১১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান হিন্দু মহাজোটের সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন: গাজা পুনর্গঠন ও শান্তি আলোচনায় বাস্তব পদক্ষেপ চাইলেন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৯)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
  • 85

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

সেই সমস্ত ভিত্তি এক্ষণে জঙ্গলে পরিপূর্ণ; তথায় একটি ফোয়ারার হ্রদ বা চৌবাচ্চা দেখা যায়। তাহার কিয়দংশ আজিও কষ্টিপ্রস্তরমণ্ডিত আছে। এই বৈঠকখানার পশ্চাতে ভাগীরথীতীরে কতকগুলি আম্রবৃক্ষের শ্রেণী। শুনা যায়, সেই স্থানে জগৎশেঠদিগের গদী বা কারবারখানা ছিল। তাহার ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুদ্রা রক্ষিত হইত এবং অবিরত অধমর্ণগণে পরিপূর্ণ থাকিত। এক্ষণে তাহার ভিত্তিরও চিহ্নমাত্র নাই। ইহাদের নিকটে একটি অর্দ্ধভগ্ন চৌদুয়ারী আছে; এই সৌদুয়ারার উত্তর দ্বার দিয়া জগৎশেঠদিগের ভবনে, পূর্ব্ব দ্বার দিয়া ঠাকুরবাটীতে, দক্ষিণ দ্বার দিয়া খোশালবাগে এবং পশ্চিম দ্বার দিয়া ভাগীরথীতীরে গমন করা যায়। দক্ষিণদিকে যেরূপ অর্দ্ধভগ্ন চৌদুয়ারীটি রহিয়াছে, শুনা যায়, উত্তর দিকে ঠিক এইরূপ আর একটি চৌডয়ারী ছিল।

ঠাকুরবাটীর উত্তর পশ্চিমে, একটি বাটীর ভিত্তির কতকটা ভগ্নাবশেষ আছে, তাহাকে সুখমহাল বলিত; ইহার নিকট রংমহাল নামে আর একটি বাটা ছিল।উৎসবকালে সুখমহাল ও রংমহাল সুসজ্জিত হইত এবং নবাৰ ও তদ্বংশীয়-গণ সুখমহালে উপবেশন করিয়া উৎসবের গৌরব বৃদ্ধি করিতেন। খোশালবাগে এক খানি সুন্দর বাঙ্গলা’ আছে। ঠাকুরবাটী ব্যতীত জগৎশেঠদিগের অন্তঃপুরের সামান্য কিয়দংশ এক্ষণে বর্তমান। বর্তমান জগৎশেঠ সেই খানেই অবস্থিতি করিতেন; গত ভূমিকম্পের পর হইতে তিনি নূতন বাটীতে বাস করিতেছেন।

জগৎশেঠদিগের বাটীর উত্তরে একটি মন্দির দৃষ্ট হয়; তাহাকে সতীস্থান কহে। সেই স্থানে কোন সতী সহগমন করায় তাঁহার স্মৃতির জন্য মন্দিরটি নির্মিত হয়। জগৎশেঠ- বংশীয় বলিয়া কেহ কেহ সেই সতীর পরিচয় প্রদান করিয়া থাকেন এবং তৎসম্বন্ধে অন্য বিবরণও শুনা যায়। ফলতঃ সতীস্থানসম্বন্ধে কোন প্রামাণিক বিবরণ পাওয়া যায় না। মহিমাপুরের অপর পারে ডাহাপাড়ার উত্তরে সিরাজউদ্দৌলার ভগ্ন প্রাসাদাদির নিকট হইতে একটি খাল বহু দূর পর্যন্ত গমন করিয়াছে। এই খালটি জগৎশেঠগণ খনন করাইয়া বাঁধাইয়া দিয়াছিলেন। ইহাকে শেঠের লহর কহে।

শেঠেরা তথায় নৌবিহার করিতেন। এক্ষণে বর্ষাকাল ব্যতীত অন্য সমরে তাহার- অধিকাংশ স্থান শুদ্ধাবস্থায় অবস্থিতি করে। মহিমাপুরের পরপারে জগদ্বিশ্রাম নামে তাঁহাদের এক সুরম্য উদ্যান-বাটিকা ছিল; এক্ষণে তাহাও ভাগীরথীগর্ভস্থ হইয়াছে।যে জগৎশেঠদিগের নাম ও গৌরব এক কালে সমগ্র জগতে বিঘোষিত হইয়াছিল, আজ তাঁহাদের সে নাম ও গৌরবের সহিত তাঁহাদের বাসভবনের ও অন্যান্য কীর্তির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইতে চলিয়াছে। তাহাদের সমস্তই এক্ষণে ভগ্নস্তূপে পরিণত। চতুদ্দিকে বিস্তৃত সেই ভগ্নস্তূপের মধ্যে বসিয়া জগৎশেঠদিগের একমাত্র বংশধর কালের বিস্ময়করী লীলা সন্দর্শন করিতেছেন!

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৪৯)

১১:০০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

সেই সমস্ত ভিত্তি এক্ষণে জঙ্গলে পরিপূর্ণ; তথায় একটি ফোয়ারার হ্রদ বা চৌবাচ্চা দেখা যায়। তাহার কিয়দংশ আজিও কষ্টিপ্রস্তরমণ্ডিত আছে। এই বৈঠকখানার পশ্চাতে ভাগীরথীতীরে কতকগুলি আম্রবৃক্ষের শ্রেণী। শুনা যায়, সেই স্থানে জগৎশেঠদিগের গদী বা কারবারখানা ছিল। তাহার ভিন্ন ভিন্ন প্রকোষ্ঠে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মুদ্রা রক্ষিত হইত এবং অবিরত অধমর্ণগণে পরিপূর্ণ থাকিত। এক্ষণে তাহার ভিত্তিরও চিহ্নমাত্র নাই। ইহাদের নিকটে একটি অর্দ্ধভগ্ন চৌদুয়ারী আছে; এই সৌদুয়ারার উত্তর দ্বার দিয়া জগৎশেঠদিগের ভবনে, পূর্ব্ব দ্বার দিয়া ঠাকুরবাটীতে, দক্ষিণ দ্বার দিয়া খোশালবাগে এবং পশ্চিম দ্বার দিয়া ভাগীরথীতীরে গমন করা যায়। দক্ষিণদিকে যেরূপ অর্দ্ধভগ্ন চৌদুয়ারীটি রহিয়াছে, শুনা যায়, উত্তর দিকে ঠিক এইরূপ আর একটি চৌডয়ারী ছিল।

ঠাকুরবাটীর উত্তর পশ্চিমে, একটি বাটীর ভিত্তির কতকটা ভগ্নাবশেষ আছে, তাহাকে সুখমহাল বলিত; ইহার নিকট রংমহাল নামে আর একটি বাটা ছিল।উৎসবকালে সুখমহাল ও রংমহাল সুসজ্জিত হইত এবং নবাৰ ও তদ্বংশীয়-গণ সুখমহালে উপবেশন করিয়া উৎসবের গৌরব বৃদ্ধি করিতেন। খোশালবাগে এক খানি সুন্দর বাঙ্গলা’ আছে। ঠাকুরবাটী ব্যতীত জগৎশেঠদিগের অন্তঃপুরের সামান্য কিয়দংশ এক্ষণে বর্তমান। বর্তমান জগৎশেঠ সেই খানেই অবস্থিতি করিতেন; গত ভূমিকম্পের পর হইতে তিনি নূতন বাটীতে বাস করিতেছেন।

জগৎশেঠদিগের বাটীর উত্তরে একটি মন্দির দৃষ্ট হয়; তাহাকে সতীস্থান কহে। সেই স্থানে কোন সতী সহগমন করায় তাঁহার স্মৃতির জন্য মন্দিরটি নির্মিত হয়। জগৎশেঠ- বংশীয় বলিয়া কেহ কেহ সেই সতীর পরিচয় প্রদান করিয়া থাকেন এবং তৎসম্বন্ধে অন্য বিবরণও শুনা যায়। ফলতঃ সতীস্থানসম্বন্ধে কোন প্রামাণিক বিবরণ পাওয়া যায় না। মহিমাপুরের অপর পারে ডাহাপাড়ার উত্তরে সিরাজউদ্দৌলার ভগ্ন প্রাসাদাদির নিকট হইতে একটি খাল বহু দূর পর্যন্ত গমন করিয়াছে। এই খালটি জগৎশেঠগণ খনন করাইয়া বাঁধাইয়া দিয়াছিলেন। ইহাকে শেঠের লহর কহে।

শেঠেরা তথায় নৌবিহার করিতেন। এক্ষণে বর্ষাকাল ব্যতীত অন্য সমরে তাহার- অধিকাংশ স্থান শুদ্ধাবস্থায় অবস্থিতি করে। মহিমাপুরের পরপারে জগদ্বিশ্রাম নামে তাঁহাদের এক সুরম্য উদ্যান-বাটিকা ছিল; এক্ষণে তাহাও ভাগীরথীগর্ভস্থ হইয়াছে।যে জগৎশেঠদিগের নাম ও গৌরব এক কালে সমগ্র জগতে বিঘোষিত হইয়াছিল, আজ তাঁহাদের সে নাম ও গৌরবের সহিত তাঁহাদের বাসভবনের ও অন্যান্য কীর্তির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইতে চলিয়াছে। তাহাদের সমস্তই এক্ষণে ভগ্নস্তূপে পরিণত। চতুদ্দিকে বিস্তৃত সেই ভগ্নস্তূপের মধ্যে বসিয়া জগৎশেঠদিগের একমাত্র বংশধর কালের বিস্ময়করী লীলা সন্দর্শন করিতেছেন!