মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান
‘মিছে ঘর বাড়ি, মিছে টাকা কড়ি,
মিছে দৌড়াদৌড়ি করি কার মায়ায়!
আমি দেখলাম সংসার, ভোজবাজীর প্রকার,
দেখিতে দেখিতে অমনি কেবা কোথা যায়!’
অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসছে চারপাশে। টিম টিম করে বাতি জ্বলছে। আরো টিম টিম করে আকাশ জুড়ে রয়েছে তারার মেলা। নদী থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। এমন এক সময়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে গান গেয়ে চলেছেন নাসরুল। যিনি দিনে একটি ইকো রিসোর্টের কর্মী এবং স্থানীয় শিশুদের স্কুলের শিক্ষক হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটান। শিল্পী নাসরুলকে ঘিরে রিসোর্টের পাটাতনে বসে আছেন একদল অতিথি। তারা গান শুনছেন মনোযোগের সাথে। তাকে বাদ্যযন্ত্রে সাহায্য করছেন রোহিত নামের এক কিশোর। ক্লাস নাইনের ছাত্র রোহিত কুমার মণ্ডল দিনের বেলা স্কুলের পাশাপাশি রিসোর্টের ভেতর একটি মুদি দোকানে বাবা মায়ের সাথে কাজ করেন। স্থানীয় এই কিশোর কথা বলেন বেশ গুছিয়ে। বাবা মা তাদের দোকানের নাম সন্তানের নামেই রেখেছেন-‘রোহিত স্টোর। ঠিকানা: পশ্চিম ঢাংমারী, বাণীশান্তা, দাকোপ, খুলনা।
- ২.
সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে এই ধরনের রিসোর্ট তৈরি করা কতোটা পরিবেশবান্ধব এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো। এ বিষয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। সম্প্রতি ৩ জুন ২০২৪ প্রকাশিত ‘সুন্দরবন ঘিরে একের পর এক রিসোর্ট, চলছে এসি-জেনারেটর’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে প্রথম আলো জানাচ্ছে, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় সেখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষতি করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ কিংবা কোনো কর্মকান্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা এসব রিসোর্ট বনের পরিবেশের ক্ষতি করছে। রিসোর্টগুলোর আশপাশে পানি, শব্দ ও মাটিদূষণ বাড়ছে। বনের প্রাণীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’

প্রথম আলো আরো জানিয়েছে, ‘২০১৮ সালে খুলনার দাকোপ ও বাগেরহাটের মোংলা এলাকায় সুন্দরবন ঘিরে ইকো কটেজের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩। ২০২১ সালেও তা একই ছিল। এরপর যেন রিসোর্ট নির্মাণের হিড়িক পড়ে। সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন অধ্যাপক সুন্দরবন ঘিরে কমিউনিটি-বেজড ইকোট্যুরিজম নিয়ে বেজলাইন স্টাডি করেছেন। ওই গবেষণার তথ্য বলছে, দুই বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে এসে রিসোর্টের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২। ২০২৩ সালে ১২টি রিসোর্টের ৭৪টি কক্ষে পর্যটক থাকতে পারতেন ২৬০ জন। চলতি বছর আরও ৫৮ কক্ষবিশিষ্ট ৮টি কটেজ তৈরি হচ্ছে। সাতটি পুরোনো কটেজে নতুন ৪২টি কক্ষ তৈরির কাজ চলছে। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ২০টি কটেজে পর্যটক ধারণক্ষমতা দাঁড়াবে ৫৬০ জনে।’
দাকোপে পশ্চিম ঢাংমারীর ‘ইরাবতী’, ‘সুন্দরী’ ও ‘বনবিবি’ তিনটি রিসোর্টে ঘুরে উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখা গেল এদের অধিকাংশই তরুণ। একজন প্রথমে শুরু করেছিলেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও এগিয়ে এসেছেন। এক ধরনের ভালো লাগা থেকেই তাদের এই উদ্যোগ। তারা জানান, সুন্দরবনের পরিবেশের কোনো ক্ষতি করার জন্য নয়, বরং ইকো ও কমিউিনিটি ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন। ইকো ও কমিউনিটি ট্যুরিজম নিয়ে বাংলাদেশে কোনো নীতিমালা নেই। তারা চান একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক তরুণ উদ্যোক্তা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের যেভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা ইকো রিসোর্ট নয়, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাচ্ছি।’
- ৩.
সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে নদীর অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ‘ইরাবতী ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার।’ এই রিসোর্টের একটি কুঁড়েঘরের সামনে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়াতে হয় ভেতরে বইয়ের ছোট একটি সংগ্রহ দেখে। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা’ সিরিজের সব বই, আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’, ‘গাভী বিত্তান্ত’, মাহমুদুল হকের ‘প্রতিদিন একটি রুমাল’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু সমগ্র’, ‘অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি’,’ শেক্সপিয়ার সমগ্র’সহ নানা ধরনের বই। সংগ্রহের বিবেচনায় ঢাকা বিমানবন্দরের ভেতরে ব্যাংকগুলোর অভিজাত লাউঞ্জে যে বই থাকে তারচেয়ে এই কুঁড়েঘরে রাখা বই যে মানের দিক দিয়ে অনেক উন্নত তা স্বীকার করতেই হবে।
যদ্যপি আমার গুরু’ বইতেই লেখক আহমদ ছফা জানিয়েছেন, কোনো নতুন স্থানে গেলে সেখানকার দুটো জায়গায় যেতে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক। একটি সেখানকার বইয়ের দোকান, যা দেখে সেই সমাজের জ্ঞানচর্চা সম্পর্কে জানা যাবে। অন্যটি কাঁচাবাজার, যেখানে সে এলাকার আর্থ-সামজিক অবস্থা বোঝা যাবে।

বইয়ের সংগ্রাহককে দেখার আগ্রহ জাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে পাওয়া গেল। ইরাবতী রিসোর্টের উদ্যোক্তা ইমনুল ইসলাম। তিনি ‘সুন্দরবন রিসোর্ট মালিক সমিতি’-র সাধারণ সম্পাদক। বইয়ের সংগ্রহের প্রশংসা করাতে যতোটা আগ্রহী হলেন, ‘সাংবাদিক’ পরিচয় পেয়ে ঠিক ততোটাই চুপসে গেলেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় বিশেষ বিচলিত না হয়ে কথা বলা শুরু করলে জানা গেল তার সংগ্রামের কথা। তিন বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছেন এই রিসোর্ট। পরিবারের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিনরাত এখানেই পড়েছিলেন। এই এলাকায় ইরাবতী প্রথম রিসোর্ট। এলাকা নির্বাচন করা, স্থানীয়দের কনভিন্স করা, জমি লিজ নেয়া, দুর্গম এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করাসহ নানা দিক রয়েছে তার কাজের। ইমনুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমি হয়তো বিদেশ চলে যেতে পারতাম। কিন্তু তা না করে জঙ্গলের কাছে পড়ে আছি কমিউনিটি ট্যুরিজমকে ডেভেলপ করার জন্য। আমার পরিচিত আরো অনেকে এখানে রিসোর্ট করছেন। আমি তাদের যতোটা সম্ভব পরামর্শ দিয়েছি। প্রতিটি রিসোর্টে কর্মী হিসেবে স্থানীয়দের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এতে করে কর্মসংস্থান যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি আমাদের ছোট স্কুলটিতে নতুন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পথ তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরো জানান সরাসরি কর্মীর পাশাপাশি নৌকাচালক, মুরগি-হাঁস বিক্রেতাসহ নানা পেশার মানুষ পরোক্ষ ভাবে লাভবান হয়েছে এখানে রিসোর্ট হওয়াতে। রিসোর্টগুলোকে ঘিরে এই এলাকায় অন্তত এক হাজার মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
কথা বলে বেরিয়ে এসে রোহিত স্টোরে বসে রঙ চায়ের কাপে চমুক দিতে দিতে ইমনুল ইসলামের ঘর থেকে ভেসে এলো রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর।
- 8.
সুন্দরবনের বাইরের ইকো রিসোর্ট শুধু নয়, বনের ভেতরে জাহাজে ভ্রমণেও কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ নেই। সভা সমিতিতে অনেকে বলেন এখানে কেরালার মতো করে ট্যুরিজমকে গড়ে তোলা হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, সুন্দরবন কেরালা নয়। পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গার সাথে এর তুলনা চলে না। সুন্দরবনের জন্য একেবারেই স্বতন্ত্র নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এটা করতে হবে এর সব ধরনের স্টেক হোল্ডারকে নিয়ে। মৌয়াল, বাওয়ালী, মাঝি, জেলে থেকে শুরু করে যারা এখানে ব্যবসা করতে আসছেন এবং যারা পর্যটক হিসেবে সার্ভিস নিতে আসছেন সবার সাথে কথা বলেই তা করতে হবে। সুন্দরবন এলাকায় চলা ‘এসি জাহাজে সুইমিংপুল আছে’- এটা কোনো অগ্রগতির প্রধান বিষয় নয়। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুস্থ বিনোদনের পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পথের দুই ধারে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর একাশিয়া গাছ লাগানো হয়েছে। যে গ্রামের নদীর উল্টো পিঠে সুন্দরবন সেখানে গাছের জন্য আলাদা বাজেট এবং অপ্রয়োজনীয় গাছ কেন লাগানো হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

একজন পর্যটক সুন্দরবনে এসে যদি তিনদিন থেকে একটিও হরিণ বা কুমির না দেখেন তবে তিনি এখানে আবার আসতে বিশেষ আগ্রহী হবেন না। দিনের পর দিন নদী থেকে সারিবদ্ধ গাছের একই রকম ল্যান্ডস্কেপ দেখতে সবাই আগ্রহী নন। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন এবং যারা গবেষক তাদের জন্য অনুমতি সাপেক্ষে বনের গভীরে যাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা প্রয়োজন। সুন্দরবনে কিছু এলাকা নিয়ে একটি সংরক্ষিত সাফারি পার্কের মতো করা যায় কিনা সেটাও চিন্তা করা প্রয়োজন। করমজল এলাকায় যেসব প্রাণী আছে তা দেখতে গেলে চিড়িয়াখানার কথাই মনে পড়ে। বন মনে হয় না। তাই পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় কুমির, হরিণসহ আরো কিছু প্রাণী যদি বনের পরিবেশে রাখা যায় তবে ‘মিনি সুন্দরবন’ দেখার আনন্দ পর্যটকরা পাবেন। মাচায় বসে হরিণ দেখার আনন্দ খাঁচাবন্দী হরিণ দেখার চেয়ে অনেক আনন্দময়। এতে করে মূল সুন্দরবনকে অনেক ঝামেলা থেকে রক্ষা করা যাবে। কেননা সব কিছুর আগে সুন্দরবনের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
- ৫.
বঙ্গীয় বদ্বীপে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় নোনা পানিতে জন্ম নেয়া গাছই হলো ম্যানগ্রোভ। ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজারসহ পৃথিবীর আরো কিছু দেশে ম্যানগ্রোভ থাকলেও একক ভাবে এতো বড় বন পৃথিবীর আর কোথাও নেই। ১০,০০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় সুন্দরবন অবস্থিত। সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, পশুর বাইন ইত্যাদি এ বনের প্রধান গাছ। প্রধানতম গাছ সুন্দরীর নাম অনুসারে বনের নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। গোলপাতা দিয়ে ঘরবাড়িসহ অনেক কিছুই তৈরি হয়।
দুশো বছর আগেও সুন্দরবন বর্তমান আকারের দ্বিগুণ ছিল। বর্তমানে পৃথিবীতে শুধু ১০টি দেশে ৫০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী হচ্ছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, শুকর, কুমির, ডলফিন, গুইসাপ, অজগর, হরিয়াল, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, মদনটাক, মরালি হাঁস, চখা, ঈগল, চিল, মাছরাঙা ইত্যাদি।
এ বন মৎস্য সম্পদেরও এক বিরাট আধার। ইলিশ, লইট্টা, ছুরি, পোয়া, রূপচাঁদা, ভেটকি, পারশে, গলদা, বাগদা ইত্যাদি মাছ পাওয়া যায় এ বলে। বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদীগুলো হলো- পশুর, শিবসা, বলেশ্বের, রায়মঙ্গল ইত্যাদি। তাছাড়া শত শত খাল এ বনের মধ্যে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং আট রকম উভচর প্রজাতির আবাসস্থল।

সুন্দরবনের তিনটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে গঠিত ১,০৯,৭০০ হেক্টর বনাঞ্চলকে ইউনেসকো ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে। মুঘল আমলে স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনি কর্তৃক সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং ১৭৮৯ সালে সমগ্র সুন্দরবনের দায়-দায়িত্ব বন বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়। সুন্দরবনের প্রথম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নাম এম. ইউ. গ্রিন। ১৯৪৭ সালে সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে।
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীজুড়ে আলোচিত এক প্রাণী। ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ২০০-র মতো বাঘ আছে বলে ধারণা করা হয়। বাঘের সংখ্যা এখন অতি সামান্য হলেও এক সময় বাঘের আক্রমণে প্রচুর মানুষ মারা যেত। সে সময়ের কয়েকজন নামকরা বাঘ শিকারি হলেন- মেহের গাজী, জয়েন উদ্দীন, আর্জান সরদার, পরের আমলে মেহের গাজীর দুই ছেলে পচাব্দী গাজী ও হাশেম গাজী এবং রেঞ্জার আবু সাঈদ।
সুন্দরবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে নানা উপকথা। রহস্যময় এই বনের ওপর নানান সময়ে নানান ঝড় বয়ে গিয়েছে। অনেক বড় বড় দুর্যোগে বাংলাদেশের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। এ বন ভ্রমণের মাধ্যমে শুধু গাছ বা পশুপাখি দেখা নয়, সুন্দরবনের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তাই এর ভেতরের নিজস্বতাকে অনুভব করাও জরুরি।
- ৬.
একটি কথা প্রচলিত আছে, সবার ভাগ্যে সুন্দরবন দেখার সুযোগ হয় না। এখন তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। তাই সুন্দরবন লাগোয়া ইকো রিসোর্টগুলোতে ঘুরতে গিয়ে সুন্দরবনকে কাছে থেকে দেখে আসতে হয়। বনের ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই।

ফিরে আসার সময় বার বার চোখ যায় বনের ভেতর। কাদায় পা ডুবিয়ে, স্বাসমূল এড়িয়ে পা বাঁচিয়ে পথচলা, পাখির কিচিরমিচির, বানরের ডাক আর ভাগ্য ভালো থাকলে বাঘের সদ্য পায়ের ছাপ দেখা-সুন্দরবন নিজেই একটি সুবিশাল উপন্যাসের মতো। এর সাথে জড়িত সবাই এর গুরত্বপূর্ণ চরিত্র।
রিসোর্টের কারণে নিয়মিত কাজ পেয়েছেন তরুণ মাঝি মুক্তি। তারা এখন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ। জীবনে বাঘ দেখেছেন কিনা প্রশ্ন করতেই মোবাইল ফোনে নদীর তীরে হেঁটে বেড়ানো বাঘের ভিডিও দেখালেন। ছোট নৌযান এগিয়ে চলে। দরাজ গলায় লালনের গান ধরেন মুক্তি:
‘আসবার কালে কি জাত ছিলে
এসে তুমি কি জাত নিলে।
কি জাত হবা যাবার কালে
সেই কথা ভেবে বলো না।
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না।’
লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও গবেষক
Sarakhon Report 



















