০৭:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
  • 17
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

হেরম্ব বলল, ‘আনন্দ আপনার কাছে থাক, আমার থাকবার দরকার নেই।’ মালতী বলল, ‘না বাপু, না, আনন্দ থাকলে হবে না। ও ছেলেমানুষ, আমার ভয় করবে।’

হেরম্ব আনন্দের মুখের দিকে তাকাল। আনন্দের নির্বিকার মুখ থেকে কোন ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। হেরম্ব বলল, ‘তা’হলে সবাই অল্প ঘরে যাই চলুন। এ ঘরে শোয়া যাবে না।’

মালতী রেগে বলল, ‘তুমি বড় বাজে বক, হেরম্ব। বাহাছরি না করে যা বলছি তাই কর দিকি। যা, আনন্দ, ঝাঁটা নিয়ে আয়।’

ঝাঁটা এনে আনন্দ ঘর ঝাঁট দিল। জানালা ঘেঁষে হেরম্বের বিছানা হল। মালতীর নির্দেশমতো মন্দিরের দিকে মা’র অবাধ্য হয়ে মালতীর বিছানা থেকে যতটা পারে দূরে সরিয়ে শুধু একটি মাদুর পেতে আনন্দ নিজের বিছানা করল। মালতীর অনুযোগের জবাবে রুক্ষস্বরে বলল, ‘আমি কারো কাছে শুতে পারি না।’

যে যার শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করলে মালতী বলল, ‘সজাগ থেকে ঘুমিও, হেরম্ব, ডাকলে যেন সাড়া পাই।’

হেরম্ব বলল, ‘সজাগও থাকব, ডাকলে সাড়াও পাবেন, এরকম ঘুমোব কি করে? তার চেয়ে আমি বসে থাকি।’

মালতী ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, ইয়ার্কি দিও না, হেরম্ব। আমার এদিকে মাথার ঠিক নেই, উনি ঠাট্টা জুড়লেন।’

সজাগ হেরম্ব বিনা চেষ্টাতেই হয়ে রইল। দুটি নারীকে এভাবে পাহারা দিয়ে ঘুমানোর চেয়ে জেগে থাকাই সহজ।

ঘর স্তব্ধ হয়ে থাকে। আনন্দ নিজের আঁচলে মুখ ঢেকে শুয়েছে; লণ্ঠনের আলো দেওয়ালে তার যে ছায়া ফেলেছে তাকে মানুষের ছায়া বলে চেনা যায় না। অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘরে কে ঘুমিয়েছে কে জেগে আছে টের পাওয়া অসম্ভব হয়।

মালতী সান্তে আস্তে হেরম্বের সাড়া নেয়। ‘হেরখ?’

‘ওয় নেই, ক্ষেগেই আছি।’

‘আচ্ছা, বল হিকি একটা কথা। মানুষকে খুঁজে বার করতে হলে কি করা উচিত ?

‘খুঁ’ক্ষতে বার হওয়া উচিত।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৯ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৯ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৬০ তম কিস্তি )

১২:০০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

হেরম্ব বলল, ‘আনন্দ আপনার কাছে থাক, আমার থাকবার দরকার নেই।’ মালতী বলল, ‘না বাপু, না, আনন্দ থাকলে হবে না। ও ছেলেমানুষ, আমার ভয় করবে।’

হেরম্ব আনন্দের মুখের দিকে তাকাল। আনন্দের নির্বিকার মুখ থেকে কোন ইঙ্গিত পাওয়া গেল না। হেরম্ব বলল, ‘তা’হলে সবাই অল্প ঘরে যাই চলুন। এ ঘরে শোয়া যাবে না।’

মালতী রেগে বলল, ‘তুমি বড় বাজে বক, হেরম্ব। বাহাছরি না করে যা বলছি তাই কর দিকি। যা, আনন্দ, ঝাঁটা নিয়ে আয়।’

ঝাঁটা এনে আনন্দ ঘর ঝাঁট দিল। জানালা ঘেঁষে হেরম্বের বিছানা হল। মালতীর নির্দেশমতো মন্দিরের দিকে মা’র অবাধ্য হয়ে মালতীর বিছানা থেকে যতটা পারে দূরে সরিয়ে শুধু একটি মাদুর পেতে আনন্দ নিজের বিছানা করল। মালতীর অনুযোগের জবাবে রুক্ষস্বরে বলল, ‘আমি কারো কাছে শুতে পারি না।’

যে যার শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করলে মালতী বলল, ‘সজাগ থেকে ঘুমিও, হেরম্ব, ডাকলে যেন সাড়া পাই।’

হেরম্ব বলল, ‘সজাগও থাকব, ডাকলে সাড়াও পাবেন, এরকম ঘুমোব কি করে? তার চেয়ে আমি বসে থাকি।’

মালতী ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, ইয়ার্কি দিও না, হেরম্ব। আমার এদিকে মাথার ঠিক নেই, উনি ঠাট্টা জুড়লেন।’

সজাগ হেরম্ব বিনা চেষ্টাতেই হয়ে রইল। দুটি নারীকে এভাবে পাহারা দিয়ে ঘুমানোর চেয়ে জেগে থাকাই সহজ।

ঘর স্তব্ধ হয়ে থাকে। আনন্দ নিজের আঁচলে মুখ ঢেকে শুয়েছে; লণ্ঠনের আলো দেওয়ালে তার যে ছায়া ফেলেছে তাকে মানুষের ছায়া বলে চেনা যায় না। অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘরে কে ঘুমিয়েছে কে জেগে আছে টের পাওয়া অসম্ভব হয়।

মালতী সান্তে আস্তে হেরম্বের সাড়া নেয়। ‘হেরখ?’

‘ওয় নেই, ক্ষেগেই আছি।’

‘আচ্ছা, বল হিকি একটা কথা। মানুষকে খুঁজে বার করতে হলে কি করা উচিত ?

‘খুঁ’ক্ষতে বার হওয়া উচিত।’

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৯ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৯ তম কিস্তি )