ভূমিকা
৭ জুলাই ২০২৫-এ লন্ডন প্যালাডিয়ামে নতুনভাবে মঞ্চস্থ ‘এভিটা’-র সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তটি আসলে মঞ্চে নয়—থিয়েটারের বাইরের রাস্তায়। ইভা পেরনের ভূমিকায় অভিনয় করা মার্কিন অভিনেত্রী র্যাচেল জেগলার সেখানেই দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে গেয়ে ওঠেন আইকনিক গান ‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি আর্জেন্টিনা’। এই ব্যতিক্রমী উপস্থাপনাই এখন ওয়েস্ট এন্ডে নাট্যপ্রেমী, পর্যটক ও পথচারি সবার মুখে মুখে।
ব্যালকনির নতুন মঞ্চ
দ্বিতীয় অঙ্কের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া খুয়ান পেরন (জেমস ওলিভাস) মঞ্চে তাঁর রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। পর্দায় সরাসরি তাঁর মুখ ভেসে ওঠে, আর অর্কেস্ট্রা ধীরে ধীরে উচ্ছ্বাস বাড়ায়। তারপর ক্যামেরা ঘুরে ধরে জেগলারকে—ডানা-ঝলমলে সাদা গাউনে থিয়েটারের রাজকীয় হল পেরিয়ে তিনি ব্যালকনিতে পৌঁছান এবং নিচে ভিড় করা শত-শত দর্শকের সামনে গানের সূচনা করেন।
থিয়েটারের ভেতরের দর্শকরা (যাদের কেউ কেউ প্রায় ২৪০ পাউন্ড পর্যন্ত গুনেছেন) এ দৃশ্য পর্দায় দেখেন, অথচ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীরা বিনা পয়সায় সরাসরি পারফরম্যান্স উপভোগ করেন। অনেকেই হাতে মোবাইল তুলে ধরে সেই মুহূর্ত বন্দি করেন।
টিকিটের দাম বনাম রাস্তায় ফ্রি শো
দামি টিকিট কেটেও মূল গানের সময়ে পর্দার উপর ভরসা করতে হওয়ায় কিছু দর্শক অনুযোগ তুলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। তবে ছয়তলার সস্তা আসনে বসে থাকা অধিকাংশ দর্শকের মতে, পুরো দু’ঘণ্টার প্রদর্শনীর তুলনায় একটি গান পর্দায় দেখা তেমন বড় ত্যাগ নয়।
অন্যদিকে, থিয়েটারের বাইরে কার্ডবোর্ডের বাক্সে বসে ‘সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি’র সঙ্গে সমার্থক এক অভিজ্ঞতা পেয়েছেন লিডস থেকে আসা শিক্ষাবিদ অ্যাডাম ম্যাককলম। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো আসন নয়, ডাস্টবিনের ওপর বসে আছি—ঠিক যেমন ইভা সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন।’’
ইতিহাস ও পরিচালকের কৌশল
১৯৭৮-এর মূল ‘এভিটা’ প্রযোজনায়ই প্রকৃত ফিল্ম ফুটেজ ও স্থিরচিত্র ব্যবহার করে বায়োপিক-ধাঁচের আবহ রচনা করা হয়েছিল। বর্তমান রিমেকের পরিচালক জেমি লয়েড এমন ‘ফিল্মিক ট্রিক’ আগেও দেখিয়েছেন—ব্রডওয়েতে চলমান তাঁর ‘সানসেট বুলেভার্ড’-এ স্ক্রিনরাইটার জো গিলিস রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গান গেয়ে সেটি ভিতরে বসা দর্শকদের স্ক্রিনে সম্প্রচারিত হয়। ফলে ‘এভিটা’-র ব্যালকনি-দৃশ্য এই ধারাবাহিকতাকেই নতুন মাত্রা দিয়েছে।
সুরকার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জনতার ভিড় সামলাতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে তবেই সমস্যা হতে পারে; সেটিই তাঁর একমাত্র উদ্বেগ।
দর্শক প্রতিক্রিয়া
প্যালাডিয়ামের সামনের হাঁটাপথে ভিড় হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে বিরক্ত করার মতো কোলাহল সৃষ্টি হয়নি। মানুষেরা নিরবে অপেক্ষা করছিলেন, জেগলার ব্যালকনিতে পা রাখতেই অভিনন্দনধ্বনিতে ফেটে পড়েন, শেষে হাত নেড়ে বিদায় জানানোর সময় আবার উচ্ছ্বাসে ভেসে যায় রাস্তাটা।
অনেকে এরপরই নাটকের টিকিট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কার্ডবোর্ডে বসে দেখা ম্যাককলম ‘পাঁচ তারকা’ রেটিং দিয়েছেন জেগলারের পারফরম্যান্সকে; তাঁর সহযাত্রী স্কট হার্ডক্যাসল হেসে প্রস্তাব দেন, ‘‘পরের বার নিজেদের চেয়ার নিয়ে এসে লোকদের বসিয়ে পয়সা নেব!’’
শেষ কথা
‘এভিটা’-র এই ব্যালকনি-সংগীত শুধু মার্কেটিং কৌশল নয়, বরং নাট্যশিল্পকে থিয়েটারের দেয়াল পেরিয়ে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দুর্লভ উদাহরণ। বিতর্ক থাকলেও লন্ডন প্যালাডিয়ামের পথে-ঘাটে দেখা এই উন্মাদনা প্রমাণ করে—ইভা পেরনের গল্প আজও মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত, আর মঞ্চশিল্প সৃজনশীল উপায়ে নিজেকে পুনর্নির্মাণ করতে জানে।