১২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে ভারতের টিকা সাম্রাজ্য: উদ্ভাবনের শক্তিতে সিরাম ইনস্টিটিউট এর বিশ্বজয় চারটি এমভিপি চারটি শিরোপা অজেয় আয়শা উইলসনের রাজত্ব লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও: পরিবর্তনের ভেতর টিকে থাকার অভিনয়শিল্পী কেপপ ডেমন হান্টার্স: আবেগ থেকে বৈশ্বিক উন্মাদনা, এক অ্যানিমেশনের অসম্ভব জয়যাত্রা ভেনিজুয়েলা প্রশ্নে ট্রাম্পে আস্থা, মাদুরো হটাতে পারলেই সব ক্ষমা ডোরালের নির্বাসিতদের কণ্ঠ যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শেষ আসিয়ান বৈঠক, আবার আলোচনায় বসছে থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডেটা সেন্টারে বড় ঝাঁপ আদানির, পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিয়েও ভাবনা হাদি হত্যায় তিন শ’ আসনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা শঙ্কা: জামায়াত চীনের নববর্ষে পর্যটনে উল্লম্ফন, ঘরোয়া ভোগ ব্যয়ে নতুন গতি

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-১৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
  • 73

মণীশ রায়

তপতী চেয়েছিল ছেলে ; কিন্তু পরপর দুটোই মেয়ে হওয়ায় সে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েছিল। কেউ বুঝতে পারেনি, শুধু তাপস ছাড়া।

তাপস ওকে বোঝাল, সন্তান কখনও ভাগযোগ হয়না, সন্তান সন্তানই।

এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ভেতর বেশ কদিন মৃদু মান-অভিমান চলেছে। কিন্তু মনের তলায় সংগোপন পুত্রক্ষুধা ঠিকই থেকে গেছে। যখন চোখের সামনে মেয়েদুটো সারাক্ষণ বাবা, বাবা করতে থাকে তখন কেন যেন তপতীর মনে হয় ওর একটা  ছেলে থাকলে হয়তো সে-ও  ওদের মতো নিশ্চয় মা মা বলে জান দিত। এটা একান্তই তপতীর ইচ্ছা, কেউ জানে না।

দুই কন্যার ভেতর তুষ্টির বাবাপ্রীতি সবচাইতে বেশি। একটা ভালো গান শুনলেও বাবাকে শুনানো চাই। একটা মজার রেসিপি টেলিভিশনের পর্দায় পেলেও বাবাকে নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়াবার জন্যে পাগল। এজন্য দরকার হলে মায়ের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া বাধিয়ে দেবে। তবু বাবার জন্যে সমস্ত কিছু যোগাড়যন্ত্র করে খাওয়ানো চাই। একটা মজার সিরিয়াল বা নাটক বা সিনেমা দেখলেও বাবার সঙ্গে শেয়ার করবে। এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বকর বকর করতেও আলস্যবোধ নেই মেয়েটার। ছোটোটাও আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা বাপের কাছে। এমন কি, লেখাপড়া করতে গিয়ে সামান্য একটি ইংরেজি বা বাংলা শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে না পারলেও বাবার কাছে দৌড়াবে। কাছে বসা মাকে জিজ্ঞাসা করবে না। এজন্য  মাঝে মাঝে অভিমান হয় তপতীর। তা সত্তে¡ও সব ভালো লাগে। সংসারে থাকতে গিয়ে সে এটাই বুঝেছে, এরাই ওর আপনজন। এদের  ঘিরেই নিজের জীবন। এদের সুখের কারণেই বিয়ের আগে স্টেনো-টাইপিস্টের যে কাজটা করত একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে, সেটি ছেড়ে দিয়েছে হাসতে হাসতে। একটাই ইচ্ছে, বাচ্চাগুলো যেন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়। স্বামী-সন্তান কেউ যেন বলতে না পারে মায়ের অবহেলার কারণে ওদের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে গেছে।

তুষ্টি বলে,‘বাপি দেখো , আমি খুব বড় চাকরি পাবো।’

‘না পেলে ?’ তপতী পাল্টা প্রশ্ন করে।

‘দেখো, আমি পাবোই। ’

‘চাকরি পেতে গেলে প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়। তুই তো ফাঁকি দিস।’ তপতী কথা বাড়াতে চায়।

তাপস সঙ্গে সঙ্গে ধমকে দেয় স্ত্রীকে,‘ও একটা স্বপ্নের কথা বলছে। তুমি কেন বারবার আটকে দিচ্ছ। খালি নিগেটিভ কথা। বাদ দাও। ’

সৃষ্টি পাশে বসে সব শুনছিল আর ভাবছিল  কী বললে দিদিকে টেক্কা দেয়া যায়। সে হাত নেড়ে বলে ওঠে,‘আমি চাকরি করতে পারব না। চাকরি তো পরের মন যুগিয়ে চলা। মা যেমন চলে। আমি ব্যবসা করব। কারো আপত্তি আছে ?’

তপতী হেসে ফেলে। উত্তর দেয়,‘ব্যবসা করতে গেলে প্রচুর পয়সা লাগে। অত পয়সা পাবি কোত্থেকে ?’

‘কেন ব্যাংক আছে না ? ’

‘ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হয়। সুদ সমেত।’ তপতী জ্ঞান ফলায়।

‘মেরে দেব। বাবার পকেট থেকে টাকা নিই না ? না দিতে পারলে কি করব? শাস্তি দিলে শাস্তি নিবো। সমস্যা কোথায় ?’

তাপস হো হো করে হেসে ওঠে। রাতে খাওয়ার টেবিলে ওদের আড্ডা জমে ওঠে।

তুষ্টি মাঝে মাঝে খাওয়ার পর একাকী ছাদে চলে আসে। তাপ বাড়ছে দিনের বেলায়। রাতেও শরীর এখন ঘামতে থাকে। তাই সে গরমের বাহানা করে কয়েক মিনিট ছাদে এসে কাটিয়ে যায়।

বাবা-মা ওকে রাতে আসতে দিতে চায় না ছাদে। কেউ না কেউ  পিছু পিছু চলে আসে। বেশির ভাগ সময় বাবাই আসে। মুখে তেমন কিছু বলে না। মাঝে মাঝে শুধু আবদার করে ,‘একটা গান শোনা মা আমায়।’

মুড থাকলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গুনগুন করে গেয়ে দেয় একটা। নইলে চুপচাপ রাতের আকাশ দেখে।

তাপসও ঘাটায় না মেয়েকে। বুঝতে পারে, মেয়ের মন-মেজাজ খিঁচড়ে রয়েছে আজ। বাড়ির কেয়ারটেকারের মতো ছাদের একোন-ওকোন ধরে পায়চারী করে বেড়ায় ।

ইদানীং তুষ্টির মনটন সারাক্ষণ খারাপ হয়ে থাকে। কিছুতেই পড়ায় মন বসে না। কোথায় যেন চলে যেতে ইচ্ছা করে। স্কুলের শিক্ষকরা চোখের সামনে এলে হাত-পা কাঁপতে থাকে। মনে হয় কিছু জিজ্ঞাসা করলে সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। আর তাতেই ওকে অপমান করার একচ্ছত্র অধিকার পেয়ে যাবে তারা। যা খুশি বলবে। যা খুশি করবে। আর পুরো শ্রেণির মেয়েগুলো ওর দিকে তাকিয়ে হাসবে। তখন অপমানটা শতগুন বেড়ে যায়। অসহায় চোখ দিয়ে সে তখন টিয়া দুটোর খোঁজ করে ফিরে।

‘তোমরা এ শহর ছেড়ে দিলে আমাকেও নিয়ে যেও। আমারও এ শহর আর ভাল লাগে না। ’

এরই ভেতর ওর বন্ধু হয়ে যাওয়া টিয়া দুটো টিঁঁউ টিউঁ করে উত্তর দেয়,‘ তুমি তো আমাদের মতন পাখনা মেলতে পারো না, কিভাবে যাবে ?’

‘ট্রেন দিয়ে, বাস দিয়ে, লঞ্চ দিয়ে যাবো তোমাদের সাথে। নেবে  তো ?’

ওরা তখন চুপ । কোন উত্তর নেই ঠোঁটে।

অর্ঘ্যরাও অন্য কোথাও চলে যাবে। সে ছাদ থেকে চেঁচিয়ে একথাটা তুষ্টিকে জানিয়েছে।

সে জিজ্ঞাসা করল ,‘ কেন যাবে ?’

‘এ পাড়ার পরিবেশে ভালো না। আমরা ধানমন্ডি চলে যাচ্ছি। ’

একথাটা শোনার পরও মনটা বিষণœ হয়ে গেল। ইদানীং অর্ঘ্যকে তুষ্টির মন্দ লাগত না। সামান্য গায়েপড়া আর বোকা। সরলও বলা যায়। আবেগ ও দরদ দিয়ে কথা বলতে পারে।

রাতের আকাশটা কেমন মনমরা দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদটা অমবস্যার দিকে এগোচ্ছে। এখন মাঝমাঝি সময়। তাই আকাশের মুখটা এখন বড়ই মলিন ; কদিন আগের সেই জ্যোতি বা উজ্জ্বলতা নেই।

তাপস এসে এসময় ওর পাশে দাঁড়ায়। দরদী গলায় বলে ওঠে,‘ লেখাপড়ায় একটু মনোযোগ দে, মা। আগে তো তুই এরকম ছিলি না রে। ’

‘আমার কিছু মনে থাকে না বাপি। আমার কিছুই ভাল লাগে না।’ বলে সে ভেঁউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে বাবার বুকে মাথা রাখে।

সৃষ্টি পিছনে দাঁড়ানো ; কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে তারাভরা নির্মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-১৩)

০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

মণীশ রায়

তপতী চেয়েছিল ছেলে ; কিন্তু পরপর দুটোই মেয়ে হওয়ায় সে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েছিল। কেউ বুঝতে পারেনি, শুধু তাপস ছাড়া।

তাপস ওকে বোঝাল, সন্তান কখনও ভাগযোগ হয়না, সন্তান সন্তানই।

এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ভেতর বেশ কদিন মৃদু মান-অভিমান চলেছে। কিন্তু মনের তলায় সংগোপন পুত্রক্ষুধা ঠিকই থেকে গেছে। যখন চোখের সামনে মেয়েদুটো সারাক্ষণ বাবা, বাবা করতে থাকে তখন কেন যেন তপতীর মনে হয় ওর একটা  ছেলে থাকলে হয়তো সে-ও  ওদের মতো নিশ্চয় মা মা বলে জান দিত। এটা একান্তই তপতীর ইচ্ছা, কেউ জানে না।

দুই কন্যার ভেতর তুষ্টির বাবাপ্রীতি সবচাইতে বেশি। একটা ভালো গান শুনলেও বাবাকে শুনানো চাই। একটা মজার রেসিপি টেলিভিশনের পর্দায় পেলেও বাবাকে নিজ হাতে বানিয়ে খাওয়াবার জন্যে পাগল। এজন্য দরকার হলে মায়ের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া বাধিয়ে দেবে। তবু বাবার জন্যে সমস্ত কিছু যোগাড়যন্ত্র করে খাওয়ানো চাই। একটা মজার সিরিয়াল বা নাটক বা সিনেমা দেখলেও বাবার সঙ্গে শেয়ার করবে। এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বকর বকর করতেও আলস্যবোধ নেই মেয়েটার। ছোটোটাও আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা বাপের কাছে। এমন কি, লেখাপড়া করতে গিয়ে সামান্য একটি ইংরেজি বা বাংলা শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে না পারলেও বাবার কাছে দৌড়াবে। কাছে বসা মাকে জিজ্ঞাসা করবে না। এজন্য  মাঝে মাঝে অভিমান হয় তপতীর। তা সত্তে¡ও সব ভালো লাগে। সংসারে থাকতে গিয়ে সে এটাই বুঝেছে, এরাই ওর আপনজন। এদের  ঘিরেই নিজের জীবন। এদের সুখের কারণেই বিয়ের আগে স্টেনো-টাইপিস্টের যে কাজটা করত একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে, সেটি ছেড়ে দিয়েছে হাসতে হাসতে। একটাই ইচ্ছে, বাচ্চাগুলো যেন লেখাপড়া শিখে মানুষ হয়। স্বামী-সন্তান কেউ যেন বলতে না পারে মায়ের অবহেলার কারণে ওদের ভবিষ্যত ধ্বংস হয়ে গেছে।

তুষ্টি বলে,‘বাপি দেখো , আমি খুব বড় চাকরি পাবো।’

‘না পেলে ?’ তপতী পাল্টা প্রশ্ন করে।

‘দেখো, আমি পাবোই। ’

‘চাকরি পেতে গেলে প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়। তুই তো ফাঁকি দিস।’ তপতী কথা বাড়াতে চায়।

তাপস সঙ্গে সঙ্গে ধমকে দেয় স্ত্রীকে,‘ও একটা স্বপ্নের কথা বলছে। তুমি কেন বারবার আটকে দিচ্ছ। খালি নিগেটিভ কথা। বাদ দাও। ’

সৃষ্টি পাশে বসে সব শুনছিল আর ভাবছিল  কী বললে দিদিকে টেক্কা দেয়া যায়। সে হাত নেড়ে বলে ওঠে,‘আমি চাকরি করতে পারব না। চাকরি তো পরের মন যুগিয়ে চলা। মা যেমন চলে। আমি ব্যবসা করব। কারো আপত্তি আছে ?’

তপতী হেসে ফেলে। উত্তর দেয়,‘ব্যবসা করতে গেলে প্রচুর পয়সা লাগে। অত পয়সা পাবি কোত্থেকে ?’

‘কেন ব্যাংক আছে না ? ’

‘ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হয়। সুদ সমেত।’ তপতী জ্ঞান ফলায়।

‘মেরে দেব। বাবার পকেট থেকে টাকা নিই না ? না দিতে পারলে কি করব? শাস্তি দিলে শাস্তি নিবো। সমস্যা কোথায় ?’

তাপস হো হো করে হেসে ওঠে। রাতে খাওয়ার টেবিলে ওদের আড্ডা জমে ওঠে।

তুষ্টি মাঝে মাঝে খাওয়ার পর একাকী ছাদে চলে আসে। তাপ বাড়ছে দিনের বেলায়। রাতেও শরীর এখন ঘামতে থাকে। তাই সে গরমের বাহানা করে কয়েক মিনিট ছাদে এসে কাটিয়ে যায়।

বাবা-মা ওকে রাতে আসতে দিতে চায় না ছাদে। কেউ না কেউ  পিছু পিছু চলে আসে। বেশির ভাগ সময় বাবাই আসে। মুখে তেমন কিছু বলে না। মাঝে মাঝে শুধু আবদার করে ,‘একটা গান শোনা মা আমায়।’

মুড থাকলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গুনগুন করে গেয়ে দেয় একটা। নইলে চুপচাপ রাতের আকাশ দেখে।

তাপসও ঘাটায় না মেয়েকে। বুঝতে পারে, মেয়ের মন-মেজাজ খিঁচড়ে রয়েছে আজ। বাড়ির কেয়ারটেকারের মতো ছাদের একোন-ওকোন ধরে পায়চারী করে বেড়ায় ।

ইদানীং তুষ্টির মনটন সারাক্ষণ খারাপ হয়ে থাকে। কিছুতেই পড়ায় মন বসে না। কোথায় যেন চলে যেতে ইচ্ছা করে। স্কুলের শিক্ষকরা চোখের সামনে এলে হাত-পা কাঁপতে থাকে। মনে হয় কিছু জিজ্ঞাসা করলে সঠিক উত্তর দিতে পারবে না। আর তাতেই ওকে অপমান করার একচ্ছত্র অধিকার পেয়ে যাবে তারা। যা খুশি বলবে। যা খুশি করবে। আর পুরো শ্রেণির মেয়েগুলো ওর দিকে তাকিয়ে হাসবে। তখন অপমানটা শতগুন বেড়ে যায়। অসহায় চোখ দিয়ে সে তখন টিয়া দুটোর খোঁজ করে ফিরে।

‘তোমরা এ শহর ছেড়ে দিলে আমাকেও নিয়ে যেও। আমারও এ শহর আর ভাল লাগে না। ’

এরই ভেতর ওর বন্ধু হয়ে যাওয়া টিয়া দুটো টিঁঁউ টিউঁ করে উত্তর দেয়,‘ তুমি তো আমাদের মতন পাখনা মেলতে পারো না, কিভাবে যাবে ?’

‘ট্রেন দিয়ে, বাস দিয়ে, লঞ্চ দিয়ে যাবো তোমাদের সাথে। নেবে  তো ?’

ওরা তখন চুপ । কোন উত্তর নেই ঠোঁটে।

অর্ঘ্যরাও অন্য কোথাও চলে যাবে। সে ছাদ থেকে চেঁচিয়ে একথাটা তুষ্টিকে জানিয়েছে।

সে জিজ্ঞাসা করল ,‘ কেন যাবে ?’

‘এ পাড়ার পরিবেশে ভালো না। আমরা ধানমন্ডি চলে যাচ্ছি। ’

একথাটা শোনার পরও মনটা বিষণœ হয়ে গেল। ইদানীং অর্ঘ্যকে তুষ্টির মন্দ লাগত না। সামান্য গায়েপড়া আর বোকা। সরলও বলা যায়। আবেগ ও দরদ দিয়ে কথা বলতে পারে।

রাতের আকাশটা কেমন মনমরা দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদটা অমবস্যার দিকে এগোচ্ছে। এখন মাঝমাঝি সময়। তাই আকাশের মুখটা এখন বড়ই মলিন ; কদিন আগের সেই জ্যোতি বা উজ্জ্বলতা নেই।

তাপস এসে এসময় ওর পাশে দাঁড়ায়। দরদী গলায় বলে ওঠে,‘ লেখাপড়ায় একটু মনোযোগ দে, মা। আগে তো তুই এরকম ছিলি না রে। ’

‘আমার কিছু মনে থাকে না বাপি। আমার কিছুই ভাল লাগে না।’ বলে সে ভেঁউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে বাবার বুকে মাথা রাখে।

সৃষ্টি পিছনে দাঁড়ানো ; কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে তারাভরা নির্মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।