০২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সৌদি সম্মানে ভূষিত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কে নতুন বার্তা ভ্যান্সকে ঘিরে ডানপন্থীদের নতুন সমীকরণ, ২০২৮ দৌড়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু স্বাস্থ্য উপহারই এবার উৎসবের নতুন ট্রেন্ড চীনা প্রযুক্তিতে মার্কিন বিনিয়োগে কড়াকড়ি, নতুন আইনে নজরদারি ও প্রতিরক্ষা খাতে বড় বাঁক ক্ষমতার সীমা ভাঙার বছর ট্রাম্পের, বিতর্ক আর দ্রুত সিদ্ধান্তে কাঁপল হোয়াইট হাউস শহরের স্পন্দনে কুপ্রা: সিটি গ্যারেজে বদলে যাচ্ছে নগর সংস্কৃতির মানচিত্র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত, ঋণের চাপ আর সংস্কারের চ্যালেঞ্জ: শ্রীলঙ্কা এক সংকটে আটকে পড়েছে জিএমের বৈশ্বিক দৌড় ফর্মুলা ওয়ানকে হাতিয়ার করে নতুন বাজারে আমেরিকার অটো জায়ান্ট মাদুরো পতনের ছক কি যুদ্ধ ডেকে আনবে ক্যারিবিয়ানে

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-২০)

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • 80

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-৯

কী লাভ এই স্কেস্ জোড়ায়, খামোকা কেবল বগল জুড়ে থাকছে! পায়ে পরা থাকলে বেশ ছোটা যেত, সময় বাঁচত, কমত দূরত্ব। কিন্তু শহরে স্কেটিং করার বিশেষ সুবিধা নেই। বরফ সব ভাঙাচোরা নয়ত বালি ছিটানো। অথচ হল্যান্ডে সবাই শীতকালে হাঁটে স্কেটস্ পরে। বুড়ীরাও সেখানে স্কেটিং করে যায়। তবে সে তো আর সাধারণ রাস্তা নয়, ক্যানেল, নীলাভ মসৃণ বরফে ঢাকা। স্কেটস্ কাজ দেয় যখন তা থাকে পায়ে, কিন্তু বগলে বইতে হলে তা কেবলি অসুবিধা ঘটায়।

ফের তাড়া লেগেছে ছেলেটার। চটপট পাঠাতে হবে টেলিগ্রামটা। কেনন। টেলিগ্রামে বাখ্তিউকভ নিশ্চয় আসতে বলেছে তার বৌ আর ছেলেকে, ওই দু’চোখের বিষ সের্গেইটাকে, যে রচনা লেখে একেবারে বেদানার দানার মতো অক্ষরে, একটিও কাটাকুটি করে না। চুলোয় যাক গে! বাতিউকভের যখন ইচ্ছে, তখন আসুক সের্গেই।

একটা কান সব সময়েই গরম, টুপির তলে আছে সেটা, অন্য কানটা একেবারে জমে গেছে। কিন্তু তাড়াতাড়ির সময় টুপিটা সরিয়ে বসাবার সময় কোথায়। তবে ডাকঘরটা গরম। লালচে গালা, চ্যাটচেটে আটা আর আরো কী সব দুর্লভ

ডাকঘরের গন্ধে তা আমোদিত। ভেতর দিকে টরে-টক্কা হচ্ছে টেলিগ্রাফ যন্ত্রে। নাকি ‘বাহিরের লোকের প্রবেশ নিষেধ!’ করে কড়া হুকুমদারি ফলকটা টাঙানো যে- দরজায়, তার ভেতরে কেমন করে যেন কোনো গলন্ত বরফ পৌঁছে গেছে, তারই জল

পড়ছে টপ-টপ।

ডাকঘরে ঢুকতেই গরম লাগতে শুরু করল ছেলেটার। ওভারকোটের বোতাম খুলে ফেললে সে, আলগা করে দিলে সবুজ মাফলার। হাট করে খোলা ওভারকোটটায় তাকে দেখাল ডানা-মোড়া দাঁড়কাকের বাচ্চার মতো। টেলিগ্রামের কাউন্টারে এসে সে কাগজটা এগিয়ে দিলে।

‘এ সব কী কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং?’ চটে উঠল কাউন্টারের মেয়েটি, ‘একটু ভালো করে লেখারও মুরদ হয় নি? ছোটো তো আর ন’স! নে, এই ফর্মে লিখে দে!’

লজ্জায় লাল হয়ে উঠল ছেলেটা, তবে কৈফিয়ৎ দিতে গেল না যে টেলিগ্রামটা

লিখেছে সে নয়, জখম একজন লোক, হাতে পেনসিল ধরারও যার শক্তি ছিল না। ডাকঘরের মাঝখানে ছিল কাঠের এক ব্যাঙের ছাতার মতো টেবিল। স্কেটস্ জোড়া তার গোড়ায় রেখে টেলিগ্রাফ ফর্মটা সে পাতলে সেই ছাতার ওপর।

তাড়াহুড়া না করে নির্দিষ্ট ঘরের মধ্যেই হরফ এ’টে সে ঠিকানাটা লেখার চেষ্টা করলে। পরিপাটী করেই লিখতে চাইছিল ছেলেটা, কিন্তু লেখার ছাঁদটা হল এলোমেলো, হরফগুলো হয়ে গেল লম্বাটে, ফর্মের ঘরগুলোর মধ্যে আঁটল না।

ঠিকানাটা লেখার পর জোরে নিশ্বাস ফেললে সে কাজটা তো আর সহজ নয়- তারপর লিখতে লাগল মূল বয়ান:

‘অসুস্থ। হাসপাতালে। বাড়ি তালাবন্ধ। আসার দরকার নেই। বাবা।’

কেবল এতক্ষণে, টেলিগ্রামটা লেখা হয়ে যাবার পরই তার মাথায় ঢুকল তার মানে। না তো, বাতিউকভ তো ওদের ডেকে পাঠায় নি। শুধু নিজের রোগের খবরটা দিয়েছে। ক্রুদ্ধ সবুজ ঝিলিক জজ্বলে উঠল ছেলেটার চোখে। তার মানে ও ডাকঘরে ছুটে এল শুধু সের্গেই বাতিউকভকে এই কথাটা জানাতে যে সে আরামে ছুটিতে থাক, যখন বাপ তার হাসপাতালে, জীবন তার বিপন্ন?! টেলিগ্রামটা ছিড়ে ফেলার ইচ্ছে হয়েছিল ছেলেটার। লিখবে নতুন একটা টেলিগ্রাম, নিজের মনের মতো। তাতে প্রাণভরে গাল দেবে সেগেইকে।

ওর সম্পর্কে সে যা-কিছু ভাবে সব মুখের ওপর বলে দেবে… কিন্তু সেটা সে করলে না।

টেলিগ্রাম লেখা যখন শেষ হল, কাউন্টারে তখন লাইন লেগেছে। নীরবে ছেলেটা কিউ’য়ে গিয়ে দাঁড়াল।

ঝুলে পড়েছে ছেলেটার কাঁধ। সবুজ চোখের দৃষ্টি ক্লান্ত, হতভম্ব। এক হাতে স্কেটস্ জোড়া, অন্য হাতটা খালি। অকারণে দুলছে সে হাতটা, আর হাতের মালিক হোঁচট খেতে গেলে তাকে সামলাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঠাণ্ডায় জমতে লাগল হাতটা, ছেলেটা তা পকেটে ঢোকালে।

আঙুলে ঠেকল কী একটা কাগজ। আরে, তাই তো, এ তো সেই খাতার ছোঁড়া পাতাটা, ডাকঘরের মেয়েটা যা নেয় নি। কাগজটা বার করে ছেলেটা টলে-টলে-পড়া অক্ষরে তৈরি শব্দগুলো ফের পড়তে লাগল: ‘অসুস্থ। হাসপাতালে। বাড়ি তালাবন্ধ। আসার দরকার নেই। বাবা।’

বাবা… এই কথাটা ছেলেটা পড়লে মনে মনে নয়, চোঁচিয়ে। জীবনে কখনো সে

কথাটা উচ্চারণ করে নি, ইচ্ছে হল দেখে কেমন সেটা শোনায়। আর নিজের গলাকেই চিনতে পারল না সে। মনে হয়, অন্য কেউ বুঝি ওটা বললে।

মেগেই বাতিউকভ কী ভাবে ‘বাবা’ বলে সেটা কল্পনা করতে চাইল ছেলেটা। মনে হল তার যেন সত্যিই সেগেইয়ের গলা সে শুনতে পাচ্ছে। মুখ কোঁচকালে ছেলেটা, ভুল সুর কানে এল যেভাবে কোঁচকায় সুরকার।

আর হঠাৎ তার মনে হয় সের্গেই বা তার মা কেউ লোকটার কাছে আসবে না। ছুটি ফুরাবার আগে তারা সাপোজক শহর ছাড়বে না, ছুটে আসবে না সেই লোকটার কাছে, হাসপাতালে যে মরণাপন্ন। সেই লোকটা যার নাম ‘বাবা’।

চোখের সামনে তার ভেসে উঠল, বাখৃতিউকভ একলা হাসপাতালের খাটে। টের পেলে, জমে-ওঠা চোখের জলে চিন-চিন করছে চোখের কোণ।

আচ্ছা, হাসপাতালে গেলে কেমন হয়? শুধু এমনি, গিয়ে জেনে নেবে কেমন আছে রোগী ল. বাতিউকভ। বলবে, অভিনন্দন জানিয়ে দিতে, তারপর চলে আসবে। অন্তত লোকটার অমন একলা লাগবে না।

না, স্কেটিং রিঙ্কে যাবারও ওর ইচ্ছেই হচ্ছে না। মেজাজ নেই। কালকেও তো সেখানে যাওয়া যায়। কোথাও যাবারই তার তাড়া নেই।

সংকট মুহূর্তে লোকে যখন সাহায্য চায় না, বরং নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাতে বলে, তখন যেতেই হবে এমন নয়। তাই নয় কি?

 

জনপ্রিয় সংবাদ

কিউবার পথে সর্বনাশের ছায়া ভেনিজুয়েলার তেলে মার্কিন অবরোধে দ্বীপ রাষ্ট্রে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা

রূপের ডালি খেলা (পর্ব-২০)

০৪:০০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

ইউ. ইয়াকভলেভ

স্কেটস, বগলে ছেলেটা-৯

কী লাভ এই স্কেস্ জোড়ায়, খামোকা কেবল বগল জুড়ে থাকছে! পায়ে পরা থাকলে বেশ ছোটা যেত, সময় বাঁচত, কমত দূরত্ব। কিন্তু শহরে স্কেটিং করার বিশেষ সুবিধা নেই। বরফ সব ভাঙাচোরা নয়ত বালি ছিটানো। অথচ হল্যান্ডে সবাই শীতকালে হাঁটে স্কেটস্ পরে। বুড়ীরাও সেখানে স্কেটিং করে যায়। তবে সে তো আর সাধারণ রাস্তা নয়, ক্যানেল, নীলাভ মসৃণ বরফে ঢাকা। স্কেটস্ কাজ দেয় যখন তা থাকে পায়ে, কিন্তু বগলে বইতে হলে তা কেবলি অসুবিধা ঘটায়।

ফের তাড়া লেগেছে ছেলেটার। চটপট পাঠাতে হবে টেলিগ্রামটা। কেনন। টেলিগ্রামে বাখ্তিউকভ নিশ্চয় আসতে বলেছে তার বৌ আর ছেলেকে, ওই দু’চোখের বিষ সের্গেইটাকে, যে রচনা লেখে একেবারে বেদানার দানার মতো অক্ষরে, একটিও কাটাকুটি করে না। চুলোয় যাক গে! বাতিউকভের যখন ইচ্ছে, তখন আসুক সের্গেই।

একটা কান সব সময়েই গরম, টুপির তলে আছে সেটা, অন্য কানটা একেবারে জমে গেছে। কিন্তু তাড়াতাড়ির সময় টুপিটা সরিয়ে বসাবার সময় কোথায়। তবে ডাকঘরটা গরম। লালচে গালা, চ্যাটচেটে আটা আর আরো কী সব দুর্লভ

ডাকঘরের গন্ধে তা আমোদিত। ভেতর দিকে টরে-টক্কা হচ্ছে টেলিগ্রাফ যন্ত্রে। নাকি ‘বাহিরের লোকের প্রবেশ নিষেধ!’ করে কড়া হুকুমদারি ফলকটা টাঙানো যে- দরজায়, তার ভেতরে কেমন করে যেন কোনো গলন্ত বরফ পৌঁছে গেছে, তারই জল

পড়ছে টপ-টপ।

ডাকঘরে ঢুকতেই গরম লাগতে শুরু করল ছেলেটার। ওভারকোটের বোতাম খুলে ফেললে সে, আলগা করে দিলে সবুজ মাফলার। হাট করে খোলা ওভারকোটটায় তাকে দেখাল ডানা-মোড়া দাঁড়কাকের বাচ্চার মতো। টেলিগ্রামের কাউন্টারে এসে সে কাগজটা এগিয়ে দিলে।

‘এ সব কী কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং?’ চটে উঠল কাউন্টারের মেয়েটি, ‘একটু ভালো করে লেখারও মুরদ হয় নি? ছোটো তো আর ন’স! নে, এই ফর্মে লিখে দে!’

লজ্জায় লাল হয়ে উঠল ছেলেটা, তবে কৈফিয়ৎ দিতে গেল না যে টেলিগ্রামটা

লিখেছে সে নয়, জখম একজন লোক, হাতে পেনসিল ধরারও যার শক্তি ছিল না। ডাকঘরের মাঝখানে ছিল কাঠের এক ব্যাঙের ছাতার মতো টেবিল। স্কেটস্ জোড়া তার গোড়ায় রেখে টেলিগ্রাফ ফর্মটা সে পাতলে সেই ছাতার ওপর।

তাড়াহুড়া না করে নির্দিষ্ট ঘরের মধ্যেই হরফ এ’টে সে ঠিকানাটা লেখার চেষ্টা করলে। পরিপাটী করেই লিখতে চাইছিল ছেলেটা, কিন্তু লেখার ছাঁদটা হল এলোমেলো, হরফগুলো হয়ে গেল লম্বাটে, ফর্মের ঘরগুলোর মধ্যে আঁটল না।

ঠিকানাটা লেখার পর জোরে নিশ্বাস ফেললে সে কাজটা তো আর সহজ নয়- তারপর লিখতে লাগল মূল বয়ান:

‘অসুস্থ। হাসপাতালে। বাড়ি তালাবন্ধ। আসার দরকার নেই। বাবা।’

কেবল এতক্ষণে, টেলিগ্রামটা লেখা হয়ে যাবার পরই তার মাথায় ঢুকল তার মানে। না তো, বাতিউকভ তো ওদের ডেকে পাঠায় নি। শুধু নিজের রোগের খবরটা দিয়েছে। ক্রুদ্ধ সবুজ ঝিলিক জজ্বলে উঠল ছেলেটার চোখে। তার মানে ও ডাকঘরে ছুটে এল শুধু সের্গেই বাতিউকভকে এই কথাটা জানাতে যে সে আরামে ছুটিতে থাক, যখন বাপ তার হাসপাতালে, জীবন তার বিপন্ন?! টেলিগ্রামটা ছিড়ে ফেলার ইচ্ছে হয়েছিল ছেলেটার। লিখবে নতুন একটা টেলিগ্রাম, নিজের মনের মতো। তাতে প্রাণভরে গাল দেবে সেগেইকে।

ওর সম্পর্কে সে যা-কিছু ভাবে সব মুখের ওপর বলে দেবে… কিন্তু সেটা সে করলে না।

টেলিগ্রাম লেখা যখন শেষ হল, কাউন্টারে তখন লাইন লেগেছে। নীরবে ছেলেটা কিউ’য়ে গিয়ে দাঁড়াল।

ঝুলে পড়েছে ছেলেটার কাঁধ। সবুজ চোখের দৃষ্টি ক্লান্ত, হতভম্ব। এক হাতে স্কেটস্ জোড়া, অন্য হাতটা খালি। অকারণে দুলছে সে হাতটা, আর হাতের মালিক হোঁচট খেতে গেলে তাকে সামলাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঠাণ্ডায় জমতে লাগল হাতটা, ছেলেটা তা পকেটে ঢোকালে।

আঙুলে ঠেকল কী একটা কাগজ। আরে, তাই তো, এ তো সেই খাতার ছোঁড়া পাতাটা, ডাকঘরের মেয়েটা যা নেয় নি। কাগজটা বার করে ছেলেটা টলে-টলে-পড়া অক্ষরে তৈরি শব্দগুলো ফের পড়তে লাগল: ‘অসুস্থ। হাসপাতালে। বাড়ি তালাবন্ধ। আসার দরকার নেই। বাবা।’

বাবা… এই কথাটা ছেলেটা পড়লে মনে মনে নয়, চোঁচিয়ে। জীবনে কখনো সে

কথাটা উচ্চারণ করে নি, ইচ্ছে হল দেখে কেমন সেটা শোনায়। আর নিজের গলাকেই চিনতে পারল না সে। মনে হয়, অন্য কেউ বুঝি ওটা বললে।

মেগেই বাতিউকভ কী ভাবে ‘বাবা’ বলে সেটা কল্পনা করতে চাইল ছেলেটা। মনে হল তার যেন সত্যিই সেগেইয়ের গলা সে শুনতে পাচ্ছে। মুখ কোঁচকালে ছেলেটা, ভুল সুর কানে এল যেভাবে কোঁচকায় সুরকার।

আর হঠাৎ তার মনে হয় সের্গেই বা তার মা কেউ লোকটার কাছে আসবে না। ছুটি ফুরাবার আগে তারা সাপোজক শহর ছাড়বে না, ছুটে আসবে না সেই লোকটার কাছে, হাসপাতালে যে মরণাপন্ন। সেই লোকটা যার নাম ‘বাবা’।

চোখের সামনে তার ভেসে উঠল, বাখৃতিউকভ একলা হাসপাতালের খাটে। টের পেলে, জমে-ওঠা চোখের জলে চিন-চিন করছে চোখের কোণ।

আচ্ছা, হাসপাতালে গেলে কেমন হয়? শুধু এমনি, গিয়ে জেনে নেবে কেমন আছে রোগী ল. বাতিউকভ। বলবে, অভিনন্দন জানিয়ে দিতে, তারপর চলে আসবে। অন্তত লোকটার অমন একলা লাগবে না।

না, স্কেটিং রিঙ্কে যাবারও ওর ইচ্ছেই হচ্ছে না। মেজাজ নেই। কালকেও তো সেখানে যাওয়া যায়। কোথাও যাবারই তার তাড়া নেই।

সংকট মুহূর্তে লোকে যখন সাহায্য চায় না, বরং নিশ্চিন্তে ছুটি কাটাতে বলে, তখন যেতেই হবে এমন নয়। তাই নয় কি?