শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১০৮)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

স্বর্গ ও মর্ত উভয়েরই উপকরণ লইয়া নারীহৃদয় গঠিত। যাঁহারা তন্ন তন্ন রূপে নারীহৃদয় অনুশীলন করিয়াছেন, তাঁহারা সবিশেষ অব- গত আছেন যে, নারীর অর্দ্ধেক হৃদয় সংসারের ক্ষণস্থায়ী মোহ ও চাঞ্চল্যে বিজড়িত; কিন্তু অপরাদ্ধ ত্রিদিবসুলভ অক্ষয় মেহ ও কারুণ্যে পরিপূর্ণ। তাহার এক ধারে পৃথিবীর ছায়াময়ী ছেলেখেলা শারদাকাশের বিচিত্র মেঘচূর্ণের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়ায়, অন্য ধারে অপার্থিব আত্মত্যাগ ও সহিষ্ণুতা উজ্জল অথচ স্নিগ্ধ আলোকে বিশ্বকে চিরপ্রভাময় করিয়া রাখে। নারীহৃদয়রূপ কুসুমিত কাননের এক দিকে মল্লিকা কামিনী প্রভৃতি পুষ্পরাশি ফুটিতে না ফুটিতে ঝরিয়া পড়ে, অন্যদিকে চিরসুরভি পারিজাত অনন্তকাল ধরিয়া সমীরপ্রবাহের প্রত্যেক পরমাণু সুবাসিত করিতে থাকে।

এই দুই ভাবের সুন্দর সামঞ্জস্য টুকু বুঝিতে পারিলেই প্রকৃত রমণীহৃদয় বুঝা যায়। যুগপৎ এই দুই ভাবের বিকাশ কখন ঘটিয়া উঠে না। যে সময়ে মনুষ্য বিলাসলালসায় বিভোর হইয়া রমণীহৃদয় দেখিতে ইচ্ছা করে, সে সময়ে কেবল ইহার পার্থিব ভাবই দেখিতে পায়; কিন্তু ইহার স্বর্গীয় সৌরভের আঘ্রাণ করিতে হইলে, দুঃখ ও নিরাশার মহাশূন্যপথে জীবনকে ছুটাইয়া দিতে হয়। তীরে বসিয়া কেবল সমুদ্র- লহরীর লীলাচাঞ্চল্য দেখিতে পাওয়া যায়; কিন্তু রত্ন সংগ্রহ করিতে হইলে, তাহার সুগভীর অন্তস্তলে প্রবেশ করাই আবশ্যক। কণ্ঠস্বীকার ব্যতীত কে কবে রত্নরাজি-সমাকীর্ণ-স্নিগ্ধজ্যোতির্ময়ী সাগরগভীরতা বুঝিতে সমর্থ হইয়াছে?

নারীহৃদয়ের এই স্বর্গীয় ভাবে জগতের সর্ব্বজাতির সাহিত্য অলঙ্কত। হইয়া রহিয়াছে; কেবল সাহিত্য উপন্যাস নহে,-ইতিহাসও ইহাকে সমাদরে নিজ হৃদয়ে স্থান দিয়াছে। বর্তমান প্রবন্ধে আমরা সেই স্বর্গীয় ভাবের একটি ছায়ামাত্র প্রদান করিতে ইচ্ছা করিয়াছি। ইহা কল্পনা-প্রসূত নহে; প্রকৃত ঐতিহাসিকতত্ত্ব। বঙ্গবাসীর মধ্যে সিরাজ উদ্দৌ- লার নাম কাহারও অবিদিত নাই; আমরা যাঁহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করিতে উপস্থিত, তিনি সেই নবাব সিরাজ উদ্দৌলার প্রিয়তমা মহিষী লুংফ উন্নেসা।

• লুৎফ উন্নেসা মানবী হইয়াও দেবী; তাঁহার সেই পবিত্র দেবভাবে হতভাগ্য সিরাজ আপনার তাপদগ্ধ জীবনে কিঞ্চিৎ শান্তি লাভ করিতে পারিয়াছিলেন। লুৎফ উন্নেসা ছায়ার ন্যায় সিরাজের অনুবর্তন করিতেন; কি সম্পদে কি বিপদে, লুৎফ উন্নেসা কখনও সিরাজকে পরি- ত্যাগ করেন নাই। যখন সিরাজ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার যুবরাজ হইয়া আমোদতরঙ্গে গা ঢালিয়া দিতেন, তখনও লুৎফ উন্নেসা তাঁহার সহচরী, আবার যখন রাজ্যভ্রষ্ট হইয়া তেজোহীন-আভাহীন-কক্ষচ্যুত গ্রহের ন্যার পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছিলেন, তখনও লুৎফ উন্নেসা তাঁহারই অনুবর্তিনী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024