১০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬৬)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪
  • 18

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

আমিও একটা স্বপ্ন–স্বস্তিকা, ক্রশ আর সুলেমানের তারকার মতো আমিও একটা স্বপ্ন; খোকার মনে হয়, সুরক্ষিত অতীত আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝখানে ঝুলন্ত এক সেতুর উপর কুটকুটে ন্যাতাজড়ানো ফ্যাল্লা ছেলের মতো সর্বক্ষণ কি খেলায় যে বিভোর!
‘মুরাদ তুই লা হোলা পড়েছিস?’
‘পড়িনি, কেন বলতো?’
‘এমনি-ই! আমার ঘরে আছে, প’ড়ে দেখিস। আজ ক’দিন থেকে মনের ভিতর কেবল লা-হোলা লা-হোলা চলছে, ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না!’
‘মাঝে মাঝে এমন সব উদ্ভট কথা বলিস!’
‘তোর ধারণাটাই বোধহয় ঠিক, ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটবে এবার!’
‘ধানঝাড়া করবে, এই আর কি!’ মুরাদ হেসে বললে। ‘আরো অনেক বেশি। হয়তো আমরা কেউই থাকবো না; স্বপ্ন হ’য়ে যাবো’ মুরাদ অকারণে হাসতে লাগলো। বললে, ‘তুই কোনটা চাস? সাত কোটি লোক মারা যাক, শুধু আমরা কয়েকজন বেঁচে থাকি, না আমরা এই ক’জন শুধু মারা যাই, সাত কোটি লোক অক্ষত এবং জীবিত থাকুক, কোনটা?’
‘দুটোর কোনোটাই না!”
মুরাদ একটু থেমে কিছু একটা ভাবলো। একটা সিগ্রেট বললে, ‘আর একটা ইন্দোনেশিয়া হ’তে চলেছে দেশটা গলে তোর একটা গুণ আছে মুরাদ, সবকিছু তুই খুব সহজভাবে নিতে পারিস। ভিতরে ভিতরে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে যাচ্ছে ধরালো।
বন্ধুণটুন বুঝি না’ চটাস ক’রে সিগ্রেটের ছাই ঝেড়ে মুরাদ বললে, ‘গতানুগতিকতাকে আমি ঘৃণা করি! পরিবর্তন চাই। এমন একটা পরিবর্তন যা সবকিছু ভেঙেচুরে তছনছ ক’রে দেবে, বদলে দেবে। মানুষ আর স্রোতের শ্যাওলায় কোনো তফাৎ নেই এখন, এটা ঘৃণ্য। শির- দাঁড়াকে এমনভাবে বেঁকিয়ে রেখেছি যা লাথি না খেলে কখনো সোজা হবে না। মার চাই আমাদের, শয়তানের মার।’
‘তার মানে সাপের মতো খোলস বদল ক’রে আমরাও বারবার নতুন হ’তে চাই!’
‘সাপের মতো কি না জানি না-‘ মুখ অপেক্ষাকৃত শক্ত ক’রে মুরাদ বললে, ‘তবে পরিবর্তন আমরা চাই, আর এইজন্যেই আমরা মানুষ। পরিবর্তন থেকে পরিবর্ধন। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিত্যনতুন চিন্তা করার একটা ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে বাঙালিদের; আমরা এই তুচ্ছ হেলাফেলার জিনিশ নই!’
‘পরিবর্তন আর রূপান্তরের তফাত বুঝিস?’
‘কি রকম?’ চোখ কোঁচকালো মুরাদ।
‘গ্রেগর স্যামসা রূপান্তরিত হয়েছিলো পোকায়-‘
‘তার মানে পরিবর্তমান সমাজের মানুষরা তোর কাছে সন্দেহের পাত্র। গদী আঁকড়ে থাকা ক্ষমতালোভীদের মতোই নিছক মাছ ধরার জন্যে পানি ঘোলা করছিস তুই। কতোগুলো বাতিক আছে তোর, দুঃস্বপ্নের নরকে হাবুডুবু খাওয়ার অভ্যেসটা মজ্জাগত দোষ হ’য়ে দাঁড়িয়েছে।’

 

জীবন আমার বোন (পর্ব-৬৬)

১২:০০:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০২৪

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

আমিও একটা স্বপ্ন–স্বস্তিকা, ক্রশ আর সুলেমানের তারকার মতো আমিও একটা স্বপ্ন; খোকার মনে হয়, সুরক্ষিত অতীত আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝখানে ঝুলন্ত এক সেতুর উপর কুটকুটে ন্যাতাজড়ানো ফ্যাল্লা ছেলের মতো সর্বক্ষণ কি খেলায় যে বিভোর!
‘মুরাদ তুই লা হোলা পড়েছিস?’
‘পড়িনি, কেন বলতো?’
‘এমনি-ই! আমার ঘরে আছে, প’ড়ে দেখিস। আজ ক’দিন থেকে মনের ভিতর কেবল লা-হোলা লা-হোলা চলছে, ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না!’
‘মাঝে মাঝে এমন সব উদ্ভট কথা বলিস!’
‘তোর ধারণাটাই বোধহয় ঠিক, ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটবে এবার!’
‘ধানঝাড়া করবে, এই আর কি!’ মুরাদ হেসে বললে। ‘আরো অনেক বেশি। হয়তো আমরা কেউই থাকবো না; স্বপ্ন হ’য়ে যাবো’ মুরাদ অকারণে হাসতে লাগলো। বললে, ‘তুই কোনটা চাস? সাত কোটি লোক মারা যাক, শুধু আমরা কয়েকজন বেঁচে থাকি, না আমরা এই ক’জন শুধু মারা যাই, সাত কোটি লোক অক্ষত এবং জীবিত থাকুক, কোনটা?’
‘দুটোর কোনোটাই না!”
মুরাদ একটু থেমে কিছু একটা ভাবলো। একটা সিগ্রেট বললে, ‘আর একটা ইন্দোনেশিয়া হ’তে চলেছে দেশটা গলে তোর একটা গুণ আছে মুরাদ, সবকিছু তুই খুব সহজভাবে নিতে পারিস। ভিতরে ভিতরে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে যাচ্ছে ধরালো।
বন্ধুণটুন বুঝি না’ চটাস ক’রে সিগ্রেটের ছাই ঝেড়ে মুরাদ বললে, ‘গতানুগতিকতাকে আমি ঘৃণা করি! পরিবর্তন চাই। এমন একটা পরিবর্তন যা সবকিছু ভেঙেচুরে তছনছ ক’রে দেবে, বদলে দেবে। মানুষ আর স্রোতের শ্যাওলায় কোনো তফাৎ নেই এখন, এটা ঘৃণ্য। শির- দাঁড়াকে এমনভাবে বেঁকিয়ে রেখেছি যা লাথি না খেলে কখনো সোজা হবে না। মার চাই আমাদের, শয়তানের মার।’
‘তার মানে সাপের মতো খোলস বদল ক’রে আমরাও বারবার নতুন হ’তে চাই!’
‘সাপের মতো কি না জানি না-‘ মুখ অপেক্ষাকৃত শক্ত ক’রে মুরাদ বললে, ‘তবে পরিবর্তন আমরা চাই, আর এইজন্যেই আমরা মানুষ। পরিবর্তন থেকে পরিবর্ধন। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিত্যনতুন চিন্তা করার একটা ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে বাঙালিদের; আমরা এই তুচ্ছ হেলাফেলার জিনিশ নই!’
‘পরিবর্তন আর রূপান্তরের তফাত বুঝিস?’
‘কি রকম?’ চোখ কোঁচকালো মুরাদ।
‘গ্রেগর স্যামসা রূপান্তরিত হয়েছিলো পোকায়-‘
‘তার মানে পরিবর্তমান সমাজের মানুষরা তোর কাছে সন্দেহের পাত্র। গদী আঁকড়ে থাকা ক্ষমতালোভীদের মতোই নিছক মাছ ধরার জন্যে পানি ঘোলা করছিস তুই। কতোগুলো বাতিক আছে তোর, দুঃস্বপ্নের নরকে হাবুডুবু খাওয়ার অভ্যেসটা মজ্জাগত দোষ হ’য়ে দাঁড়িয়েছে।’