জলবায়ু মিছিল
স্টকহোম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮
গত গ্রীষ্মে জলবায়ু বিজ্ঞানী জোহান রকস্ট্রম এবং আরও কিছু লোক লিখেছেন যে, আমরা যদি প্যারিস চুক্তির নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে যাই তবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধির বিপরীতে আমাদের কাছে সর্বোচ্চ ৩ বছর হাতে আছে।
এখনই এক বছর এবং দুই মাস পার হয়ে গেছে এবং এই সময়ে আরও অনেক বিজ্ঞানী একই কথা বলেছেন ।এবং অনেক কিছু আছে যা আরও খারাপ হয়েছে এবং গ্রিনহাউস-গ্যাস নিঃসরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই হয়তো ১ বছর ১০ মাসের চেয়েও কম সময় আছে । জোহান রকস্ট্রম বলেছেন আমরা সে সময়টুকুও ছেড়ে চলে এসেছি।
মানুষ যদি এটি জানত তবে তাদের আমাকে জিজ্ঞাসা করার দরকার ছিল না যে কেন আমি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে এত উৎসাহী।
মানুষ যদি জানতো যে, বিজ্ঞানীরা বলছে প্যারিস চুক্তির সফলতা পেতে আমদের মাত্র ৫% সুযোগ আছে এবং পাশাপাশি আরো জানতো যে, কি দু:স্বপ্ন আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে যদি আমরা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নীচে না রাখতে পারি। তাহলে আমাকে তাদের জিজ্ঞেস করার কোনো দরকার ছিলনা যে কেন আমি পার্লামেন্টের বাইরে স্কুল স্ট্রাইকে আছি।
কারন প্রত্যেকেই যদি জানতো যে কি ভয়ংকর অবস্থা বিরাজ করছে এবং তা থেকে উত্তরণের জন্যে কত সামান্য আমরা করতে পেরেছি তাহলে সবাই আমার সাথে এসে এক কাতারে জমা হতো ।
সুইডেনে আমরা এমন ভাবে বাস করছি যেন এই গ্রহের ৪.২ সম্পদ আমাদের আছে। আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট পৃথিবীর দশটি সবচেয়ে খারাপের একটি। এর মানে সুইডেন প্রতিবছর প্রাকৃতিক সম্পদের ৩.২ বছর চুরি করে। আমাদের মধ্যে যারা এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশ তারা সুইডেনকে এসব করতে নিশ্চয়ই বারণ করবে। এখনি।
এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। আমাদের স্কুলগুলো দলীয় রাজনীতির সাথে কিছুই করতে পারবেনা।
কারন, জলবায়ু এবং পরিবেশ আমাদের রাজনীতি এবং ফাঁকাবুলির কোনো পরোয়া করেনা। তারা শুধু আমাদের প্রকৃত কাজের মূল্যায়ন করে। এজন্যেই আমাদেরকে সাহায্যের জন্যে এই চিৎকার।
এমনকি এখনো অনেক পত্রিকা জলবায়ু পরিবর্তনের কথা লেখেনি, এমনকি যদিও তারা বলে যে, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সময়ের সবচেয়ে সমস্যাপূর্ণ সময়। যদিও তারা জানে যে, এই গ্রীষ্মে সুইডেনের বন দেদারসে পুড়ছে।
তোমরা যারা এখনো এই সমস্যাটাকে সমস্যা বলে দেখছনা, তোমাদের সবার কাছে বলছি।
সকল উৎসাহী ব্যক্তি যারা জলবায়ু এবং পরিবেশ নিয়ে কথা বলছোনা, তাদের বলছি। সকল রাজনৈতিক দল যারা জলবায়ু বিষয়কে খুব মারাত্বক ভাবে নেয়ার ভাণ করছো, তাদের বলছি। সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বলছি যারা আমাকে সোসাল মিডিয়ায় হেয় প্রতিপন্ন করে নানা গালাগাল দিচ্ছো এমনকি আমাকে উন্মাদ বলতেও দ্বিধা করছোনা, তাদেরকে বলছি।
তোমরা সবাই যারা প্রতিদিন অন্যভাবে ভাবার চেষ্টা করো কারন তোমরা ভয় পাও পরিবর্তনকে, যা বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে পারে।
সব খারাপের মধ্যে তোমার নিরবতা হলো সবচেয়ে খারাপ।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সকল দায়িত্ব তোমার কাঁধে এসে পড়ছে। আমাদের মধ্যে যারা শিশু তারা অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে পারেনা কিন্তু তোমরা পারো যা আমরা বড় হলে এই নিয়ে কিছু করতে পারবো।
অনেকেই বলছে সুইডেন একটি ছোট দেশ, কিন্তু তাতে কি, আমাদের তো কিছু করার আছে। কিন্তু আমি মনে করি, যদি কতিপয় মেয়েরা একসাথে কয়েক সপ্তাহের জন্যে স্কুল বিরতি দেয় , ভাবতে পারেন আমরা যদি একত্রিত হই তাহলে আমরা কি করতে পারবো ? প্রত্যেকটা মানুষকে গুনে নিন। ঠিক যেমনটা প্রত্যেকটা একক নির্গমন গুনে দেখুন। প্রত্যেকটা জিনিষ গুনে দেখুন।
তাই দয়া করে জলবায়ু সংকটকে একটা বিশাল সংকটকাল হিসেবে দেখুন এবং আমাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দিন।