প্রধান ঘোষণা
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে গৃহীত সর্বশেষ নেতৃবৃন্দের বিবৃতিতে পহালগাম সন্ত্রাসী হামলাকে অপরাধমূলক ও অযৌক্তিক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন। আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার কথা পুনর্ব্যক্ত করছি।”
সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিশ্রুতি
ঘোষণায় সমন্বিতভাবে সন্ত্রাসী অভিযান চালানো, সন্ত্রাসীদের সীমান্ত পেরিয়ে চলাচল রোধ, অর্থায়ন বন্ধ এবং নিরাপদ আশ্রয় বঞ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বক্তৃতায় বলা হয়েছে, “সন্ত্রাসবাদে দ্বৈত মানদণ্ড অসঙ্গত এবং গ্রহণযোগ্য নয়।”
দ্বৈত মাপকাঠি ও অর্থনৈতিক বাধা
কাউকে সরাসরি উল্লেখ না করেই কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার পর অন্য দেশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি বা বাণিজ্যিক বাধা আরোপের প্রবণতা সীমাহীনহারে ব্যবহারের নিন্দা জানানো হয়েছে। বক্তৃতায় সতর্ক করা হয়েছে যে অতিরিক্ত শুল্ক ও অশুল্ক পদক্ষেপ গ্লোবাল ট্রেডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সরবরাহ শৃঙ্খল ভঙ্গ করে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায়।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সংস্কার
ব্রিকস নেতা-দেশগুলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, দায়িত্বশীল ও যুগোপযোগী করার তাগিদ দিয়েছে। তারা মনে করে যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতির বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত করা উচিত।
ইরান ও গাজা নিয়ে উদ্বেগ
ঘোষণায় ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সামরিক হামলার নিন্দা এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে ক্ষতিসাধনের তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আক্রমণ ও সেখানে মানবিক সহায়তা বঞ্চনার ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাৎক্ষণিক ও নিরাপদ মানবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
সন্ত্রাসকে মানবতার বিরুদ্ধে সর্বগ্রাসী শত্রু আখ্যায়িত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “যে কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে সন্ত্রাসকে সমর্থন গ্রহণযোগ্য নয়; আক্রান্ত দেশের পরিচয় দেখে নিন্দা জ্ঞাপন না হলে তা মানবতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বক্তব্য ও কর্মের মধ্যে দ্বৈত মানদণ্ড অগ্রহণযোগ্য; সমগ্র বিশ্বকে সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
ব্রিকস নেতারা অবিলম্বে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি গ্রহণ, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ এবং নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সমন্বিত কাজের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ঝুঁকি কমাতে ব্রিকস আন্তঃব্যাংক পেমেন্ট প্রকল্প এবং বহুপাক্ষিক গ্যারান্টি উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সভা শেষে উল্লেখ করেন, “বিশ্ব যখন নানা সংকটের সম্মুখীন, আমাদের একান্তই জরুরি শান্তি, সংলাপ ও সমন্বয় অবলম্বন করা।” তিনি যোগ করেন, “যুদ্ধ ও সহিংসতার জন্য কোনো স্থান নেই; শান্তি হল সমস্ত জীবনের কল্যাণের একমাত্র পথ।”