নতুন একটি হিন্দি রোমান্টিক ছবির প্রতি স্বাভাবিক প্রত্যাশা থাকে হালকা আনন্দ, কিছু আবেগ আর পরিচিত তারকাদের রসায়ন। সেই আশা নিয়েই দর্শক ঢোকে হলে। কিন্তু ‘তু মেরি মেঁ তেরা, মেঁ তেরা তু মেরি’ দেখে বেরিয়ে অনেকের মনেই থেকে যায় একটাই অনুভূতি—ছবির প্রেম নয়, মন কেড়ে নিয়েছে ইউরোপের এক দেশ।
ক্রোয়েশিয়ার রূপে ঢেকে গেল গল্প
এই ছবির সবচেয়ে বড় নায়ক আসলে কার্তিক আরিয়ান কিংবা অনন্যা পাণ্ডে নন। পুরো ছবিজুড়ে চোখ আটকে থাকে ক্রোয়েশিয়ার নীল জল, রোদঝলমলে রাস্তা আর প্রাচীন শহরের সৌন্দর্যে। ক্যামেরা বারবার এমনভাবে প্রকৃতিকে তুলে ধরেছে যে গল্পের চরিত্ররা ধীরে ধীরে গৌণ হয়ে যায়। একসময় দর্শক পর্দার প্রেম ভুলে মনে মনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে শুরু করেন।
রসায়নের অভাব, আবেগের শূন্যতা
ছবির প্রথম ভাগে আধুনিক প্রেমকাহিনির আবহ তৈরি করার চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু সেই চেষ্টায় প্রাণ নেই। কার্তিক আর অনন্যাকে একসঙ্গে দেখা যায়, হাসতে দেখা যায়, ঘুরতে দেখা যায়, কিন্তু ভালোবাসা অনুভব করা যায় না। তাদের সম্পর্ক যেন দুজন অচেনা মানুষের হঠাৎ পাশাপাশি বসে যাওয়া, যাকে ভাগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। উত্তেজনা নেই, টান নেই, কেবল সঙ্গীত দিয়ে আবেগ তৈরি করার চেষ্টা।
![]()
পুরোনো ভাবনায় আটকে দ্বিতীয়ার্ধ
দ্বিতীয় ভাগে গিয়ে গল্প আরও পিছিয়ে পড়ে। হঠাৎ করেই প্রেম ছেড়ে সবকিছু ঘুরে যায় পরিবার আর অনুমতির গল্পে। বাবা-মায়ের আশীর্বাদের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করার সেই বহুবার দেখা ধারণা আবার ফিরে আসে। আধুনিক সময়ের কথা বলার দাবি থাকলেও সংলাপ আর ভাবনায় যেন নব্বই দশকের ছায়া। আজকের সম্পর্কের বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন।
চিত্রনাট্যের ভারে নায়কও ক্লান্ত
কার্তিক আরিয়ান সাধারণত রোমান্টিক চরিত্রে সাবলীল। কিন্তু এখানে সংলাপ আর চরিত্রের দুর্বলতায় তিনিও অসহায়। ভালোবাসা নিয়ে তার বলা কথাগুলো অবাস্তব শোনায়। অনন্যার চরিত্র লেখক হলেও লেখালেখির কোনো চিহ্ন নেই। দুজনের পেশা, স্বপ্ন কিংবা সংগ্রামের ছবি অস্পষ্ট। তারা যেন গানের দৃশ্যের ফাঁকে সময় কাটানো কিছু মানুষ।
অভিজ্ঞ অভিনেতারাও ব্যর্থ
অভিনয়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে যাঁরা ছবিকে শক্তি দিতে পারতেন, তাঁরাও এখানে সীমাবদ্ধ। নীনা গুপ্তের চরিত্র কেবলই একটি ছাঁচে বাঁধা ‘আধুনিক মা’। জ্যাকি শ্রফের সংলাপ দেশ আর সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতায় আটকে যায়, যা গল্পের সঙ্গে মিশে যেতে পারে না।
শেষ পর্যন্ত কী রয়ে গেল
ছবি শেষ হলে মনে থাকে না কোনো প্রেমকাহিনি, কোনো চরিত্রের যাত্রা। মনে থাকে শুধু এক সুন্দর দেশের দৃশ্য। রোমান্টিক ছবিতে যদি সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রেম হয় ক্যামেরা আর প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যে, তাহলে গল্পের কোথাও না কোথাও বড় ভুল থেকেই যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















