পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল
অনুবাদ : ফওজুল করিম
নীলের আন্তর্জাতিক বাজারে চরম প্রতিযোগিতার অর্থই হল, নীল উৎপাদনে শ্রমিকের মজুরি যে যত কম দিতে পারবে সে লাভ করবে তত বেশি। নীল ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক অস্তিত্ব ও স্বার্থের জন্য যতটা সম্ভব সস্তা শ্রমের সন্ধান করত। এই কারণে নাম মাত্র দামে শ্রম কেনার জন্য শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালানো হত অমানুষিক। জুলুম করা হত ক্রীতদাসের মত।
তাই বিশ্ব জুড়ে নীল ব্যবসার নীতি হল- যত পার শোষণ কর শ্রমিককে। “এক চতুর্মুখী বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল এশীয় নীল রং-এ রঞ্জিত বস্ত্র নিয়ে। প্রথমে এই রঙিন কাপড় রফতানী করা হত ইউরোপে। তারপর ইউরোপ থেকে আবার এগুলো রফতানী করা হত পশ্চিম আফ্রিকায়। বিনিময় বাণিজ্যে ক্রীতদাস কিনতে হলে এশীয় নীল রং-এর কাপড়ের গুরুত্ব সমধিক। ওয়েষ্ট ইন্ডিজে কিংবা আমেরিকায় ইউরোপীয় নীলের খামারে যারা কাজ করত তাদের অধিকাংশই পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আনা ক্রীতদাস।
আবার আটলান্টিক পারি দিয়ে বিকিকিনির শেষ প্রান্ত ইউরোপে চালান করে বিক্রি করা হত এই ইন্ডিগো। ইউরোপীয়দের ইন্ডিগো নীলের ক্ষুধা মেটাতে নীল উৎপাদনে নিয়োজিত স্থানীয় কৃষক ও ক্রীতদাসদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের জীবনপাত করতে হত। এইসব কারণে ইন্ডিগো, নীলের ইতিহাস মানুষকে শোষণ করার বিষাদময় নীলাভ ইতিহাস। “উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নীলের বিশ্ব ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে এবার বঙ্গদেশের পালা। আবার সেই পুরানো কাহিনী, একদিকে অভূতপূর্ব বাণিজ্যিক সাফল্য অন্যদিকে করুণ মানবিক বিপর্যয়।
নীলের বিশ্ব বাণিজ্যের পটভূমিকায় বাংলাদেশে নীলচাষের করুণ পরিণতি অনুধাবনের চেষ্টা করতে হবে। পরবর্তী দুইটি পরিচ্ছেদে প্রথমতঃ আমরা বিবেচনা করব নীলের বিশ্ব বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সাম্রাজ্যবাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর দ্বিতীয়তঃ যে বাংলাদেশ নীলচাষের সঙ্গে আদৌ জড়িত ছিল না সে কি কি কারণে নীলচাষের এক উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হল, আর হঠাৎ কি করে বিশ্বের প্রধানতম নীল ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াল।
Sarakhon Report 



















