০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০) প্রোটিন নির্মাণ: ন্যানোটেকনোলজির নতুন যুগ ‘একই কাঠামো গড়ে ভিন্ন ফল আশা করা উন্মাদনা’: লস অ্যাঞ্জেলেস কি নিজেকে দাবানল-নিরাপদ করতে পারবে? কীভাবে সিঙ্গাপুরকে ‘তৃতীয় চীন’ হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন—লি কুয়ান স্বৈরাচারের কবলে যখনই দেশ, তখনই ফিরে আসে নূরুলদীন সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪১) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ৭৩ সালে বস্তিবাসী ছিলো ৮ শতাংশ এখন ৪০ শতাংশ হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম

প্রোটিন নির্মাণ: ন্যানোটেকনোলজির নতুন যুগ

জৈব জ্বালানি তৈরিতে প্রচুর জমি, পানি ও সময় লাগে। সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর প্রোটিন ডিজাইনের (আইপিডি) গবেষক নেট এনিস্ট বলছেন, কৃত্রিমভাবে ডিজাইন করা প্রোটিন এ খরচ ও সময় নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে পারে। লক্ষ্য—ফসলের প্রাকৃতিক ফটোসিন্থেসিস পদ্ধতি সরল করে এর আলো শোষণের পরিসর বাড়ানো এবং পরে ওই শক্তিকে সরাসরি হাইড্রোকার্বনে রূপান্তর করা।

জৈব জ্বালানি থেকে কৃত্রিম সৌরকোষ

  • বর্তমানে ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো ফসলের লাল ও নীল আলোকশক্তি ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ ফটোসিন্থেসিস।
    •এনিস্টের দল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পুরো নতুন প্রোটিন তৈরি করছে, যেগুলো উদ্ভিদ বা ব্যাকটেরিয়ায় বসিয়েই কাজ শুরু করবে।
    • চূড়ান্ত লক্ষ্য—এ প্রোটিনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়ে এমন ‘সোলার সেল’ বানানো, যা বিদ্যুৎ নয়, সরাসরি পেট্রল তৈরি করবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রোটিন ডিজাইনের তিন ধাপ

১. কাঠামো থেকে কাজ নির্ণয়—আইপিডির RFdiffusion মডেল ২ লাখের বেশি প্রাকৃতিক প্রোটিন বিশ্লেষণ করে কোন গঠন কী কাজ করবে বুঝে নেয়।
২. কাঠামো অনুযায়ী অ্যামিনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল বানানো—ProteinMPNN ডেটাবেস দেখে কোন অ্যামিনো অ্যাসিডে কেমন ভাঁজ হবে ঠিক করে।
৩. ভার্চুয়াল যাচাই—RoseTTAFold মডেল দিয়ে নিশ্চিত করা হয়, নকশা অনুযায়ী প্রোটিনটি সত্যিই কাঙ্ক্ষিত আকার নেবে কি না। তারপর ডিএনএ সংশ্লেষ করে ব্যাকটেরিয়ায় বসিয়ে বাস্তবে পরীক্ষা।

আইপিডি-র বহুমুখী উদ্ভাবন

  • গোলাকার প্রোটিন ফাইবার জুড়ে‘চেইন মেইল’ ধরনের টেকসই কাপড়।
    • হাড় বা মুক্তার মতো হাইব্রিড জৈব-অজৈব উপাদান।
    • পিইটি প্লাস্টিক ভাঙতে সক্ষম এনজাইম, যা বর্জ্যকে কাজে লাগযোগ্য রাসায়নিক বানাবে।
    • চিপ–ভিত্তিক সেন্সর, যেগুলো প্রোটিনের ছিদ্র দিয়ে অণু চালিয়ে ‘কৃত্রিম নাকের’ মতো গন্ধ শনাক্ত করবে।

স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লবের সম্ভাবনা

  • আইপিডি–র কোভিড টিকাSKYCovione—কৃত্রিমভাবে সাজানো স্পাইক–প্রোটিন অংশ দেখিয়ে রোগ প্রতিরোধ উদ্দীপ্ত করে।
    • সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করতে ছোট, সহজে উৎপাদনযোগ্য প্রোটিন অ্যান্টিডট তৈরি।
    • অ্যালঝাইমার মোকাবেলায় প্লাক–পূর্ব প্রকৃতিকে বাঁধতে বিশেষ প্রোটিন নকশা।
    • ক্রিসপার–ক্যাস প্রযুক্তিতে নির্দিষ্ট ডিএনএ কাটায় ‘মোলিকিউলার কাঁচি’ আরও নিখুঁত করতে কাস্টম ক্যাস এনজাইম তৈরি।

বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা

  • অ্যালফাবেটের লন্ডন–ভিত্তিকIsomorphic Labs এলি লিলি ও নোভার্টিসের সঙ্গে ওষুধ–উন্নয়ন চুক্তি করেছে; Google DeepMind তৈরি করছে AlphaProteo।
    • এমারিভিলের Profluent ও নিউইয়র্কের EvolutionaryScale—বৃহৎ ভাষা মডেলের মতো পদ্ধতিতে (ESM3) বিলিয়ন–মাত্রার ডেটাবেস ব্যবহার করে নতুন প্রোটিন সাজাচ্ছে। লক্ষ্য—নতুন ক্রিসপার–ক্যাস সরঞ্জাম ও ভার্চুয়াল সেল মডেল তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়া।

সম্ভাব্য বৃহত্তর প্রভাব

  • ফটোসিন্থেসিস পুনর্গঠন সফল হলে জ্বালানির বাইরে ফসলের ফলনও বাড়তে পারে।
    এনজাইমনির্ভর রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রচলিত অনুঘটক চেয়ে অনেক কার্যকর হতে পারে।
    • দূর ভবিষ্যতে প্রোটিন–নির্ভর ‘লজিক গেট’ বানিয়ে কোষের জিন সক্রিয়–নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণে সিলিকন চিপ ছাড়িয়ে ৩–ডি কমপ্যাক্ট বিন্যাস সম্ভব হতে পারে।

নব্বইয়ের দশকে ন্যানোটেকনোলজি বিপ্লবের যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, সেটিই আবার শক্তিশালী বাস্তবতা হয়ে ফিরছে। মানবসৃষ্ট প্রোটিন–যুগে ন্যানোমিটার মাপের কারখানাই হয়তো আগামী দিনের শক্তি, স্বাস্থ্য ও উপাদান–বিজ্ঞানকে নতুন করে নিয়ন্ত্রণ করবে। দ্বিতীয় দফা পর্দা উঠেছে; এবার দৃশ্যপট বদলানোর পালা।

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩০)

প্রোটিন নির্মাণ: ন্যানোটেকনোলজির নতুন যুগ

১২:৫০:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

জৈব জ্বালানি তৈরিতে প্রচুর জমি, পানি ও সময় লাগে। সিয়াটলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর প্রোটিন ডিজাইনের (আইপিডি) গবেষক নেট এনিস্ট বলছেন, কৃত্রিমভাবে ডিজাইন করা প্রোটিন এ খরচ ও সময় নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিতে পারে। লক্ষ্য—ফসলের প্রাকৃতিক ফটোসিন্থেসিস পদ্ধতি সরল করে এর আলো শোষণের পরিসর বাড়ানো এবং পরে ওই শক্তিকে সরাসরি হাইড্রোকার্বনে রূপান্তর করা।

জৈব জ্বালানি থেকে কৃত্রিম সৌরকোষ

  • বর্তমানে ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো ফসলের লাল ও নীল আলোকশক্তি ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ ফটোসিন্থেসিস।
    •এনিস্টের দল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পুরো নতুন প্রোটিন তৈরি করছে, যেগুলো উদ্ভিদ বা ব্যাকটেরিয়ায় বসিয়েই কাজ শুরু করবে।
    • চূড়ান্ত লক্ষ্য—এ প্রোটিনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়ে এমন ‘সোলার সেল’ বানানো, যা বিদ্যুৎ নয়, সরাসরি পেট্রল তৈরি করবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রোটিন ডিজাইনের তিন ধাপ

১. কাঠামো থেকে কাজ নির্ণয়—আইপিডির RFdiffusion মডেল ২ লাখের বেশি প্রাকৃতিক প্রোটিন বিশ্লেষণ করে কোন গঠন কী কাজ করবে বুঝে নেয়।
২. কাঠামো অনুযায়ী অ্যামিনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল বানানো—ProteinMPNN ডেটাবেস দেখে কোন অ্যামিনো অ্যাসিডে কেমন ভাঁজ হবে ঠিক করে।
৩. ভার্চুয়াল যাচাই—RoseTTAFold মডেল দিয়ে নিশ্চিত করা হয়, নকশা অনুযায়ী প্রোটিনটি সত্যিই কাঙ্ক্ষিত আকার নেবে কি না। তারপর ডিএনএ সংশ্লেষ করে ব্যাকটেরিয়ায় বসিয়ে বাস্তবে পরীক্ষা।

আইপিডি-র বহুমুখী উদ্ভাবন

  • গোলাকার প্রোটিন ফাইবার জুড়ে‘চেইন মেইল’ ধরনের টেকসই কাপড়।
    • হাড় বা মুক্তার মতো হাইব্রিড জৈব-অজৈব উপাদান।
    • পিইটি প্লাস্টিক ভাঙতে সক্ষম এনজাইম, যা বর্জ্যকে কাজে লাগযোগ্য রাসায়নিক বানাবে।
    • চিপ–ভিত্তিক সেন্সর, যেগুলো প্রোটিনের ছিদ্র দিয়ে অণু চালিয়ে ‘কৃত্রিম নাকের’ মতো গন্ধ শনাক্ত করবে।

স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লবের সম্ভাবনা

  • আইপিডি–র কোভিড টিকাSKYCovione—কৃত্রিমভাবে সাজানো স্পাইক–প্রোটিন অংশ দেখিয়ে রোগ প্রতিরোধ উদ্দীপ্ত করে।
    • সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করতে ছোট, সহজে উৎপাদনযোগ্য প্রোটিন অ্যান্টিডট তৈরি।
    • অ্যালঝাইমার মোকাবেলায় প্লাক–পূর্ব প্রকৃতিকে বাঁধতে বিশেষ প্রোটিন নকশা।
    • ক্রিসপার–ক্যাস প্রযুক্তিতে নির্দিষ্ট ডিএনএ কাটায় ‘মোলিকিউলার কাঁচি’ আরও নিখুঁত করতে কাস্টম ক্যাস এনজাইম তৈরি।

বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা

  • অ্যালফাবেটের লন্ডন–ভিত্তিকIsomorphic Labs এলি লিলি ও নোভার্টিসের সঙ্গে ওষুধ–উন্নয়ন চুক্তি করেছে; Google DeepMind তৈরি করছে AlphaProteo।
    • এমারিভিলের Profluent ও নিউইয়র্কের EvolutionaryScale—বৃহৎ ভাষা মডেলের মতো পদ্ধতিতে (ESM3) বিলিয়ন–মাত্রার ডেটাবেস ব্যবহার করে নতুন প্রোটিন সাজাচ্ছে। লক্ষ্য—নতুন ক্রিসপার–ক্যাস সরঞ্জাম ও ভার্চুয়াল সেল মডেল তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়া।

সম্ভাব্য বৃহত্তর প্রভাব

  • ফটোসিন্থেসিস পুনর্গঠন সফল হলে জ্বালানির বাইরে ফসলের ফলনও বাড়তে পারে।
    এনজাইমনির্ভর রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রচলিত অনুঘটক চেয়ে অনেক কার্যকর হতে পারে।
    • দূর ভবিষ্যতে প্রোটিন–নির্ভর ‘লজিক গেট’ বানিয়ে কোষের জিন সক্রিয়–নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণে সিলিকন চিপ ছাড়িয়ে ৩–ডি কমপ্যাক্ট বিন্যাস সম্ভব হতে পারে।

নব্বইয়ের দশকে ন্যানোটেকনোলজি বিপ্লবের যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, সেটিই আবার শক্তিশালী বাস্তবতা হয়ে ফিরছে। মানবসৃষ্ট প্রোটিন–যুগে ন্যানোমিটার মাপের কারখানাই হয়তো আগামী দিনের শক্তি, স্বাস্থ্য ও উপাদান–বিজ্ঞানকে নতুন করে নিয়ন্ত্রণ করবে। দ্বিতীয় দফা পর্দা উঠেছে; এবার দৃশ্যপট বদলানোর পালা।