ভারতের প্রযুক্তি খাতে নতুন করে অর্থের জোয়ার দেখা দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডেটা কেন্দ্র নির্মাণে দেশটিতে বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী পাঁচ বছরে এই খাতে মোট বিনিয়োগের অঙ্ক দাঁড়াতে পারে প্রায় সাড়ে সাতষট্টি বিলিয়ন ডলার। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে
মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের বড় বাজি
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা ভারতের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সাড়ে সতেরো বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানান। একই সময়ে আমাজন ঘোষণা দেয়, তারা ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্পে পঁয়ত্রিশ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এর দুই মাস আগে গুগলও ভারতের আদানি গ্রুপ ও ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে অংশীদারত্বে পনেরো বিলিয়ন ডলারের ডেটা কেন্দ্র প্রকল্পে অঙ্গীকার করে।
এই তিন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মেটা, রিলায়েন্স ও টাটার মতো বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোও ডেটা কেন্দ্র স্থাপনে এগিয়ে এসেছে। বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের ইতিহাসে একক খাতে এটি হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ঢেউ।
ভারতের ডেটা বাজারের বাস্তবতা
বিশ্বের প্রায় বিশ শতাংশ তথ্য ভারতের মানুষের ব্যবহারে তৈরি হলেও দেশটিতে সংরক্ষণ সক্ষমতা মাত্র তিন শতাংশের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভারতে ডেটা কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক কম। অথচ দ্রুত বাড়তে থাকা জনসংখ্যা ও বিস্তৃত ডিজিটাল অর্থনীতি এই খাতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভোক্তা হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এই ঘাটতিই এখন মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সুযোগ হয়ে উঠেছে।
শুল্ক ও রাজনীতির ছায়া সত্ত্বেও বিনিয়োগ
চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ থেমে থাকেনি। ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা চললেও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যৎ বাজারের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।

ডেটা স্থানীয়করণের চাপ
ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চায় দেশের নাগরিকদের তথ্য দেশের ভেতরেই সংরক্ষিত থাকুক। ব্যাংক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য স্থানীয় সার্ভারে রাখার নিয়ম ইতিমধ্যে কার্যকর। এই নীতির বিস্তৃতি ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কাও বিদেশি কোম্পানিগুলোকে ভারতে ডেটা কেন্দ্র স্থাপনে উৎসাহিত করছে।
হায়দরাবাদে ডেটা কেন্দ্রের উত্থান
উপকূলের পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরীণ শহর হায়দরাবাদও ডেটা কেন্দ্রের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠছে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, তুলনামূলক কম খরচ এবং পানির সহজলভ্যতা এই শহরকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করেছে। এখানেই দেশের প্রথম এক গিগাওয়াট সক্ষমতার ডেটা কেন্দ্র গড়ে ওঠার কথা রয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















