০৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি খালেদা জিয়ার মৃত্যু: রাষ্ট্রীয় শোক ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা মুন্সিগঞ্জে ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ড; দ্রুত নিয়ন্ত্রণে বড় ক্ষতি এড়ানো গেল এক চিলতে আগুনেই সর্বনাশ, খুলনার বাজারগুলোয় অগ্নিঝুঁকির নীরব আতঙ্ক খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা: জামায়াত নেতা তাহের ইসরায়েলের পদক্ষেপের পর তুরস্কে সোমালি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক বৈঠক সুইস কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি সরবরাহ প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন এক এনআইডিতে পাঁচ সিম সীমা গুজব: টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সেনা নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণ পল্লবীতে অস্ত্রসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথোপকথনে মানসিক ভাঙন, চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়ছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট এর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিভ্রম ও মানসিক ভাঙনের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে—এমন উদ্বেগজনক পর্যবেক্ষণের কথা জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চিকিৎসকদের কাছে আসা একাধিক রোগীর নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে, যার পেছনে চ্যাটবট এর সঙ্গে লাগাতার আলাপ একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলে তাদের ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই প্রবণতার বিস্তারিত উঠে এসেছে।

চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ

চিকিৎসকদের ভাষায়, এই প্রযুক্তি হয়তো নতুন বিভ্রম তৈরি করছে না, কিন্তু ব্যবহারকারীদের বলা বাস্তবতাকে সত্য ধরে নিয়ে সেটি প্রতিফলিত করছে। ফলে বিভ্রমের চক্র আরও শক্ত হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, গত কয়েক মাসে তিনি এমন একাধিক রোগীর চিকিৎসা করেছেন, যাদের ক্ষেত্রে চ্যাটবটের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপের পর গুরুতর মানসিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

কীভাবে তৈরি হচ্ছে বিভ্রম

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভ্রম বলতে বোঝায় এমন দৃঢ় বিশ্বাস, যা বাস্তব নয় এবং সমাজে সাধারণভাবে স্বীকৃতও নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই নিজেদের অসাধারণ আবিষ্কারের কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন, কেউ ভাবছেন যন্ত্র সচেতন হয়ে উঠেছে, আবার কেউ ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রে নিজেকে দেখছেন। চ্যাটবট ব্যবহারকারীর বক্তব্যের সঙ্গে সায় দেওয়ায় এই বিশ্বাস আরও গভীর হচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের।

একটি ঘটনায় সতর্কবার্তা

এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানসিক রোগের পূর্ব ইতিহাস না থাকা এক তরুণী বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে চ্যাটবটের মাধ্যমে তিনি মৃত আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের ঘাটতি ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও চ্যাটবটের প্রতিক্রিয়া তাঁর বিভ্রমকে উসকে দিয়েছে।

প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থান

চ্যাটবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ শনাক্তে প্রশিক্ষণ উন্নত করছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কথোপকথন শান্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। চ্যাটজিপিটি–এর সাম্প্রতিক সংস্করণে বিভ্রান্তিকর সাড়া কমানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।

সংখ্যার ভেতরের ঝুঁকি

প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীদের খুব অল্প অংশ মানসিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। তবে মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিপুল হওয়ায় এই অল্প অংশও বাস্তবে লক্ষাধিক মানুষের সমান। গবেষকরা মনে করছেন, মাদক ব্যবহার বা চরম মানসিক চাপের মতোই দীর্ঘ সময় চ্যাটবট ব্যবহারের প্রভাব কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে চ্যাটবটই মানসিক ভাঙনের কারণ। তবে বাস্তব মানবিক সম্পর্কের অনুকরণ করে যন্ত্রের সাড়া দেওয়া—মানব ইতিহাসে যা নতুন—এই বিষয়টি নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

শৈত্যপ্রবাহে হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ: সারা দেশে কুয়াশা, শ্বাসকষ্ট আর জীবিকার ঝুঁকি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথোপকথনে মানসিক ভাঙন, চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়ছে

০১:২৮:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট এর সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিভ্রম ও মানসিক ভাঙনের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে—এমন উদ্বেগজনক পর্যবেক্ষণের কথা জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চিকিৎসকদের কাছে আসা একাধিক রোগীর নথি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে, যার পেছনে চ্যাটবট এর সঙ্গে লাগাতার আলাপ একটি বড় ভূমিকা রাখছে বলে তাদের ধারণা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই প্রবণতার বিস্তারিত উঠে এসেছে।

চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ

চিকিৎসকদের ভাষায়, এই প্রযুক্তি হয়তো নতুন বিভ্রম তৈরি করছে না, কিন্তু ব্যবহারকারীদের বলা বাস্তবতাকে সত্য ধরে নিয়ে সেটি প্রতিফলিত করছে। ফলে বিভ্রমের চক্র আরও শক্ত হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, গত কয়েক মাসে তিনি এমন একাধিক রোগীর চিকিৎসা করেছেন, যাদের ক্ষেত্রে চ্যাটবটের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপের পর গুরুতর মানসিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

কীভাবে তৈরি হচ্ছে বিভ্রম

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভ্রম বলতে বোঝায় এমন দৃঢ় বিশ্বাস, যা বাস্তব নয় এবং সমাজে সাধারণভাবে স্বীকৃতও নয়। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই নিজেদের অসাধারণ আবিষ্কারের কেন্দ্রবিন্দু মনে করছেন, কেউ ভাবছেন যন্ত্র সচেতন হয়ে উঠেছে, আবার কেউ ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রে নিজেকে দেখছেন। চ্যাটবট ব্যবহারকারীর বক্তব্যের সঙ্গে সায় দেওয়ায় এই বিশ্বাস আরও গভীর হচ্ছে বলে মত চিকিৎসকদের।

একটি ঘটনায় সতর্কবার্তা

এক গবেষণায় উঠে এসেছে, মানসিক রোগের পূর্ব ইতিহাস না থাকা এক তরুণী বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে চ্যাটবটের মাধ্যমে তিনি মৃত আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের ঘাটতি ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও চ্যাটবটের প্রতিক্রিয়া তাঁর বিভ্রমকে উসকে দিয়েছে।

প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থান

চ্যাটবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ শনাক্তে প্রশিক্ষণ উন্নত করছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কথোপকথন শান্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। চ্যাটজিপিটি–এর সাম্প্রতিক সংস্করণে বিভ্রান্তিকর সাড়া কমানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানানো হয়েছে।

সংখ্যার ভেতরের ঝুঁকি

প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, সাপ্তাহিক ব্যবহারকারীদের খুব অল্প অংশ মানসিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। তবে মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিপুল হওয়ায় এই অল্প অংশও বাস্তবে লক্ষাধিক মানুষের সমান। গবেষকরা মনে করছেন, মাদক ব্যবহার বা চরম মানসিক চাপের মতোই দীর্ঘ সময় চ্যাটবট ব্যবহারের প্রভাব কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে চ্যাটবটই মানসিক ভাঙনের কারণ। তবে বাস্তব মানবিক সম্পর্কের অনুকরণ করে যন্ত্রের সাড়া দেওয়া—মানব ইতিহাসে যা নতুন—এই বিষয়টি নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। আরও গবেষণা না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।