০২:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-১৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • 17

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-৭

হ্যাঁ, অ্যাম্বুলেন্স গাড়িই ছুটে আসছে। যাচ্ছে কোথায়? বিপদে-পড়া কোনো লোকের কাছে। নাকি কাজ সেরে ডিপোয় ফিরছে? নাকি ওর টেলিফোন পেয়ে

ঠিকানা না জেনেও ছুটে আসছে জখম যোদ্ধার সাহায্যে? আওয়াজ বেড়ে উঠছে হর্নের। কখনো আকাশে উঠে যাচ্ছে, কখনো সোজা নেমে আসছে নিচে। যেন যুদ্ধের সময়কার সাইরেন।

কিন্তু লাল-কুশ-আঁকা, প্রায় উড়ে-চলা এই গাড়িটা যদি সামনে দিয়েই চলে যায়?

দাঁড় করাতে হবে ওকে।

মন ঠিক করে নিলে ছেলেটা। রাস্তার মাঝখানে ছুটে গিয়ে সে গাড়ির পথ আটকে দাঁড়াল। গাড়িটা তখন ছেলেটার কাছ থেকে বেশি দূরে নয়। প্রতি মুহর্তে, সে ব্যবধান কমে আসছে। সাইরেন বাজছে কর্ণভেদী। চড়ায় উঠে আর নামছেই না।

আতঙ্ক জাগে তাতে। চোখ বুজে ফেললে ছেলেটা, কিন্তু জায়গা থেকে নড়লে না। হঠাৎ চুপ করে গেল সাইরেন। ঘচাং করে ব্রেক কষল গাড়িটা। রাস্তাটা ছিল পেছল, ছিটকে গেল গাড়িটা।

স্কেটস্ বগলে ছেলেটা যখন চোখ মেললে, দেখা গেল রাস্তার আড়াআড়ি ঘুরে গিয়ে একেবারে কাছেই দাঁড়িয়ে আছে সেটা। হাট করে দরজা খুলে লাফিয়ে নামল চকচকে টুপি পরা ফ্যাকাশে ড্রাইভার। উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে সে ছেলেটার কাছে ছুটে এসে হাত তুলেছিল মারবার জন্যে। তবে সামলে নিলে, মারলে না। শুধু হড়বড় করে ধমক দিলে এলোমেলো:

‘নিকুচি করেছে তোর। হতচ্ছাড়া!.. মরার সাধ হয়েছে? গাড়ির সামনে লাফিয়ে আসিস! বীরপুরুষ!’

তবে নিজেরই বিহ্বলতার বর্মে ছেলেটা বে’চে গেল। গালাগালিগুলো তার গায়েই লাগল না। যখন দম ফুরিয়ে গেল ড্রাইভারের, নিশ্বাস নেবার জন্যে একটু চুপ করলে, ছেলেটা তখন চোখ না তুলেই বললে: ‘একটা লোক মারা যাচ্ছে।’

‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভার। সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল সে, মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের ডিউটি।

‘আমি দেখিয়ে দেব,’ বললে ছেলেটা।

ভুরু, কোঁচকালে ড্রাইভার। অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সবকিছুর জন্যেই তৈরি থাকতে হয়। কিন্তু এমনটা সে ভাবে নি।

পকেট থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বার করলে সে, মুখে নিয়ে একটা ধরালে লাইটার দিয়ে। লাইটারটা দেখা যাচ্ছিল না, মনে হল নিজের মুঠো থেকেই সে আগুন বার করছে।

‘চল ডাক্তারের কাছে,’ বললে ড্রাইভার, ‘সে যা বলবে তাই হবে।’

ছেলেটা আর ড্রাইভারটা যখন গাড়িটার কাছে এল, তখন সেখানে ভিড় জমতে শুরু করেছে। অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে আছে এতে অলস কৌতূহলীদের না টেনে পারে না। ভিড় করে তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করছিল:

‘কী ব্যাপার?’

‘কী হয়েছে, বলুন তো?’

‘কেউ চাপা পড়েছে নাকি?’

কিন্তু রাস্তায় কেউ পড়ে ছিল না, গাড়ির কাছে এগিয়ে এল শুধু চকচকে টুপি পরা ড্রাইভার আর স্কেটস্ বগলে ল্যাগবেগে একটা ছেলে।

‘আর্সেনি ইভানভিচ,’ খোলা দরজাটায় উ’কি দিয়ে বললে ড্রাইভার, ‘এই ছেলেটির বাবার অবস্থা খারাপ। আমাদেরও আর কোনো কল্ নেই। যাব নাকি?’ ‘কী হয়েছে ওঁর?’ জলদ গলায় কেবিন থেকে জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার।

ছেলেটার ইচ্ছে হয়েছিল যে বলে, ড্রাইভারের ভুল হয়েছে, জখম যোদ্ধা মোটেই তার বাবা নয়, অচেনা লোক। তবে তখন ওসব বোঝাবার সময় নেই। তাই পরিষ্কার করে জোর দিয়ে সে বললে:

‘অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। জখম লোক। শেলের টুকরো নড়ে উঠেছে বুকে।’ ‘যাওয়া যাক!’ রায় দিলে ডাক্তার।

কেবিনে উঠে বসল ড্রাইভার আর ছেলেটা। সাইরেন বেজে উঠে ভাগিয়ে দিলে অলস কৌতূহলীদের। আর লাফ দেওয়ার আগে ঘোড়ার মতো পেছনের চাকায় একবার ভর দিয়ে সামনে ছুটল অ্যাম্বুলেন্স।

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-১৮)

০৪:০০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-৭

হ্যাঁ, অ্যাম্বুলেন্স গাড়িই ছুটে আসছে। যাচ্ছে কোথায়? বিপদে-পড়া কোনো লোকের কাছে। নাকি কাজ সেরে ডিপোয় ফিরছে? নাকি ওর টেলিফোন পেয়ে

ঠিকানা না জেনেও ছুটে আসছে জখম যোদ্ধার সাহায্যে? আওয়াজ বেড়ে উঠছে হর্নের। কখনো আকাশে উঠে যাচ্ছে, কখনো সোজা নেমে আসছে নিচে। যেন যুদ্ধের সময়কার সাইরেন।

কিন্তু লাল-কুশ-আঁকা, প্রায় উড়ে-চলা এই গাড়িটা যদি সামনে দিয়েই চলে যায়?

দাঁড় করাতে হবে ওকে।

মন ঠিক করে নিলে ছেলেটা। রাস্তার মাঝখানে ছুটে গিয়ে সে গাড়ির পথ আটকে দাঁড়াল। গাড়িটা তখন ছেলেটার কাছ থেকে বেশি দূরে নয়। প্রতি মুহর্তে, সে ব্যবধান কমে আসছে। সাইরেন বাজছে কর্ণভেদী। চড়ায় উঠে আর নামছেই না।

আতঙ্ক জাগে তাতে। চোখ বুজে ফেললে ছেলেটা, কিন্তু জায়গা থেকে নড়লে না। হঠাৎ চুপ করে গেল সাইরেন। ঘচাং করে ব্রেক কষল গাড়িটা। রাস্তাটা ছিল পেছল, ছিটকে গেল গাড়িটা।

স্কেটস্ বগলে ছেলেটা যখন চোখ মেললে, দেখা গেল রাস্তার আড়াআড়ি ঘুরে গিয়ে একেবারে কাছেই দাঁড়িয়ে আছে সেটা। হাট করে দরজা খুলে লাফিয়ে নামল চকচকে টুপি পরা ফ্যাকাশে ড্রাইভার। উত্তেজনায় হাঁপাতে হাঁপাতে সে ছেলেটার কাছে ছুটে এসে হাত তুলেছিল মারবার জন্যে। তবে সামলে নিলে, মারলে না। শুধু হড়বড় করে ধমক দিলে এলোমেলো:

‘নিকুচি করেছে তোর। হতচ্ছাড়া!.. মরার সাধ হয়েছে? গাড়ির সামনে লাফিয়ে আসিস! বীরপুরুষ!’

তবে নিজেরই বিহ্বলতার বর্মে ছেলেটা বে’চে গেল। গালাগালিগুলো তার গায়েই লাগল না। যখন দম ফুরিয়ে গেল ড্রাইভারের, নিশ্বাস নেবার জন্যে একটু চুপ করলে, ছেলেটা তখন চোখ না তুলেই বললে: ‘একটা লোক মারা যাচ্ছে।’

‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করলে ড্রাইভার। সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল সে, মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের ডিউটি।

‘আমি দেখিয়ে দেব,’ বললে ছেলেটা।

ভুরু, কোঁচকালে ড্রাইভার। অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সবকিছুর জন্যেই তৈরি থাকতে হয়। কিন্তু এমনটা সে ভাবে নি।

পকেট থেকে এক প্যাকেট সিগারেট বার করলে সে, মুখে নিয়ে একটা ধরালে লাইটার দিয়ে। লাইটারটা দেখা যাচ্ছিল না, মনে হল নিজের মুঠো থেকেই সে আগুন বার করছে।

‘চল ডাক্তারের কাছে,’ বললে ড্রাইভার, ‘সে যা বলবে তাই হবে।’

ছেলেটা আর ড্রাইভারটা যখন গাড়িটার কাছে এল, তখন সেখানে ভিড় জমতে শুরু করেছে। অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে আছে এতে অলস কৌতূহলীদের না টেনে পারে না। ভিড় করে তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করছিল:

‘কী ব্যাপার?’

‘কী হয়েছে, বলুন তো?’

‘কেউ চাপা পড়েছে নাকি?’

কিন্তু রাস্তায় কেউ পড়ে ছিল না, গাড়ির কাছে এগিয়ে এল শুধু চকচকে টুপি পরা ড্রাইভার আর স্কেটস্ বগলে ল্যাগবেগে একটা ছেলে।

‘আর্সেনি ইভানভিচ,’ খোলা দরজাটায় উ’কি দিয়ে বললে ড্রাইভার, ‘এই ছেলেটির বাবার অবস্থা খারাপ। আমাদেরও আর কোনো কল্ নেই। যাব নাকি?’ ‘কী হয়েছে ওঁর?’ জলদ গলায় কেবিন থেকে জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার।

ছেলেটার ইচ্ছে হয়েছিল যে বলে, ড্রাইভারের ভুল হয়েছে, জখম যোদ্ধা মোটেই তার বাবা নয়, অচেনা লোক। তবে তখন ওসব বোঝাবার সময় নেই। তাই পরিষ্কার করে জোর দিয়ে সে বললে:

‘অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। জখম লোক। শেলের টুকরো নড়ে উঠেছে বুকে।’ ‘যাওয়া যাক!’ রায় দিলে ডাক্তার।

কেবিনে উঠে বসল ড্রাইভার আর ছেলেটা। সাইরেন বেজে উঠে ভাগিয়ে দিলে অলস কৌতূহলীদের। আর লাফ দেওয়ার আগে ঘোড়ার মতো পেছনের চাকায় একবার ভর দিয়ে সামনে ছুটল অ্যাম্বুলেন্স।