প্রিন্স আলবার্ট এর মৃত্যুর পর শোকগ্রস্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানী ভিক্টোরিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন জনসম্মুখ থেকে। কিন্তু সেই নিঃসঙ্গতার মাঝেই জন্ম নেয় এমন এক সম্পর্ক, যা তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজকে নাড়া দিয়ে দেয় এবং আজও ইতিহাসবিদদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রানি ভিক্টোরিয়ার জীবনে প্রবেশ করেন জন ব্রাউন নামের এক হাইল্যান্ড সেবক। অ্যাবারডিনশায়ারের এক কৃষকের ছেলে জন ছিলেন সামাজিক শ্রেণীবিভক্ত ভিক্টোরীয় সমাজের চোখে একেবারেই বেমানান। বিধবা রানি ও এক সাধারণ সেবকের ঘনিষ্ঠতা দ্রুত কেলেঙ্কারির রূপ নেয়। সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়ে গুজব, রানি নাকি প্রেমে পড়েছেন, এমনকি গোপনে বিয়েও করেছেন নিজের সেবককে।
শ্রেণি ও ক্ষমতার সংঘাত
ভিক্টোরীয় সমাজ ছিল কঠোর শ্রেণিব্যবস্থায় আবদ্ধ। সেই সমাজে রাজপরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কল্পনাতীত ছিল। রাজদরবার জন ব্রাউন কে ঘৃণা করত তার সাধারণ পরিচয়ের জন্য। সরকারের অনেকেই মনে করত, তিনি রানি ও মুকুটের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এমনকি কিছু গুজবে দাবি করা হয়, জন নাকি অদ্ভুত শক্তি ব্যবহার করে রানিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।

নীরব সঙ্গীর দুই দশক
প্রায় বিশ বছর ধরে জন ব্রাউন নীরবে রানি ভিক্টোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সংবাদমাধ্যমের ব্যক্তিগত আক্রমণ, জনরোষের হুমকি—সবই সহ্য করেছেন তিনি। অনেকের বিশ্বাস ছিল, জনের কারণেই রানি দীর্ঘদিন জনজীবন থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। তবু সমালোচনায় কান দেননি ভিক্টোরিয়া। পরিবার, দরবার, সরকার কিংবা সাধারণ মানুষের বিরাগ—কোনোটিই তাকে জন থেকে আলাদা করতে পারেনি।
মৃত্যুর পরেও রহস্য
১৮৮৩ সালে জন ব্রাউনের মৃত্যু হয়। তখনই বহু মানুষ নিশ্চিত হয়ে যান, এই দুজনের মধ্যে গোপন বিয়ে হয়েছিল। পরে রানি ভিক্টোরিয়া তাদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ করতে একটি পাণ্ডুলিপি ছাপাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন কেলেঙ্কারি এড়াতে তার ব্যক্তিগত সচিব সেগুলো জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলেন।
রানির শেষ ইচ্ছা
ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর প্রায় বিশ বছর আগে লেখা গোপন নির্দেশনায় আরেকটি চমক ছিল। তিনি নির্দেশ দেন, তার কবরের সময় আঙুলে জনের মায়ের বিয়ের আংটি পরানো হবে, হাতে থাকবে জনের চুলের একটি গোছা ও তার ছবি। এই নির্দেশনা তাদের সম্পর্কের গভীরতার ইঙ্গিত দেয়।
দেড় শতাব্দীর গোপন আর্কাইভ
পরবর্তী দেড়শ বছর ধরে জন ব্রাউনের পরিবার গোপনে সংরক্ষণ করে রেখেছিল ভিক্টোরিয়ার চিঠি, গয়না ও তাদের সম্পর্কের নানা নিদর্শন। তাদের বিশ্বাস ছিল, সত্য প্রকাশ করা তখনও বিপজ্জনক। কিন্তু সময় বদলেছে। একসময় যা ভিক্টোরীয় সমাজের কাছে ছিল লজ্জার, আজ তা ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত প্রেম কাহিনী হিসেবে স্বীকৃত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















