সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রথম আলোর একটি শিরোনাম “কোটা সংস্কার আন্দোলন: কারাগারে বসে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেলেন দুই শিক্ষার্থী”
কারাগারে বসে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন দুই শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন মো. ফাহিম পারভেজ ও মো. জাহিদ হোসেন। তাঁরা বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে আছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের করা মামলায় তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
কারাগারে ফাহিম ও জাহিদের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর। গত ৩১ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্রে বলা হয়, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনায় দুই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র, প্রশ্নপত্র, হাজিরাপত্র সরবরাহ এবং কারা অভ্যন্তরে পরীক্ষা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।
ইত্তেফাক এর একটি শিরোনাম “আন্দোলন প্রত্যাহারের স্টেটমেন্ট স্বেচ্ছায় দিইনি: ৬ সমন্বয়ক”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় না দেওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছয় সমন্বয়ক।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সাংবাদিকদের পাঠানো ৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৬ জুলাই ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি পুলিশ জোরপূর্বক মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসে। মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ জুলাই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে সাইন্সল্যাব থেকে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে ভোররাতে বাসা ভেঙে জোরপূর্বক ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়।
মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তা’র নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না।
ছয় সমন্বয়ক বলেন, যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এই প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না ৷ আমরা আমাদের ভাই বোনদের খুনের বিচার চাই।
আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে তারা বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি আমরা স্বেচ্ছায় দেইনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারাদেশের সকল সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না। ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
বণিক বার্তার একটি শিরোনাম “শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল ও দেয়াল লিখনেও পুলিশি বাধা”
সারা দেশে ছাত্র হত্যা, নির্বিচারে গ্রেফতার ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গতকাল ছিল রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ কর্মসূচি। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সমবেত সংগীত, মৌন মিছিল, দেয়াললিখন, গ্রাফিতি অঙ্কন ও মোমবাতি প্রজ্বালন করেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-জনতা। এ কর্মসূচিতে কয়েকটি স্থানে পুলিশি বাধার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনকে আটক করা হলেও প্রতিবাদের মুখে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে গতকাল দুপুরে গ্রাফিতি অঙ্কন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচিতে যোগ দেন কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষকরা মৌন মিছিল করেন।
সরজমিনে দেখা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে সামনে কাপড় বিছিয়ে গ্রাফিতির মাধ্যমে বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে ও পশ্চিম পাশের দেয়ালেও বিভিন্ন প্রতিবাদী লেখা ও চিত্র অঙ্কন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এখানে সংবাদপত্রে ছাপা পুলিশি নির্যাতনের ছবিসংবলিত পোস্টার আঁকছেন তারা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটকের চেষ্টা করে।
পুলিশের উদ্দেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন বলেন, ‘আপনাদের কাছে শিক্ষার্থীদের আটক করার কোনো নথিপত্র নেই। সন্দেহের বশে কাউকে আটক করা অন্যায়। আপনারা এমনটা কখনই করতে পারেন না। এরপর যদি কোনো ছাত্রের গায়ে হাত পড়ে এবং আমার সহকর্মীদের গায়ে আঘাত লাগে, এটা কিন্তু আমরা মেনে নেব না।’
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১২ শিক্ষার্থীকে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ববির প্রধান গেট থেকে প্রবেশের সময় তাদের আটক করা হয়। শিক্ষার্থীদের আটকের পর ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পুলিশ সদস্যদের অবস্থানের পাশাপাশি মহড়া দিয়েছেন বর্ডার গার্ড সদস্যরা। তবে পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে পরে ছেড়ে দেয়।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন ববি আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় শুভ, ভূমিকা সরকার, অনিকা সরকার, সুজন আহমেদ, সিবাত আহমেদ, রাকিব আহমেদ, আরমান জাওয়াদ আবীর, মো. ইয়ামিন, মাহফুজুর রহমান, মো. ইমন ও মাহমুদুল হাসান।
একাধিক শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ছাত্র-শিক্ষক সংহতির কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় যানবাহন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ প্রথমে পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে। এরপর সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ আরো সাতজন বাস থেকে ক্যাম্পাসের সামনে নামামাত্র তাদেরও আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেতা রক্তিম হাসানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দেয়। এরপর ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। এ সময় ক্যাম্পাসের সামনের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে কিছু সময় পরপর মহড়া দিতে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদের। পুলিশের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্রের লড়াই”
শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে সরকারের সর্বগ্রাসী উদ্দেশ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতায় স্থিতিস্থাপকতার (রিসাইলেন্স) বিষয়ও। এই সঙ্কটকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতির ‘আত্মার লড়াই’ (ব্যাটল ফর সাউল) হিসেবে দেখা যেতে পারে। একদিকে আছেন ৭৬ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৫ বছর ধরে তিনি খাঁটি, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করেননি। তিনি বাংলাদেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে একটি সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশে তার এই সর্বগ্রাসী দৃষ্টিভঙ্গিতে কেউ তার বা তার সরকারের কোনো জবাবদিহিতা চাইতে পারবেন না। যদি কেউ প্রতিবাদ করেন তাহলে সহিংস দমনপীড়নের মুখে পড়তে হয় তাকে বা তাদেরকে। এর মধ্যে আছে মৃত্যু, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম ও বন্দি করে রাখা।
প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেকোনো রকম সহিংসতাকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ এবং ‘ষড়যন্ত্রকারী’দের কাজ বলে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত পিতা ও দেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নকে পথচ্যুত করতে চায়।
এই লড়াইয়ের অন্যদিকে আছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ।
এর আগে ২০১৮ সালের বিক্ষোভের সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরসুরিদের জন্য সরকারি চাকরিতে শতকরা ৩০ ভাগ কোটা বাতিল দাবি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওই কোটা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে তা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনার সরকার তার দলীয় ক্যাডারদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্য এই কোটা ব্যবহার করছিলেন। ২০১৮ সালের বিক্ষোভে কোটা ব্যবস্থা বাতিল হয়।