১২:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
‘একই কাঠামো গড়ে ভিন্ন ফল আশা করা উন্মাদনা’: লস অ্যাঞ্জেলেস কি নিজেকে দাবানল-নিরাপদ করতে পারবে? কীভাবে সিঙ্গাপুরকে ‘তৃতীয় চীন’ হওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন—লি কুয়ান স্বৈরাচারের কবলে যখনই দেশ, তখনই ফিরে আসে নূরুলদীন সন্ত্রাসবিরোধে দ্বৈত মানদণ্ড নেই: ব্রিকসের দৃঢ় ঘোষণায় পহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪১) প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) এর ৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ৭৩ সালে বস্তিবাসী ছিলো ৮ শতাংশ এখন ৪০ শতাংশ হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম লন্ডনের ‘এভিটা’-তে ব্যালকনি ছেড়ে জনতার গানে ডুবে গেলেন র‌্যাচেল জেগলার সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের যৌথ বিবৃতি

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম

ঢাকার হৃদয়ে বিভীষিকা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকার হোলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁয় সশস্ত্র জঙ্গিরা হামলা চালায়। বন্দুক, ধারালো অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ঢুকে পড়া ওই জঙ্গিরা বিদেশি অতিথি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত নাটক শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারীরা নির্মূল হয়।

হামলায় নিহত ২০ জন
হামলায় জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন নির্মমভাবে নিহত হন—তাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, এক মার্কিন নাগরিক, দুই বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

নিহত ভারতীয় নাগরিক: তরুণী তরুশি জৈন
ভারতীয় যে তরুণী এই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি ছিলেন ১৯ বছর বয়সী তরুশি জৈন। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার বাসিন্দা হলেও তার পরিবার তখন গুরুগাঁওয়ে বসবাস করছিল। তরুশি বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (UC Berkeley) পড়াশোনা করছিলেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকায় বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তার বাবা সঞ্জয় জৈন ঢাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
হামলার রাতে তরুশি বন্ধুদের সঙ্গে হোলি আর্টিজান বেকারিতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। জঙ্গিরা বিদেশিদের আলাদা করে নিয়ে একের পর এক হত্যার শিকার করে।

ভারতের জাতীয় শোক
তারুশি জৈনের মৃত্যুতে ভারত জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে লিখেছেন:

“We are pained by the loss of lives in the dastardly attack in Dhaka. I spoke to PM Sheikh Hasina & expressed our condolences. The attack in Dhaka has pained us beyond words. I spoke to Tarushi’s father and expressed my condolences. We are with the family in this hour of grief.”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমে খবরের কভারেজ

  • টাইমস অফ ইন্ডিয়া
    “Indian girl among 20 killed in Dhaka cafe attack”
    প্রতিবেদনটিতে তরুশি জৈনের জীবনকাহিনি, পরিবার, পড়াশোনা ও স্বপ্ন বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়।
  • দ্য হিন্দু
    “Tarishi Jain: The bright Indian student killed in Dhaka terror attack”
    এতে তার বার্কলির সহপাঠীদের শোকবার্তা, তার বাবার ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং ঢাকায় অবস্থানের বিবরণ প্রকাশিত হয়।
  • ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
    “Dhaka attack: Delhi University alumni, Berkeley student Tarishi Jain killed”
    রিপোর্টটিতে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবারের বেদনা এবং হত্যাকাণ্ডের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।
  • NDTV ও CNN-IBN
    টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাইভ রিপোর্ট, পরিবারের শোকাবস্থা এবং ভারতের সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্প্রচার করেছে।

ভারতীয় মিডিয়ার বিশ্লেষণ
হামলার পর ভারতের সংবাদমাধ্যমে বিশেষভাবে আলোচিত বিষয়গুলো ছিল:

  • জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক চরিত্র: এই হামলা কেবল বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার কথাও সামনে নিয়ে এসেছে।
  • বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করা: ভারতীয় সহ অন্যান্য বিদেশিদের বিশেষভাবে নির্বাচিত করে হত্যা করা আন্তর্জাতিক জঙ্গি কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: আগের সতর্কবার্তা উপেক্ষা, ঢাকার অভিজাত এলাকায় হামলার সম্ভাবনা, পুলিশি প্রস্তুতি ও জঙ্গি দমন নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
  • মানবিক দিক: তরুন তরুশির স্বপ্নভঙ্গ, পরিবারের শোক ও তার বাবা-মায়ের আর্তনাদ—ভারতীয় মিডিয়ায় গভীর সহানুভূতির সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সেসময়ের কয়েকটি উদ্ধৃতি

  • টাইমস অফ ইন্ডিয়া (৩ জুলাই ২০১৬):
    “She was just 19. Studying in the US. She wanted to change the world. She died in Dhaka.”
  • দ্য হিন্দু (৩ জুলাই ২০১৬):
    “Tarishi Jain had gone to Dhaka to visit her father. Little did she know it would be her last trip.”
  • ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (৪ জুলাই ২০১৬):
    “Tarishi was among the brightest. A Berkeley student with dreams of business and service. She was killed for being a foreigner.”
  • NDTV (লাইভ রিপোর্ট):
    “Tarishi’s family in Gurgaon is inconsolable. The entire nation shares their grief.”

হোলি আর্টিজান বেকারির সেই রক্তাক্ত রাত শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতের মত বিশ্বমনে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এক তরুণী শিক্ষার্থী, জীবনের সোনালি স্বপ্ন নিয়ে বাবার কাছে আসা, জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন। ভারতের সমাজ ও গণমাধ্যম যে শুধুমাত্র শোক প্রকাশ করেনি, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদের হুমকির বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছে, তা স্পষ্ট। এই হামলা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাসবাদ কোনো সীমান্ত মানে না—এটি বিশ্বমানবতাকে আঘাত করে। তরুশি জৈনের মৃত্যু ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে সহমর্মিতা সৃষ্টি করেছে, তা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার এক নতুন বার্তা হয়ে রয়েছে।

‘একই কাঠামো গড়ে ভিন্ন ফল আশা করা উন্মাদনা’: লস অ্যাঞ্জেলেস কি নিজেকে দাবানল-নিরাপদ করতে পারবে?

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ভারতীয় নাগরিক: সন্ত্রাসের আতঙ্ক ও ভারতের গণমাধ্যম

০৮:০০:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

ঢাকার হৃদয়ে বিভীষিকা
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকার হোলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁয় সশস্ত্র জঙ্গিরা হামলা চালায়। বন্দুক, ধারালো অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ঢুকে পড়া ওই জঙ্গিরা বিদেশি অতিথি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত নাটক শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারীরা নির্মূল হয়।

হামলায় নিহত ২০ জন
হামলায় জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন নির্মমভাবে নিহত হন—তাদের মধ্যে নয়জন ইতালীয়, সাতজন জাপানি, এক মার্কিন নাগরিক, দুই বাংলাদেশি এবং একজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

নিহত ভারতীয় নাগরিক: তরুণী তরুশি জৈন
ভারতীয় যে তরুণী এই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন, তিনি ছিলেন ১৯ বছর বয়সী তরুশি জৈন। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার বাসিন্দা হলেও তার পরিবার তখন গুরুগাঁওয়ে বসবাস করছিল। তরুশি বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (UC Berkeley) পড়াশোনা করছিলেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে ঢাকায় বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তার বাবা সঞ্জয় জৈন ঢাকায় একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
হামলার রাতে তরুশি বন্ধুদের সঙ্গে হোলি আর্টিজান বেকারিতে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। জঙ্গিরা বিদেশিদের আলাদা করে নিয়ে একের পর এক হত্যার শিকার করে।

ভারতের জাতীয় শোক
তারুশি জৈনের মৃত্যুতে ভারত জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে লিখেছেন:

“We are pained by the loss of lives in the dastardly attack in Dhaka. I spoke to PM Sheikh Hasina & expressed our condolences. The attack in Dhaka has pained us beyond words. I spoke to Tarushi’s father and expressed my condolences. We are with the family in this hour of grief.”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমে খবরের কভারেজ

  • টাইমস অফ ইন্ডিয়া
    “Indian girl among 20 killed in Dhaka cafe attack”
    প্রতিবেদনটিতে তরুশি জৈনের জীবনকাহিনি, পরিবার, পড়াশোনা ও স্বপ্ন বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়।
  • দ্য হিন্দু
    “Tarishi Jain: The bright Indian student killed in Dhaka terror attack”
    এতে তার বার্কলির সহপাঠীদের শোকবার্তা, তার বাবার ব্যবসায়িক যোগাযোগ এবং ঢাকায় অবস্থানের বিবরণ প্রকাশিত হয়।
  • ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
    “Dhaka attack: Delhi University alumni, Berkeley student Tarishi Jain killed”
    রিপোর্টটিতে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পরিবারের বেদনা এবং হত্যাকাণ্ডের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।
  • NDTV ও CNN-IBN
    টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ঘণ্টায় ঘণ্টায় লাইভ রিপোর্ট, পরিবারের শোকাবস্থা এবং ভারতের সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্প্রচার করেছে।

ভারতীয় মিডিয়ার বিশ্লেষণ
হামলার পর ভারতের সংবাদমাধ্যমে বিশেষভাবে আলোচিত বিষয়গুলো ছিল:

  • জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক চরিত্র: এই হামলা কেবল বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার কথাও সামনে নিয়ে এসেছে।
  • বিদেশি নাগরিকদের টার্গেট করা: ভারতীয় সহ অন্যান্য বিদেশিদের বিশেষভাবে নির্বাচিত করে হত্যা করা আন্তর্জাতিক জঙ্গি কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: আগের সতর্কবার্তা উপেক্ষা, ঢাকার অভিজাত এলাকায় হামলার সম্ভাবনা, পুলিশি প্রস্তুতি ও জঙ্গি দমন নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
  • মানবিক দিক: তরুন তরুশির স্বপ্নভঙ্গ, পরিবারের শোক ও তার বাবা-মায়ের আর্তনাদ—ভারতীয় মিডিয়ায় গভীর সহানুভূতির সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সেসময়ের কয়েকটি উদ্ধৃতি

  • টাইমস অফ ইন্ডিয়া (৩ জুলাই ২০১৬):
    “She was just 19. Studying in the US. She wanted to change the world. She died in Dhaka.”
  • দ্য হিন্দু (৩ জুলাই ২০১৬):
    “Tarishi Jain had gone to Dhaka to visit her father. Little did she know it would be her last trip.”
  • ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (৪ জুলাই ২০১৬):
    “Tarishi was among the brightest. A Berkeley student with dreams of business and service. She was killed for being a foreigner.”
  • NDTV (লাইভ রিপোর্ট):
    “Tarishi’s family in Gurgaon is inconsolable. The entire nation shares their grief.”

হোলি আর্টিজান বেকারির সেই রক্তাক্ত রাত শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতের মত বিশ্বমনে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এক তরুণী শিক্ষার্থী, জীবনের সোনালি স্বপ্ন নিয়ে বাবার কাছে আসা, জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতার শিকার হন। ভারতের সমাজ ও গণমাধ্যম যে শুধুমাত্র শোক প্রকাশ করেনি, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদের হুমকির বিষয়ে সচেতনতা বাড়িয়েছে, তা স্পষ্ট। এই হামলা স্মরণ করিয়ে দেয় যে সন্ত্রাসবাদ কোনো সীমান্ত মানে না—এটি বিশ্বমানবতাকে আঘাত করে। তরুশি জৈনের মৃত্যু ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে সহমর্মিতা সৃষ্টি করেছে, তা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার এক নতুন বার্তা হয়ে রয়েছে।