এক সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের আলমারিতে বইয়ের ভিড়ে আলাদা করে জায়গা থাকত একটি মোটা অভিধানের জন্য। ঘরের কারও উচ্চারণ ভুল হলেই কিংবা বানান নিয়ে তর্ক বাঁধলেই শেষ আশ্রয় ছিল সেই বই। সময় বদলেছে। কাগজের পাতা উল্টে উত্তর খোঁজার সেই অভ্যাস এখন প্রায় ইতিহাস। প্রশ্ন উঠছে, অভিধান কি তবে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই প্রশ্নই নতুন করে সামনে এনেছে মার্কিন সাময়িকী নিউ ইয়র্কার–এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায়।
অভিধানের একসময়ের গৌরব
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ঘরে ঘরে পিয়ানো আর অভিধান থাকা ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। পিয়ানো ছিল সংগীত শোনার উপায়, আর অভিধান ছিল ভাষার শেষ কথা। কোন শব্দের বানান ঠিক, কোন উচ্চারণ শুদ্ধ—সব সিদ্ধান্ত নিত সেই বই। স্কুলের পড়া থেকে শুরু করে পারিবারিক তর্ক কিংবা শব্দের খেলায় অভিধান ছিল নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
মুদ্রিত অভিধানের স্বর্ণযুগ
উনিশ শতকের শেষভাগে মুদ্রিত অভিধানের বাজার ছিল রমরমা। বিশেষ করে মেরিয়াম ওয়েবস্টার কলেজিয়েট অভিধান টানা বহু সপ্তাহ বেস্ট সেলার তালিকায় ছিল। কয়েক কোটি কপি বিক্রি হয়েছিল, যা তখন বাইবেলের পরেই সর্বোচ্চ বিক্রির উদাহরণ হিসেবে ধরা হতো। শব্দের ব্যবসায় তখন সত্যিই বড় অঙ্কের টাকা ছিল।

ডিজিটাল বিপ্লবের ধাক্কা
ইন্টারনেট আসার পর ছবিটা দ্রুত বদলে যায়। এখন আর বানান বা অর্থ জানার জন্য আলাদা বই খোলার দরকার নেই। মুঠোফোনে কয়েক সেকেন্ডেই উত্তর হাজির। অনলাইন অভিধান নিয়মিত আপডেট হয়, নতুন শব্দ ঢুকে পড়ে মুহূর্তে। ফলে ধীরে ধীরে কাগজের অভিধান হারাতে শুরু করে তার প্রভাব আর প্রয়োজনীয়তা।
তবু কি পুরোপুরি বিলুপ্তি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অভিধান হারিয়ে যাচ্ছে এমন নয়, বদলে যাচ্ছে তার রূপ। ছাপা সংস্করণ কমে গেলেও ভাষার মানদণ্ড হিসেবে অভিধানের গুরুত্ব রয়ে গেছে। চীনের সিনহুয়া অভিধান–এর মতো উদাহরণ দেখায়, সঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারলে অভিধান এখনও বিপুল পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারে।
ভাষার ভবিষ্যৎ ও অভিধানের ভূমিকা
ডিজিটাল যুগে ভাষা দ্রুত বদলাচ্ছে। নতুন শব্দ তৈরি হচ্ছে, পুরোনো শব্দের অর্থ পাল্টাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ভেতর অভিধানের কাজ শুধু শব্দের মানে দেওয়া নয়, ভাষার ইতিহাস আর শৃঙ্খলা ধরে রাখাও। তাই কাগজের পাতা কমলেও অভিধান পুরোপুরি হারিয়ে যাবে—এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নারাজ অনেকেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















