০৮:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৯)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তাই বঙ্গকবির অমৃতবর্ষিণী লেখনীতে চিত্রিত হইয়া মোহনলালের দেবদুর্লভ চিত্র আমাদের চক্ষের সমক্ষে নৃত্য করিয়া বেড়াইতেছে। এই রূপে বাঙ্গালীর গৌরবস্থল মহারাজ নন্দকুমার অনেক ঐতিহাসিকের নিকট কৃষ্ণবর্ণে চিত্রিত হইয়াছেন। অন্য আমরা যে ক্ষুদ্র কাহিনীটির বিষয় বলিতেছি, তাহা কোন ইংরেজী ইতিহাসে দুষ্ট হয় না। কেবল তাহা দুই খানি মুসল মানী ইতিহাসে বর্ণিত হইয়াছে। ইংরেজ ঐতি- হাসিকগণ বোধ হয় ঘটনাটিকে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া উপেক্ষা করিয়া- ছেন। দুঃখের বিষয় মুতাক্ষরীনেও ইহার উল্লেখ নাই।

কেবল তারিখ বাঙ্গালা নামক ফারসী পুস্তকে ও রিয়াজুস্ সালাতীন নামক গ্রন্থে এই ক্ষুদ্র কাহিনীটি দেখিতে পাওয়া যায়। আলিবন্দী খাঁ যে সময়ে গিরিয়ার সমরক্ষেত্রে নবাব সরফরাজ খাঁকে নিহত করিয়া মুর্শিদাবাদের সিংহাসন লাভ করেন, ইহা সেই সময়ের একটি সামান্য ঘটনা মাত্র। ঘটনাটি সামান্য হইতে পারে, কিন্তু ইহাতে হিন্দুর। জাতীয়তার একটি বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায়।

চতুদিকে প্রজ্বলিত ভীষণ সমরানলের মধ্যে একটি নবমবর্ষীয় বালকের অদ্ভুত পিতৃভক্তি আমাদের জাতীয় ভাবের কি একটি জ্বলন্ত ছবি নহে? অন্যান্য জাতির নিকট উপেক্ষণীয় হইলেও আমাদের নিকট যে ইহা পরম গৌরবের বিষয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমরা সংক্ষেপে ঘটনাটি যথাসাধ্য বর্ণন করিতে। প্রয়াস পাইতেছি। বিজয়লক্ষ্মীর বরমাল্যলাভের আশায় আলিবর্দী খাঁ ও সরফরাজ খাঁ ১৭৪০ খৃঃ অব্দের শেষ ভাগে গিরিয়া প্রান্তরে শিবির সন্নিবেশ করিলেন। গিরিয়ার বিশাল প্রান্তর বিধৌত করিয়া প্রসন্নসলিলা ভাগীরথী কল কল • নাদে প্রবাহিতা হইতেছেন।

তাঁহার উভয় তীরে শিবির সন্নি- বেশিত হইয়াছে। সেই সমস্ত শিবিরের ধবল ছবি ভাগীরথীবক্ষে প্রতি- বিম্বিত হইয়া তরঙ্গে তরঙ্গে শত শত বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। রাত্রি প্রভাত হইলে, ঊষার বিমলচ্ছটায় চতুদিক্ উদ্ভাসিত হইতে লাগিল,-সমস্ত বিশ্বে যেন সজীবতার প্রবাহ ছুটিয়া চলিল,-বিহঙ্গনিচয়ের মধুর ঝঙ্কারে যোদ্ধৃগণের হৃদয়তন্ত্রী যেন বাজিয়া উঠিল। সূর্যদেব দিগ্বলয় আশ্রয় করিতে না করিতে উভয় পক্ষের সমরবাস্থ্য নিনাদিত হইল।

চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৬৯)

১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তাই বঙ্গকবির অমৃতবর্ষিণী লেখনীতে চিত্রিত হইয়া মোহনলালের দেবদুর্লভ চিত্র আমাদের চক্ষের সমক্ষে নৃত্য করিয়া বেড়াইতেছে। এই রূপে বাঙ্গালীর গৌরবস্থল মহারাজ নন্দকুমার অনেক ঐতিহাসিকের নিকট কৃষ্ণবর্ণে চিত্রিত হইয়াছেন। অন্য আমরা যে ক্ষুদ্র কাহিনীটির বিষয় বলিতেছি, তাহা কোন ইংরেজী ইতিহাসে দুষ্ট হয় না। কেবল তাহা দুই খানি মুসল মানী ইতিহাসে বর্ণিত হইয়াছে। ইংরেজ ঐতি- হাসিকগণ বোধ হয় ঘটনাটিকে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া উপেক্ষা করিয়া- ছেন। দুঃখের বিষয় মুতাক্ষরীনেও ইহার উল্লেখ নাই।

কেবল তারিখ বাঙ্গালা নামক ফারসী পুস্তকে ও রিয়াজুস্ সালাতীন নামক গ্রন্থে এই ক্ষুদ্র কাহিনীটি দেখিতে পাওয়া যায়। আলিবন্দী খাঁ যে সময়ে গিরিয়ার সমরক্ষেত্রে নবাব সরফরাজ খাঁকে নিহত করিয়া মুর্শিদাবাদের সিংহাসন লাভ করেন, ইহা সেই সময়ের একটি সামান্য ঘটনা মাত্র। ঘটনাটি সামান্য হইতে পারে, কিন্তু ইহাতে হিন্দুর। জাতীয়তার একটি বিশেষ প্রমাণ পাওয়া যায়।

চতুদিকে প্রজ্বলিত ভীষণ সমরানলের মধ্যে একটি নবমবর্ষীয় বালকের অদ্ভুত পিতৃভক্তি আমাদের জাতীয় ভাবের কি একটি জ্বলন্ত ছবি নহে? অন্যান্য জাতির নিকট উপেক্ষণীয় হইলেও আমাদের নিকট যে ইহা পরম গৌরবের বিষয়, তাহাতে সন্দেহ নাই। আমরা সংক্ষেপে ঘটনাটি যথাসাধ্য বর্ণন করিতে। প্রয়াস পাইতেছি। বিজয়লক্ষ্মীর বরমাল্যলাভের আশায় আলিবর্দী খাঁ ও সরফরাজ খাঁ ১৭৪০ খৃঃ অব্দের শেষ ভাগে গিরিয়া প্রান্তরে শিবির সন্নিবেশ করিলেন। গিরিয়ার বিশাল প্রান্তর বিধৌত করিয়া প্রসন্নসলিলা ভাগীরথী কল কল • নাদে প্রবাহিতা হইতেছেন।

তাঁহার উভয় তীরে শিবির সন্নি- বেশিত হইয়াছে। সেই সমস্ত শিবিরের ধবল ছবি ভাগীরথীবক্ষে প্রতি- বিম্বিত হইয়া তরঙ্গে তরঙ্গে শত শত বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। রাত্রি প্রভাত হইলে, ঊষার বিমলচ্ছটায় চতুদিক্ উদ্ভাসিত হইতে লাগিল,-সমস্ত বিশ্বে যেন সজীবতার প্রবাহ ছুটিয়া চলিল,-বিহঙ্গনিচয়ের মধুর ঝঙ্কারে যোদ্ধৃগণের হৃদয়তন্ত্রী যেন বাজিয়া উঠিল। সূর্যদেব দিগ্বলয় আশ্রয় করিতে না করিতে উভয় পক্ষের সমরবাস্থ্য নিনাদিত হইল।