০১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর লাইফ এন্ডাওমেন্ট উদ্যোগে গুরুতর রোগীদের নতুন আশার আলো, একশ চল্লিশ রোগীর চিকিৎসায় টেকসই অর্থায়ন শুরু চাঁদপুর–শরীয়তপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু, কুয়াশার কারণে ছিল দীর্ঘ বিরতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ ইনকিলাব মঞ্চের রোববার সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন, চিকিৎসায় কঠিন সময় পার করছেন ঘরে ঢুকে ছাত্রলীগ নেতার বাবা ও চাচাকে কুপিয়ে হত্যা বিজিবির হস্তক্ষেপে জয়পুরহাট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করল বিএসএফ জামায়াতের সঙ্গে জোট না করতে নাহিদ ইসলামকে অনুরোধ এনসিপির ৩০ নেতার রিহ্যাব মেলা ২০২৫-এর শেষ দিনে উপচে পড়া ভিড়, স্বপ্নের বাড়ির খোঁজে ক্রেতাদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত

রানী ভিক্টোরিয়া ও এক সেবকের গোপন প্রেম: ব্রিটিশ সিংহাসন কাঁপানো সেই নীরব সম্পর্ক

প্রিন্স আলবার্ট এর মৃত্যুর পর শোকগ্রস্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন জনসম্মুখ থেকে। কিন্তু সেই নিঃসঙ্গতার মাঝেই জন্ম নেয় এমন এক সম্পর্ক, যা তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজকে নাড়া দিয়ে দেয় এবং আজও ইতিহাসবিদদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রানি ভিক্টোরিয়ার জীবনে প্রবেশ করেন জন ব্রাউন নামের এক হাইল্যান্ড সেবক। অ্যাবারডিনশায়ারের এক কৃষকের ছেলে জন ছিলেন সামাজিক শ্রেণীবিভক্ত ভিক্টোরীয় সমাজের চোখে একেবারেই বেমানান। বিধবা রানি ও এক সাধারণ সেবকের ঘনিষ্ঠতা দ্রুত কেলেঙ্কারির রূপ নেয়। সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়ে গুজব, রানি নাকি প্রেমে পড়েছেন, এমনকি গোপনে বিয়েও করেছেন নিজের সেবককে।

শ্রেণি ও ক্ষমতার সংঘাত
ভিক্টোরীয় সমাজ ছিল কঠোর শ্রেণিব্যবস্থায় আবদ্ধ। সেই সমাজে রাজপরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কল্পনাতীত ছিল। রাজদরবার জন ব্রাউন কে ঘৃণা করত তার সাধারণ পরিচয়ের জন্য। সরকারের অনেকেই মনে করত, তিনি রানি ও মুকুটের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমনকি কিছু গুজবে দাবি করা হয়, জন নাকি অদ্ভুত শক্তি ব্যবহার করে রানিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

John Brown, Queen Victoria's Servant | What Was Their Relationship? |  HistoryExtra

নীরব সঙ্গীর দুই দশক
প্রায় বিশ বছর ধরে জন ব্রাউন নীরবে রানি ভিক্টোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের ব্যক্তিগত আক্রমণ, জনরোষের হুমকি—সবই সহ্য করেছেন তিনি। অনেকের বিশ্বাস ছিল, জনের কারণেই রানি দীর্ঘদিন জনজীবন থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। তবু সমালোচনায় কান দেননি ভিক্টোরিয়া। পরিবার, দরবার, সরকার কিংবা সাধারণ মানুষের বিরাগ—কোনোটিই তাকে জন থেকে আলাদা করতে পারেনি।

মৃত্যুর পরেও রহস্য
১৮৮৩ সালে জন ব্রাউনের মৃত্যু হয়। তখনই বহু মানুষ নিশ্চিত হয়ে যান, এই দুজনের মধ্যে গোপন বিয়ে হয়েছিল। পরে রানি ভিক্টোরিয়া তাদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে একটি পাণ্ডুলিপি ছাপাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন কেলেঙ্কারি এড়াতে তার ব্যক্তিগত সচিব সেগুলো জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলেন।

রানির শেষ ইচ্ছা
ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর প্রায় বিশ বছর আগে লেখা গোপন নির্দেশনায় আরেকটি চমক ছিল। তিনি নির্দেশ দেন, তার কবরের সময় আঙুলে জনের মায়ের বিয়ের আংটি পরানো হবে, হাতে থাকবে জনের চুলের একটি গোছা ও তার ছবি। এই নির্দেশনা তাদের সম্পর্কের গভীরতার ইঙ্গিত দেয়।

দেড় শতাব্দীর গোপন আর্কাইভ
পরবর্তী দেড়শ বছর ধরে জন ব্রাউনের পরিবার গোপনে সংরক্ষণ করে রেখেছিল ভিক্টোরিয়ার চিঠি, গয়না ও তাদের সম্পর্কের নানা নিদর্শন। তাদের বিশ্বাস ছিল, সত্য প্রকাশ করা তখনও বিপজ্জনক। কিন্তু সময় বদলেছে। একসময় যা ভিক্টোরীয় সমাজের কাছে ছিল লজ্জার, আজ তা ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত প্রেম কাহিনী হিসেবে স্বীকৃত।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত–পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জোর

রানী ভিক্টোরিয়া ও এক সেবকের গোপন প্রেম: ব্রিটিশ সিংহাসন কাঁপানো সেই নীরব সম্পর্ক

১১:৫৯:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রিন্স আলবার্ট এর মৃত্যুর পর শোকগ্রস্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন জনসম্মুখ থেকে। কিন্তু সেই নিঃসঙ্গতার মাঝেই জন্ম নেয় এমন এক সম্পর্ক, যা তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজকে নাড়া দিয়ে দেয় এবং আজও ইতিহাসবিদদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রানি ভিক্টোরিয়ার জীবনে প্রবেশ করেন জন ব্রাউন নামের এক হাইল্যান্ড সেবক। অ্যাবারডিনশায়ারের এক কৃষকের ছেলে জন ছিলেন সামাজিক শ্রেণীবিভক্ত ভিক্টোরীয় সমাজের চোখে একেবারেই বেমানান। বিধবা রানি ও এক সাধারণ সেবকের ঘনিষ্ঠতা দ্রুত কেলেঙ্কারির রূপ নেয়। সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়ে গুজব, রানি নাকি প্রেমে পড়েছেন, এমনকি গোপনে বিয়েও করেছেন নিজের সেবককে।

শ্রেণি ও ক্ষমতার সংঘাত
ভিক্টোরীয় সমাজ ছিল কঠোর শ্রেণিব্যবস্থায় আবদ্ধ। সেই সমাজে রাজপরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কল্পনাতীত ছিল। রাজদরবার জন ব্রাউন কে ঘৃণা করত তার সাধারণ পরিচয়ের জন্য। সরকারের অনেকেই মনে করত, তিনি রানি ও মুকুটের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমনকি কিছু গুজবে দাবি করা হয়, জন নাকি অদ্ভুত শক্তি ব্যবহার করে রানিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

John Brown, Queen Victoria's Servant | What Was Their Relationship? |  HistoryExtra

নীরব সঙ্গীর দুই দশক
প্রায় বিশ বছর ধরে জন ব্রাউন নীরবে রানি ভিক্টোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের ব্যক্তিগত আক্রমণ, জনরোষের হুমকি—সবই সহ্য করেছেন তিনি। অনেকের বিশ্বাস ছিল, জনের কারণেই রানি দীর্ঘদিন জনজীবন থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। তবু সমালোচনায় কান দেননি ভিক্টোরিয়া। পরিবার, দরবার, সরকার কিংবা সাধারণ মানুষের বিরাগ—কোনোটিই তাকে জন থেকে আলাদা করতে পারেনি।

মৃত্যুর পরেও রহস্য
১৮৮৩ সালে জন ব্রাউনের মৃত্যু হয়। তখনই বহু মানুষ নিশ্চিত হয়ে যান, এই দুজনের মধ্যে গোপন বিয়ে হয়েছিল। পরে রানি ভিক্টোরিয়া তাদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে একটি পাণ্ডুলিপি ছাপাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন কেলেঙ্কারি এড়াতে তার ব্যক্তিগত সচিব সেগুলো জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলেন।

রানির শেষ ইচ্ছা
ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর প্রায় বিশ বছর আগে লেখা গোপন নির্দেশনায় আরেকটি চমক ছিল। তিনি নির্দেশ দেন, তার কবরের সময় আঙুলে জনের মায়ের বিয়ের আংটি পরানো হবে, হাতে থাকবে জনের চুলের একটি গোছা ও তার ছবি। এই নির্দেশনা তাদের সম্পর্কের গভীরতার ইঙ্গিত দেয়।

দেড় শতাব্দীর গোপন আর্কাইভ
পরবর্তী দেড়শ বছর ধরে জন ব্রাউনের পরিবার গোপনে সংরক্ষণ করে রেখেছিল ভিক্টোরিয়ার চিঠি, গয়না ও তাদের সম্পর্কের নানা নিদর্শন। তাদের বিশ্বাস ছিল, সত্য প্রকাশ করা তখনও বিপজ্জনক। কিন্তু সময় বদলেছে। একসময় যা ভিক্টোরীয় সমাজের কাছে ছিল লজ্জার, আজ তা ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত প্রেম কাহিনী হিসেবে স্বীকৃত।