০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

জীবন আমার বোন (পর্ব-৫০)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
  • 17

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘ড্যাবড্যাব ক’রে আমার বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবি না, ভালো হবে না।’

‘অমন বিদকুটে সং সেজেছিস কেন?’

‘আমার ইচ্ছে, তুই বলার কে?’

‘ঠিক আছে বাবা, ঘাট মানছি’-ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ ক’রে শুয়েছিলো খোকা। হাতে একটা বই নিয়ে সেজখালার খাটে সে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। ঘরে বড়দের কেউ না থাকায় বেলীর তখন অবাধ স্বাধীনতা। সে পাখা মেলে দিয়েছিলো।

‘কথা বলছিস না যে বড়? আবার ঘাড় ঘোরানো হয়েছে! যদি কথা না বলিস মা ফিরে এলে তোর নামে নালিশ করবো।’

‘কি নালিশ করবি শুনি?’

‘বলবো জোর ক’রে জাপ্টে ধ’রে তুই আমার গালে চুমু খেয়েছিস, ব্লাউস ছিঁড়ে দিয়েছিস; তুই মনে মনে যা যা কুচিন্তা করছিস, তার সবই বলবো। ভালমানুষি ছুটিয়ে দেবো–‘

‘তোর যা ইচ্ছে করিস, এখন ভাগ, এখান থেকে ভাগ?’

‘এহ্, কি আমার ভাগানেওয়ালা রে!’

‘বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বেলী। সেজখালা ফিরে এলে আমি নিজেই নালিশ করবো তোর নামে, মার খাওয়াব তোকে!’

‘কি ব’লে নালিশ দিবি?’

‘সে তখন দেখা যাবে–‘

‘বলবি জোর ক’রে জাপ্টে ধ’রে বেলী আমার গালে চুমু খেয়েছে, ঠিক আছে, তোর যা ইচ্ছে নালিশ করিস। মা তো আর বাঘ-ভাল্লুক নয় যে ক্যাঁচ্যাঁচ ক’রে একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে! না হয় দু’ঘা দেবে, ও আমার অনেক আগেই রপ্ত হ’য়ে আছে।’

‘তোদের এখানে আর আসছি না, দেখে নিস! তুই একটা এচড়ে পাকা ফাজিল ছুঁড়ি, পৌনে তেরোটা বেজে গেছে তোর।’

বেলী ঠোঁট উল্টিয়ে তাচ্ছিল্যভরে বলেছিলো, ‘ব’য়েই গেল, উনি আসায় বেজায় লাভ হচ্ছে কি না আমার। একটা সিনেমা দেখালেও তবু বলতাম হ্যাঁ দেখিয়েছিস একদিন, কি কঞ্জুস! চোখ খুলে কথা বল না, আমি কি ধুলোবালি না গাছের আঠা?’

‘ধুলোবালি তো বটেই, ধূলোবালিতে ভর করা জীবাণু’

‘আর তুই একটা কেঁচো।’

ঝটিতি হাতের বই ছুড়ে মেরেছিলো থোকা, কিন্তু গায়ে লাগেনি, খিলখিল করে হেসে একপাশে স’রে গিয়েছিলো বেলী।

‘আমার নিজের বোন হ’লে জুতিয়ে সিধা ক’রে দিতাম তোকে।’

‘তোর নিজের বোনও তাহলে এইসব কথা বলে?’ হেসে গড়িয়ে পড়েছিলো বেলী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে।

মোটকথা ও বাড়িতে এই ছিলো তার শেষ দিন। আর ওমুখো হয়নি খোকা এরপর। সেজখালার কানে কোনো কথা তুলে থাকবে বেলী, সেজখালার শীতল ব্যবহারে পরে এই ধরনের একটা সন্দেহ জন্মেছে তার মনে। বেলীর পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, হয়তো ভিতরে ভিতরে কোনো কূট অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যে তার সম্পর্কে মনগড়া কদর্য অভিযোগ তুলে সেজখালার মন ভেঙে দিয়েছে সে। মাঝে মাঝে সেজখালা যখন তাদের ওখানে আসে তখন তার দিকে এমন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকায় যে খোকার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায়।

 

জীবন আমার বোন (পর্ব-৫০)

১২:০০:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘ড্যাবড্যাব ক’রে আমার বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবি না, ভালো হবে না।’

‘অমন বিদকুটে সং সেজেছিস কেন?’

‘আমার ইচ্ছে, তুই বলার কে?’

‘ঠিক আছে বাবা, ঘাট মানছি’-ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ ক’রে শুয়েছিলো খোকা। হাতে একটা বই নিয়ে সেজখালার খাটে সে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। ঘরে বড়দের কেউ না থাকায় বেলীর তখন অবাধ স্বাধীনতা। সে পাখা মেলে দিয়েছিলো।

‘কথা বলছিস না যে বড়? আবার ঘাড় ঘোরানো হয়েছে! যদি কথা না বলিস মা ফিরে এলে তোর নামে নালিশ করবো।’

‘কি নালিশ করবি শুনি?’

‘বলবো জোর ক’রে জাপ্টে ধ’রে তুই আমার গালে চুমু খেয়েছিস, ব্লাউস ছিঁড়ে দিয়েছিস; তুই মনে মনে যা যা কুচিন্তা করছিস, তার সবই বলবো। ভালমানুষি ছুটিয়ে দেবো–‘

‘তোর যা ইচ্ছে করিস, এখন ভাগ, এখান থেকে ভাগ?’

‘এহ্, কি আমার ভাগানেওয়ালা রে!’

‘বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বেলী। সেজখালা ফিরে এলে আমি নিজেই নালিশ করবো তোর নামে, মার খাওয়াব তোকে!’

‘কি ব’লে নালিশ দিবি?’

‘সে তখন দেখা যাবে–‘

‘বলবি জোর ক’রে জাপ্টে ধ’রে বেলী আমার গালে চুমু খেয়েছে, ঠিক আছে, তোর যা ইচ্ছে নালিশ করিস। মা তো আর বাঘ-ভাল্লুক নয় যে ক্যাঁচ্যাঁচ ক’রে একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে! না হয় দু’ঘা দেবে, ও আমার অনেক আগেই রপ্ত হ’য়ে আছে।’

‘তোদের এখানে আর আসছি না, দেখে নিস! তুই একটা এচড়ে পাকা ফাজিল ছুঁড়ি, পৌনে তেরোটা বেজে গেছে তোর।’

বেলী ঠোঁট উল্টিয়ে তাচ্ছিল্যভরে বলেছিলো, ‘ব’য়েই গেল, উনি আসায় বেজায় লাভ হচ্ছে কি না আমার। একটা সিনেমা দেখালেও তবু বলতাম হ্যাঁ দেখিয়েছিস একদিন, কি কঞ্জুস! চোখ খুলে কথা বল না, আমি কি ধুলোবালি না গাছের আঠা?’

‘ধুলোবালি তো বটেই, ধূলোবালিতে ভর করা জীবাণু’

‘আর তুই একটা কেঁচো।’

ঝটিতি হাতের বই ছুড়ে মেরেছিলো থোকা, কিন্তু গায়ে লাগেনি, খিলখিল করে হেসে একপাশে স’রে গিয়েছিলো বেলী।

‘আমার নিজের বোন হ’লে জুতিয়ে সিধা ক’রে দিতাম তোকে।’

‘তোর নিজের বোনও তাহলে এইসব কথা বলে?’ হেসে গড়িয়ে পড়েছিলো বেলী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে।

মোটকথা ও বাড়িতে এই ছিলো তার শেষ দিন। আর ওমুখো হয়নি খোকা এরপর। সেজখালার কানে কোনো কথা তুলে থাকবে বেলী, সেজখালার শীতল ব্যবহারে পরে এই ধরনের একটা সন্দেহ জন্মেছে তার মনে। বেলীর পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, হয়তো ভিতরে ভিতরে কোনো কূট অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যে তার সম্পর্কে মনগড়া কদর্য অভিযোগ তুলে সেজখালার মন ভেঙে দিয়েছে সে। মাঝে মাঝে সেজখালা যখন তাদের ওখানে আসে তখন তার দিকে এমন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকায় যে খোকার অন্তরাত্মা শুকিয়ে যায়।