কারিময় পত্রিকা আর ব্যঙ্গচিত্রে এই সম্পর্ক প্রায় পঁচিশ বছর ধরে দেশজুড়ে কৌতূহল, ক্ষোভ ও বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে।

দেনায় ডুবে রাজবংশের হিসাব

প্রিন্স রিজেন্ট ছিলেন অপচয়ী ও ঋণে জর্জরিত। গোপনে ক্যাথলিক নারী মারিয়া ফিটজহারবার্টকে বিয়ে করলেও রাজবংশের স্বার্থে তাঁকে বৈধ প্রোটেস্ট্যান্ট স্ত্রী গ্রহণ করতে হয়। দেখা না করেই পছন্দ করা হয় তারই চাচাতো বোন, ব্রান্সউইক ক্যারোলাইনকে। উদ্দেশ্য একটাই—কনের অর্থে দেনা শোধ। কিন্তু প্রথম দেখাতেই দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় ঘৃণা। কনে আসার মুহূর্তে বর অসুস্থতার অজুহাতে মদের গ্লাস চান, আর কনে হতাশ হন স্বামীর চেহারা দেখে। উভয়ের প্রতি তৃতীয় পক্ষের মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও বিষিয়ে তোলে।

বিয়ের পর অপমান আর নির্বাসন

বিয়ের আগে টানা মদ্যপানের পরও দাম্পত্য কর্তব্য পালন করেছিলেন প্রিন্স রিজেন্ট। নয় মাস পর জন্ম নেয় তাঁদের কন্যা শার্লট। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। স্ত্রীর প্রতি অবহেলা ও মানসিক নির্যাতনে ক্যারোলাইনের জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে। অচিরেই তিনি ইউরোপে নির্বাসনে চলে যান। কোমোর কাছে হ্রদের ধারে এক ভিলায় বসবাস শুরু করেন। সেখানকার জীবন ছিল নিয়ম ভাঙা ও বিতর্কে ভরা। নানা গুজব ছড়ায় তাঁর আচরণ ও সম্পর্ক নিয়ে, যা রাজদরবারে পৌঁছাতে গুপ্তচর পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়।

Inside George's Breeches: The Health of George IV - Brighton & Hove Museums

বিচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধকালীন কেলেঙ্কারি

প্রিন্স রিজেন্ট প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন। ক্যারোলাইনের কথিত প্রেমিকদের নাম ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়, যার মধ্যে বিদেশি সামরিক শাসকের নামও উঠে আসে। সে সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যুদ্ধ চলায় অভিযোগগুলো আরও বিস্ফোরক হয়ে ওঠে।

রানির অধিকার আর জনতার সমর্থন

রাজা তৃতীয় জর্জের মৃত্যুর পর ক্যারোলাইন ব্রিটেনে ফিরে নিজের রানির অধিকার দাবি করেন। কিন্তু নতুন রাজা তাঁকে ব্যভিচারের অভিযোগে পার্লামেন্টে বিচারের মুখে দাঁড় করান। অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলে ওয়েস্টমিনস্টারের দরজাও তাঁর জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার হলেও অপমানের ক্ষত সারেনি। আশ্চর্যভাবে লন্ডনের জনতা তাঁকে রাজ ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে। জনসমর্থন পেলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ক্যারোলাইন মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন।

রাজতন্ত্রের প্রতি জনমনের টানাপোড়েন

এই দাম্পত্য কাহিনি শুধু ব্যক্তিগত ব্যর্থতার গল্প নয়। এটি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের নৈতিকতা, ভণ্ডামি ও ক্ষমতার ব্যবহারের এক নগ্ন দলিল। একই সময়ে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের গোপন বিয়ে ও বিতর্কিত আচরণ জনতার সহনশীলতাকে চাপে ফেলে। প্রিন্স রিজেন্টের দাম্পত্য দুর্ভোগ তাই ইতিহাসে রয়ে গেছে রাজকীয় জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়গুলোর একটি হিসেবে।