রেজাই রাব্বী
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সিনেমা হলই ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। কালে কালে তা বেশ জনপ্রিয় হয়। সিনেমা হলগুলোর স্বর্ণযুগ ছিল নব্বই দশক পর্যন্ত। এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিল বেশ সমৃদ্ধ। দর্শক উৎসবমুখর পরিবেশে হলে যেত সিনেমা দেখতে।
সিনেমা হল মানেই যেন ছিল উৎসব। নির্মাণ হতো নতুন নতুন সিনেমা হল। সিনেমা হলগুলোতে দেখা যেত উপচে পড়া ভিড়। ওই সময় হলগুলোও ছিল বেশ বড় বড়। দর্শকের চাপ ছিল বলেই হয়তো হলগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল বড় পরিসরে।

হলে সিনেমাপ্রেমীদের আনাগোনা এতটাই বেশি ছিল যে, প্রায় সময়ই ‘হাউজ ফুল’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলতো সিনেমা হলের গেটে। যুগের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে থাকে মানুষের চাহিদা। এই পরিবর্তনের সাথে ঘটে মানুষের রুচিরও।
এক যুগ আগে পুরোনো হল সংস্কার ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজার কোটি টাকা ফান্ডের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, মানুষের রুচিরও পরিবর্তন ঘটায় সিনেমা হলগুলো এখন একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। বন্ধের পথে অনেক হল। এমনকি অসংখ্য হল বন্ধও হয়েছে। কিন্তু কেন? এর কারণ কী?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর অন্যতম কারণ হলো উৎসব ছাড়া ভালো সিনেমা নির্মাণ হয় না। ফলে সিনেমা দেখা নিয়ে অন্যান্য সময় দর্শকের আগ্রহ কম থাকে। তাই সিনেমা হলে দর্শকের দেখা নেই। সারা বছরের যে মন্দা ভাব থাকে, তা শুধু ঈদের সিনেমা দিয়ে হল বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না।

ফলশ্রুতিতে সিনেমা হল বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন অন্যান্য পেশায়। গত এক দশকেরও বেশি সময়ে বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত সিনেমা হলগুলো ভেঙে কিংবা আঙ্গিক পরিবর্তন করে সুপার মার্কেট অথবা শপিংমলে রূপান্তর করা হয়েছে। নব্বই দশকে দেশে হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টির মতো। দেশে ২৫টি জেলায় এখন আর কোনো সিনেমা হল নেই। প্রযোজক, পরিবেশক ও প্রদর্শক সমিতির কাছ থেকে গত বছরের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলায় বিশের অধিক সিনেমা হল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে দেশে হলের সংখ্যা কমতে শুরু করে এখন শূন্যের কোটায়।
দেশের প্রথম ডিজিটাল সিনেমা হল ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে। এখন এমনো শোনা যায়, সিনেপ্লেক্সগুলোতে নাকি দর্শকদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সিনেমা হলের জায়গায় সিনেপ্লেক্স এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ‘রুটস সিনেক্লাব’ এর চেয়ারম্যান সামিনা ইসলাম নী’র সাথে। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ সদরে ধানবান্ধীর জেসি রোডে অবস্থিত ‘রুটস সিনেক্লাব’। ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর সিনেক্লাবটির উদ্বোধন করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৩০টির মতো সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। মোট আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের সিনেক্লাবে আসন সংখ্যা ২২টি। এতে রয়েছে কফি শপ, ফোর কে রেজ্যুলেশনের পর্দা, ডলবি অ্যাটমোস্ফিয়ার সাউন্ড সিস্টেম।
তিনি আরো বলেন, সিরাজগঞ্জ সদরে ছিল সাতটি সিনেমা হল। কিন্তু এখন কোনো সিনেমা হলই সক্রিয় নেই। কিন্তু বর্তমানে ‘রুটস সিনেক্লাব’ নামে একটি সিনেক্লাবই সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের ভরসা। সিনেপ্লেক্স ধারণাটি আধুনিক নাগরিক জীবনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একের পর এক যেখানে কমতে শুরু করেছে সিনেমা হল, সেখানে দেশের সিনেমা দর্শকের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে সিনেপ্লেক্সগুলো।