১০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ঢাকায় কত প্রকারের মসলিন ছিলো (৩য় কিস্তি)

  • Sarakhon Report
  • ০২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • 18

শিবলী আহম্মেদ সুজন

 খাসা

খাসা ফার্সী শব্দ এবং এর দ্বারা অত্যন্ত মিহি ও সরু মসলিনকে বুঝায়।. এ কাপড় ঘন বুননীর জন্য বিখ্যাত ছিল। এর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরীতে’। ঐ সময় সোনারগাঁও কাপড় তৈরীর জন্য বিখ্যাত ছিল। আঠার ও উনিশ শতকে খাসা মসলিনের মধ্যে জঙ্গল খাসা শ্রেষ্ঠ বলে পরিচিত ছিল এবং জঙ্গলবাড়ীর তাঁতিরা এর বুননের জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল। ইংরেজ কোম্পানীর কাগজপত্রে একে কুষা [খাসার বিকৃত রূপ] বা জঙ্গলকুষা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২০ গজ এবং চওড়া ১ গজ ছিল, এর সুতার সংখ্যা ১৪০০ থেকে ২৮০০ পর্যন্ত উঠা-নামা করত। ২৮০০ সুতা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল খাসা মসলিনের ওজন ছিল প্রায় ২০ তোলা। সেটাও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল।

শবনম

শবনমও অত্যন্ত মিহি বুননী বিশিষ্ট মসলিন। এ কাপড় এত পাতলা ছিল যে, তাঁতিরা একে শবনম বা ‘ভোর বেলার শিশির’ নাম দিয়েছিল। শবনম মসলিন তৈরী হওয়ার পর ধোওয়ার সময় সকাল বেলায় ঘাসের উপর শুকাতে দিলে শিশির এবং এর পার্থক্য বুঝা কষ্টকর ছিল এবং তাই এর নাম দেওয়া হয়েছিল শবনম। শবনমও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল এবং জামা-কাপড় তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হত। শবনম দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও চওড়ায় ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ৭০০ থেকে ১৪০০ শত পর্যন্ত উঠা-নামা করত। সাধারণতঃ একটি শবনমের ওজন ছিল প্রায় ২০ থেকে ২২ তোলা।

আলিবালি

আলিবালি বা আলাবালি শব্দের মূল নির্ণয় করা কঠিন। তাঁতিদের মতে অত্যন্ত সূক্ষ্মতার জন্য একে আলিবালি নাম দেওয়া হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ২০ গজ ও চওড়া ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ১১০০ থেকে ১৯০০ শত পর্যন্ত উঠা- নামা করত। এর ওজন ছিল প্রায় ৪০ তোলা।

 তনজেব

ফাসী শব্দ তন (দেহ) ও জেব (অলঙ্কার) থেকে তন-জেব শব্দের উৎপত্তি এবং এর মোটামুটি অর্থ দাঁড়ায় ‘দেহের অলঙ্কার’, বা ‘দেহের সৌন্দর্য  বৃদ্ধি। তন-জেবও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল এবং পোশাক ইত্যাদি তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হত। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও প্রস্থে ১ গজ ছিল। এর সুতার সংখ্যা ৮০০ থেকে ১৯০০ শত পর্যন্ত উঠা-নামা করত এবং এর ওজন ২০ থেকে ৪০ তোলা পর্যন্ত উঠা-নামা করত।

তরান্দাম

তরান্দাম শব্দ আরবী তরাহ্ (মত) এবং ফার্সী আন্দাম (দেহ) থেকে উদ্ভুত বলেই মনে হয়। এ হিসাবে বিচার করলে শব্দটির বিশেষ কোন অর্থ হয়না, কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় শরীরের জন্য কপড়, কিন্তু যে কোন কাপড়ই শরীরের জন্য। তবে এর অর্থ এই হতে পারে যে, তরান্দাম শুধু  পড়ার বস্ত্র বা জামা রূপেই ব্যবহৃত হত এবং এই সূত্রে অন্য কাপড় যেমন, সর-বন্দ (মাথা-বন্দ বা পাগড়ী) থেকে এর পার্থক্য বুঝায়। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ এবং চওড়ায় ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ২৭০০ পর্যন্ত থাকত। এর ওজন ৪০ থেকে ৮০ তোলা পর্যান্ত উঠা- নামা করত।

নয়নসুখ

নয়ন-সুখ শব্দ নয়ন (চক্ষু) এবং সুখ শব্দ থেকে উৎপন্ন। আইন-ই- আকবরীতে তন-সুখ (তন শব্দের অর্থ শরীর) নামে এক প্রকারের কাপড়ের উল্লেখ আছে। সম্ভবতঃ আইন-ই-আকবরীর তন-সুখ ও পরবর্তী কালের নয়ন- সুখ একই কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন নাম। এটি অত্যন্ত মিহি বুননীর জন্য বিখ্যাত ছিল এবং নয়ন-সুখ গলাবন্দ রুমাল (neck-kerchief) রূপে ব্যবহৃত হত। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ এবং চওড়ায় দেড় গজ ছিল। এর সুতার সংখ্যা ২২০০ থেকে ২৭০০ পর্যন্ত উঠা-নামা করত।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবদুল করিম-এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

ঢাকায় কত প্রকারের মসলিন ছিলো (৩য় কিস্তি)

০২:০৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

শিবলী আহম্মেদ সুজন

 খাসা

খাসা ফার্সী শব্দ এবং এর দ্বারা অত্যন্ত মিহি ও সরু মসলিনকে বুঝায়।. এ কাপড় ঘন বুননীর জন্য বিখ্যাত ছিল। এর প্রথম পরিচয় পাওয়া যায় আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরীতে’। ঐ সময় সোনারগাঁও কাপড় তৈরীর জন্য বিখ্যাত ছিল। আঠার ও উনিশ শতকে খাসা মসলিনের মধ্যে জঙ্গল খাসা শ্রেষ্ঠ বলে পরিচিত ছিল এবং জঙ্গলবাড়ীর তাঁতিরা এর বুননের জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল। ইংরেজ কোম্পানীর কাগজপত্রে একে কুষা [খাসার বিকৃত রূপ] বা জঙ্গলকুষা নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২০ গজ এবং চওড়া ১ গজ ছিল, এর সুতার সংখ্যা ১৪০০ থেকে ২৮০০ পর্যন্ত উঠা-নামা করত। ২৮০০ সুতা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল খাসা মসলিনের ওজন ছিল প্রায় ২০ তোলা। সেটাও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল।

শবনম

শবনমও অত্যন্ত মিহি বুননী বিশিষ্ট মসলিন। এ কাপড় এত পাতলা ছিল যে, তাঁতিরা একে শবনম বা ‘ভোর বেলার শিশির’ নাম দিয়েছিল। শবনম মসলিন তৈরী হওয়ার পর ধোওয়ার সময় সকাল বেলায় ঘাসের উপর শুকাতে দিলে শিশির এবং এর পার্থক্য বুঝা কষ্টকর ছিল এবং তাই এর নাম দেওয়া হয়েছিল শবনম। শবনমও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল এবং জামা-কাপড় তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হত। শবনম দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও চওড়ায় ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ৭০০ থেকে ১৪০০ শত পর্যন্ত উঠা-নামা করত। সাধারণতঃ একটি শবনমের ওজন ছিল প্রায় ২০ থেকে ২২ তোলা।

আলিবালি

আলিবালি বা আলাবালি শব্দের মূল নির্ণয় করা কঠিন। তাঁতিদের মতে অত্যন্ত সূক্ষ্মতার জন্য একে আলিবালি নাম দেওয়া হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ২০ গজ ও চওড়া ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ১১০০ থেকে ১৯০০ শত পর্যন্ত উঠা- নামা করত। এর ওজন ছিল প্রায় ৪০ তোলা।

 তনজেব

ফাসী শব্দ তন (দেহ) ও জেব (অলঙ্কার) থেকে তন-জেব শব্দের উৎপত্তি এবং এর মোটামুটি অর্থ দাঁড়ায় ‘দেহের অলঙ্কার’, বা ‘দেহের সৌন্দর্য  বৃদ্ধি। তন-জেবও সাদা জমিন বিশিষ্ট কাপড় ছিল এবং পোশাক ইত্যাদি তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হত। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ ও প্রস্থে ১ গজ ছিল। এর সুতার সংখ্যা ৮০০ থেকে ১৯০০ শত পর্যন্ত উঠা-নামা করত এবং এর ওজন ২০ থেকে ৪০ তোলা পর্যন্ত উঠা-নামা করত।

তরান্দাম

তরান্দাম শব্দ আরবী তরাহ্ (মত) এবং ফার্সী আন্দাম (দেহ) থেকে উদ্ভুত বলেই মনে হয়। এ হিসাবে বিচার করলে শব্দটির বিশেষ কোন অর্থ হয়না, কারণ এর অর্থ দাঁড়ায় শরীরের জন্য কপড়, কিন্তু যে কোন কাপড়ই শরীরের জন্য। তবে এর অর্থ এই হতে পারে যে, তরান্দাম শুধু  পড়ার বস্ত্র বা জামা রূপেই ব্যবহৃত হত এবং এই সূত্রে অন্য কাপড় যেমন, সর-বন্দ (মাথা-বন্দ বা পাগড়ী) থেকে এর পার্থক্য বুঝায়। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ এবং চওড়ায় ১ গজ ছিল এবং এর সুতার সংখ্যা ২৭০০ পর্যন্ত থাকত। এর ওজন ৪০ থেকে ৮০ তোলা পর্যান্ত উঠা- নামা করত।

নয়নসুখ

নয়ন-সুখ শব্দ নয়ন (চক্ষু) এবং সুখ শব্দ থেকে উৎপন্ন। আইন-ই- আকবরীতে তন-সুখ (তন শব্দের অর্থ শরীর) নামে এক প্রকারের কাপড়ের উল্লেখ আছে। সম্ভবতঃ আইন-ই-আকবরীর তন-সুখ ও পরবর্তী কালের নয়ন- সুখ একই কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন নাম। এটি অত্যন্ত মিহি বুননীর জন্য বিখ্যাত ছিল এবং নয়ন-সুখ গলাবন্দ রুমাল (neck-kerchief) রূপে ব্যবহৃত হত। এটির দৈর্ঘ্যে ২০ গজ এবং চওড়ায় দেড় গজ ছিল। এর সুতার সংখ্যা ২২০০ থেকে ২৭০০ পর্যন্ত উঠা-নামা করত।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আবদুল করিম-এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।