১১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৮)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
  • 20

শ্রী নিখিলনাথ রায়

নবাববেগম এই রূপ অনেক স্থলে নবাবের হৃদয়দৌর্ব্বল্যের অপনোদন করিয়া, তাঁহাকে উৎসাহসহকারে কার্য্যে ব্রতী করিতেন। কি মহা- রাষ্ট্রীয়সমরে, কি আফগানযুদ্ধে সর্ব্বত্রই তিনি উপস্থিত থাকিয়া নবাবকে নানারূপ পরামর্শ দিতেন এবং সময়ে সময়ে স্বয়ং অনেক কার্য্যের ভারু লইয়া নবাবের কষ্টের ভার লঘু করিয়া তুলিতেন। যেখানে কোন গুরুতর কার্যো নবাব নিরুৎসাহ প্রায় হইতেন, নবাব-বেগম আপনি সেই স্কুলে নবাবকে উত্তেজিত করিয়া সেই কার্য্যের জন্য তাঁহাকে উং- সাহিত করিতেন। নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এইরূপে নবাব-বেগমের সহিত গাঢ়ভাবে বিজড়িত রহিয়াছে।

নবাববেগমের এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য আলিবর্দী খাঁ রাজধানী হইতে তাঁহার অনুপস্থিতি কালে অনেক সময়ে বেগমের প্রতি রাজকার্য্যের ভার প্রদান করিতেন, তজ্জন্য তিনি বাদশাহদরবার হইতে আদেশ লইয়া- ছিলেন। এই সময় হইতে মুর্শিদাবাদের গদ্দিনসীন বেগম পদের সৃষ্টি হয়। নবাব আলিবদ্দী খাঁর রাজনৈতিক জীবন যেরূপ অনেক পরিমাণে তাঁহার বেগমের সহায়তার উপর নির্ভর করিত, সেই রূপ তাঁহার প্রিয়- তম দৌহিত্র সিরাজের জীবনও বালাকাল হইতে সেই আদর্শ মহিলার বৃন্তে গঠিত হইয়াছিল। সিরাজ শৈশব’বস্থা অবধি তাঁহাদের নিকট অবস্থিতি করিতেন এবং তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রীয় ও আফগান- সমরে উপস্থিত থাকিয়া, অনেক-পরিমাণে সুশিক্ষিত ও কষ্টসহিষ্ণু হইয়া- ছিলেন।

কিন্তু তাঁহার প্রকৃতি এরূপ চঞ্চল ও বিলাসপরায়ণ ছিল যে,। আলিবর্দী খাঁ ও নবাব বেগমের সহস্র শিক্ষাসত্ত্বেও তাহা একেবারে কুপথ পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। তথাপি সিরাজের জীবনে আলিবন্দী ও তাঁহার বেগমের শিক্ষার অনেক সুফল দেখিতে পাওয়া যায়।’ তাঁহাদের শিক্ষাবলে অনেকস্থলে সিরাজ মহত্ত্বের পরিচয় দিয়াছেন। সিরাজ চঞ্চল প্রকৃতি ও বিলাসপ্রিয় হইলেও ইতিহাসে তাঁহাকে যেরূপ সয়তানের অবতার বলিয়া চিত্রিত করা হয়, তিনি সেরূপ কলুষিত- প্রকৃতি ছিলেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। আদর্শরাজনীতিবিৎ আলিবন্দী ও তাঁহার প্রতিভাশালিনী মহিষীর স্বহস্তগঠিত সিরাজ-জীবন কদাচ একেবারে ঘৃণার্হ হইতে পারে না। স্থানান্তরে আমরা এ বিষয়ের আলোচনা করিব।

ঐতিহাসিকেরা একটি ঘটনার জন্য সিরাজকে যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া থাকেন। কিন্তু তাহার কারণ জানিতে পারিলে কেহই সিরা- জকে তজ্জন্ত বিশেষরূপে দোষী করিবেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ঐতিহাসিকগণ কেবল সেই ভীষণ ঘটনাটি লোকসমক্ষে উপস্থিত করিয়া, মনের আবেগে সিরাজকে নিন্দা কারয়া গিয়াছেন। কিন্তু তাহার মূল অনুসন্ধান করিয়া দেখেন নাই; অথবা তাহা গোপন করিয়া সাধারণের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়াছেন। সাধারণ ইতিহাস পাঠকমাত্রেই অবগত আছেন যে, সিরাজউদ্দৌলা নৃশংসভাবে হোসেন কুলী খাঁর প্রাণবধ করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহার কারণ কি, সম্ভবতঃ তাহা সকলের জানিবার সুযোগ ঘটে নাই। আমরা ইহার কারণ নির্দেশ করিতেছি। কারণটিও সেই নৃশংস হত্যা অপেক্ষা কোন অংশে অল্প গুরুতর নহে।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৭৮)

১১:০০:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

নবাববেগম এই রূপ অনেক স্থলে নবাবের হৃদয়দৌর্ব্বল্যের অপনোদন করিয়া, তাঁহাকে উৎসাহসহকারে কার্য্যে ব্রতী করিতেন। কি মহা- রাষ্ট্রীয়সমরে, কি আফগানযুদ্ধে সর্ব্বত্রই তিনি উপস্থিত থাকিয়া নবাবকে নানারূপ পরামর্শ দিতেন এবং সময়ে সময়ে স্বয়ং অনেক কার্য্যের ভারু লইয়া নবাবের কষ্টের ভার লঘু করিয়া তুলিতেন। যেখানে কোন গুরুতর কার্যো নবাব নিরুৎসাহ প্রায় হইতেন, নবাব-বেগম আপনি সেই স্কুলে নবাবকে উত্তেজিত করিয়া সেই কার্য্যের জন্য তাঁহাকে উং- সাহিত করিতেন। নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্বের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এইরূপে নবাব-বেগমের সহিত গাঢ়ভাবে বিজড়িত রহিয়াছে।

নবাববেগমের এই অসাধারণ প্রতিভার জন্য আলিবর্দী খাঁ রাজধানী হইতে তাঁহার অনুপস্থিতি কালে অনেক সময়ে বেগমের প্রতি রাজকার্য্যের ভার প্রদান করিতেন, তজ্জন্য তিনি বাদশাহদরবার হইতে আদেশ লইয়া- ছিলেন। এই সময় হইতে মুর্শিদাবাদের গদ্দিনসীন বেগম পদের সৃষ্টি হয়। নবাব আলিবদ্দী খাঁর রাজনৈতিক জীবন যেরূপ অনেক পরিমাণে তাঁহার বেগমের সহায়তার উপর নির্ভর করিত, সেই রূপ তাঁহার প্রিয়- তম দৌহিত্র সিরাজের জীবনও বালাকাল হইতে সেই আদর্শ মহিলার বৃন্তে গঠিত হইয়াছিল। সিরাজ শৈশব’বস্থা অবধি তাঁহাদের নিকট অবস্থিতি করিতেন এবং তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রীয় ও আফগান- সমরে উপস্থিত থাকিয়া, অনেক-পরিমাণে সুশিক্ষিত ও কষ্টসহিষ্ণু হইয়া- ছিলেন।

কিন্তু তাঁহার প্রকৃতি এরূপ চঞ্চল ও বিলাসপরায়ণ ছিল যে,। আলিবর্দী খাঁ ও নবাব বেগমের সহস্র শিক্ষাসত্ত্বেও তাহা একেবারে কুপথ পরিত্যাগ করিতে পারে নাই। তথাপি সিরাজের জীবনে আলিবন্দী ও তাঁহার বেগমের শিক্ষার অনেক সুফল দেখিতে পাওয়া যায়।’ তাঁহাদের শিক্ষাবলে অনেকস্থলে সিরাজ মহত্ত্বের পরিচয় দিয়াছেন। সিরাজ চঞ্চল প্রকৃতি ও বিলাসপ্রিয় হইলেও ইতিহাসে তাঁহাকে যেরূপ সয়তানের অবতার বলিয়া চিত্রিত করা হয়, তিনি সেরূপ কলুষিত- প্রকৃতি ছিলেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। আদর্শরাজনীতিবিৎ আলিবন্দী ও তাঁহার প্রতিভাশালিনী মহিষীর স্বহস্তগঠিত সিরাজ-জীবন কদাচ একেবারে ঘৃণার্হ হইতে পারে না। স্থানান্তরে আমরা এ বিষয়ের আলোচনা করিব।

ঐতিহাসিকেরা একটি ঘটনার জন্য সিরাজকে যৎপরোনাস্তি নিন্দা করিয়া থাকেন। কিন্তু তাহার কারণ জানিতে পারিলে কেহই সিরা- জকে তজ্জন্ত বিশেষরূপে দোষী করিবেন না বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ঐতিহাসিকগণ কেবল সেই ভীষণ ঘটনাটি লোকসমক্ষে উপস্থিত করিয়া, মনের আবেগে সিরাজকে নিন্দা কারয়া গিয়াছেন। কিন্তু তাহার মূল অনুসন্ধান করিয়া দেখেন নাই; অথবা তাহা গোপন করিয়া সাধারণের চক্ষে ধূলি নিক্ষেপ করিয়াছেন। সাধারণ ইতিহাস পাঠকমাত্রেই অবগত আছেন যে, সিরাজউদ্দৌলা নৃশংসভাবে হোসেন কুলী খাঁর প্রাণবধ করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহার কারণ কি, সম্ভবতঃ তাহা সকলের জানিবার সুযোগ ঘটে নাই। আমরা ইহার কারণ নির্দেশ করিতেছি। কারণটিও সেই নৃশংস হত্যা অপেক্ষা কোন অংশে অল্প গুরুতর নহে।