সারাক্ষণ ডেস্ক
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করলে এবং দেশের আইন মেনে চললে তাদের প্ল্যাটফর্ম দেশে উন্মুক্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ফিরলেও ফেসবুক ও টিকটক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী নিজে এসব প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছেন। অবশ্য এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতা হয়। সরকার ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে, যা সময়-সময় শিথিল রেখে এখনো বলবৎ রয়েছে। কারফিউর আগেই ১৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ফোর-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করায় দেশের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের দিন ১৮ জুলাই রাত পৌনে নয়টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো দেশই ইন্টারনেট–বিচ্ছিন্ন ছিল।
মোবাইল ইন্টারনেটে (ফোর জি) চালু হচ্ছে আজ বিকাল ৩টায় জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক।
হেপাটাইটিস নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি দেশের চিকিৎসক, বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০২৪ উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত এবং আমাদের সবার প্রচেষ্টায় তা অর্জন সম্ভব। হেপাটাইটিস নির্ণয়ে পরীক্ষা করুন, টিকা নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস-২০২৪’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধে দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার’ যা সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিসজনিত কারণে বিশ্বে প্রতিবছর ১৩ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন, যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। হেপাটাইটিস লিভার ক্যানসারের অন্যতম কারণ। তাই হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। সারাদেশে হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোসহ চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফও বাড়িয়েছি। গ্রামপর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
তথ্য সংশোধন করে গত মাসে দেশের রফতানি আয়ের পরিসংখ্যান থেকে ১ হাজার ৪২০ কোটি বা ১৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকা রফতানি খাত হঠাৎ করেই ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ ও ঋণ বা সহায়তার পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। ইতিবাচক ধারায় ছিল কেবল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেটিও বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এতে দেশের ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ আরো বেশি ভঙ্গুর হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই বছরের বেশি সময় অস্থিতিশীল থাকার পর ডলারের বিনিময় হার কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে এসেছিল। কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছিল বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাত-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সব সংবাদমাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হচ্ছে। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়াসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিয়ে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে উঠতেও অনেক সময় লাগবে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সর্বশেষ প্রকাশনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের বিষয়ে যেসব পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি মৌলিক বিষয় ছিল যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, যাতে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত এখানে না ঘটে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ একপ্রকার লকডাউনের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের অর্থনীতি। এখনো একটা ভার্চুয়াল লকডাউন চলছে। কভিডের সময় বাইরে বের হতে না পারলেও ডিজিটাল মাধ্যমে বাসায় বসেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা একটা ই-মেইল পর্যন্ত বিদেশী ক্রেতাদের পাঠাতে পারছিলেন না। অনেক ছোট স্টার্টআপ ও ফ্রিল্যান্সার যাদের তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা, তারা একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। ইন্টারনেট না থাকার প্রভাব সব খাতের ওপরই পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাস দিতে হলে আগে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে স্বাভাবিক অবস্থা কবে ফিরছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলতে আমরা যেটা বুঝি যে কারফিউ থাকবে না, রাস্তায় পুলিশ থাকলেও সেনাবাহিনী থাকবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ থাকে, তাহলেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসছে বলা যাবে না। এ মুহূর্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। আর্থিক খাতের দুর্দশা, বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বড় বিষফোঁড়া আমাদের অর্থনীতিতে গত দুই-তিন বছর রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক যে সংঘর্ষ ও প্রাণহানি সেটি তো রক্তক্ষরণের মতো। রক্তক্ষরণ বন্ধ না করে আপনি ফোঁড়ার চিকিৎসা করবেন কীভাবে?’
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার কারফিউ অব্যাহত থাকবে। এই তিন দিন কারফিউ শিথিলের সময় আরও দুই ঘণ্টা করে বাড়ানো হয়েছে। এসব এলাকায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।
শনিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর কারফিউ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বাকি জেলাগুলোতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয় করে তাদের নিজ নিজ জেলায় কারফিউ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
এর আগে শুক্র ও শনিবার ঢাকায় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। এরপর পরের দিনও সহিংসতা চলতে থাকলে সেদিন মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। একইসঙ্গে সারা দেশে সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রথমদিন দুই ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল রাখা হয়। পরের দিন থেকে শিথিলের মেয়াদ বাড়তে থাকে।
Leave a Reply