০২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-২০)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • 18

মণীশ রায়

ছয়তলার ছাদ থেকে কড়ই গাছটার মগডালটা স্পষ্ট চোখে পড়ে। প্রচÐ গরম। একটা পাতা পর্যন্ত নড়ে না। সেই হাওয়াহীন বৃষ্টিহীন নিদাঘ দুপুরবেলায় তুষ্টির পরিচিত দুটো টিয়া জবুথবু হয়ে পাতার আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে। প্রচÐ উত্তাপে ডাকতেও ভুলে গেছে ওরা।

তুষ্টি ওর কান্না সজল চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,‘তোমরা যেখানে যাবে, আমাকে নিয়ে যাবে? আমার আর কিছু ভাল লাগছে না।’ বলেই ঝরঝর করে কাঁদতে থাকে সে। ওর চোখের সামনে ওর বাবার অসহায় যন্ত্রণাকাতর চেহারাটা বারবার করে ভেসে উঠছে। বাবাকে যত দেখছে তত নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে। একসময় মনে হয়, সে শূন্যে ভাসছে। একদম হালকা হয়ে পড়েছে শরীর।

পাখি দুটো অনেক্ষণ থেকে ওকে দেখছে। একটু বাদে ছুটে এসে ছাদের  কার্নিশে  ইতিউতি করতে থাকে।

ওরা একসঙ্গে টিঁউ টিঁউ করে বলে,‘ আমরা চলে যাচ্ছি, তুষ্টি। এ অভিশপ্ত নগরে আর থাকবো না। এখানে কেউ ভালবাসতে জানে না। ’

‘আমাকে নিয়ে যাও।’ ফিসফিস করে উত্তর দেয় সে,‘ আমার আর ভাল লাগে না এখানে। ’

ওরা পরস্পরের ভেতর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে উত্তর দেয়,‘ আমাদের ডানাগুলো অনেক ছোট। তোমাকে নিতে পারবো না ভাই। যদি পারতাম, তবে অবশ্যই তোমাকেসহ আমরা উড়ে যেতাম। তুমি এখানে বেমানান। ’

‘তোমরা কোথায় যাবে ?’

‘দূরের কোন পাহাড়ে, যেখানে প্রচুর খাবার আছে, ঘুম আসে চোখ বুজলেই, প্রচুর ঠান্ডা আর বুকভরা প্রশান্তি। যেখানে আমাদের আরও বন্ধুরা থাকে। আত্মীয়-পরিজন সবাই। ঠিক সেখানে। ’

‘আমি যাব।’ আর্তনাদ করে ওঠে তুষ্টি।

‘তুমি পাখি নও। যেতে পরবে না। গেলেও তোমাকে আপন ভাববে না কেউ। বড় হয়ে তুমিও অন্যদেও মতো নির্দয় হয়ে পড়বে। মানুষ এরকমই। তোমরা আমাদের বন্দি করে ভালোবাসার অভিনয় করো। তোমাদের জানা আছে। ’ পাখিদের গলায় অভিমান।

‘আমি পাখি হব। হিংসুটে মানুষের ভেতর আর থাকতে চাই না। আমাকে নিয়ে চল।’ কাতরভাবে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে তুষ্টি। ওর ঠোঁট দুটি অবিরাম নড়তে থাকে। ওর চোখের সামনে থেকে সবকিছু উধাও হয়ে যায়।

এসময় সহসা অর্ঘ্যের কথা মনে পড়ে ওর। পাখিদের মতন দূরে কোথাও চলে গেলে আর কোনোদিন অর্ঘ্যের সঙ্গেও দেখা হবে না। অর্ঘ্যরে নির্মল নিষ্কলুষ চোখ দুটি খুব ওকে টানছে।

অর্ঘ্য যে কোনোকিছু না বলেও অনেক কথা বলতে জানে ওর দৃষ্টি দিয়ে!

ওর কণ্ঠের একটা-দুটো শব্দ আর চাহনি তুষ্টিকে অন্যরকম শান্তি দেয়। সম্মোহিত করে রাখে ওের সমস্ত সত্তা !

তুষ্টির চোখ বেয়ে জল গড়ায়। নিঃশব্দে তুষ্টি নিচে নেমে আসে ।

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-২০)

০৮:০০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

মণীশ রায়

ছয়তলার ছাদ থেকে কড়ই গাছটার মগডালটা স্পষ্ট চোখে পড়ে। প্রচÐ গরম। একটা পাতা পর্যন্ত নড়ে না। সেই হাওয়াহীন বৃষ্টিহীন নিদাঘ দুপুরবেলায় তুষ্টির পরিচিত দুটো টিয়া জবুথবু হয়ে পাতার আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে। প্রচÐ উত্তাপে ডাকতেও ভুলে গেছে ওরা।

তুষ্টি ওর কান্না সজল চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,‘তোমরা যেখানে যাবে, আমাকে নিয়ে যাবে? আমার আর কিছু ভাল লাগছে না।’ বলেই ঝরঝর করে কাঁদতে থাকে সে। ওর চোখের সামনে ওর বাবার অসহায় যন্ত্রণাকাতর চেহারাটা বারবার করে ভেসে উঠছে। বাবাকে যত দেখছে তত নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারাতে থাকে। একসময় মনে হয়, সে শূন্যে ভাসছে। একদম হালকা হয়ে পড়েছে শরীর।

পাখি দুটো অনেক্ষণ থেকে ওকে দেখছে। একটু বাদে ছুটে এসে ছাদের  কার্নিশে  ইতিউতি করতে থাকে।

ওরা একসঙ্গে টিঁউ টিঁউ করে বলে,‘ আমরা চলে যাচ্ছি, তুষ্টি। এ অভিশপ্ত নগরে আর থাকবো না। এখানে কেউ ভালবাসতে জানে না। ’

‘আমাকে নিয়ে যাও।’ ফিসফিস করে উত্তর দেয় সে,‘ আমার আর ভাল লাগে না এখানে। ’

ওরা পরস্পরের ভেতর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে উত্তর দেয়,‘ আমাদের ডানাগুলো অনেক ছোট। তোমাকে নিতে পারবো না ভাই। যদি পারতাম, তবে অবশ্যই তোমাকেসহ আমরা উড়ে যেতাম। তুমি এখানে বেমানান। ’

‘তোমরা কোথায় যাবে ?’

‘দূরের কোন পাহাড়ে, যেখানে প্রচুর খাবার আছে, ঘুম আসে চোখ বুজলেই, প্রচুর ঠান্ডা আর বুকভরা প্রশান্তি। যেখানে আমাদের আরও বন্ধুরা থাকে। আত্মীয়-পরিজন সবাই। ঠিক সেখানে। ’

‘আমি যাব।’ আর্তনাদ করে ওঠে তুষ্টি।

‘তুমি পাখি নও। যেতে পরবে না। গেলেও তোমাকে আপন ভাববে না কেউ। বড় হয়ে তুমিও অন্যদেও মতো নির্দয় হয়ে পড়বে। মানুষ এরকমই। তোমরা আমাদের বন্দি করে ভালোবাসার অভিনয় করো। তোমাদের জানা আছে। ’ পাখিদের গলায় অভিমান।

‘আমি পাখি হব। হিংসুটে মানুষের ভেতর আর থাকতে চাই না। আমাকে নিয়ে চল।’ কাতরভাবে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে তুষ্টি। ওর ঠোঁট দুটি অবিরাম নড়তে থাকে। ওর চোখের সামনে থেকে সবকিছু উধাও হয়ে যায়।

এসময় সহসা অর্ঘ্যের কথা মনে পড়ে ওর। পাখিদের মতন দূরে কোথাও চলে গেলে আর কোনোদিন অর্ঘ্যের সঙ্গেও দেখা হবে না। অর্ঘ্যরে নির্মল নিষ্কলুষ চোখ দুটি খুব ওকে টানছে।

অর্ঘ্য যে কোনোকিছু না বলেও অনেক কথা বলতে জানে ওর দৃষ্টি দিয়ে!

ওর কণ্ঠের একটা-দুটো শব্দ আর চাহনি তুষ্টিকে অন্যরকম শান্তি দেয়। সম্মোহিত করে রাখে ওের সমস্ত সত্তা !

তুষ্টির চোখ বেয়ে জল গড়ায়। নিঃশব্দে তুষ্টি নিচে নেমে আসে ।