আমরা কি বারবার নব্বইয়ের দশকে ফিরেই যাব?
১৯৯৯-এর ৩১ ডিসেম্বর সকালে আমি ব্রুকলিনের বাড়ি থেকে সাবওয়ে ধরে ম্যানহাটনে যাই। সেভেনথ অ্যাভিনিউ ও ৩৪তম স্ট্রিটের কোণে মিলেনিয়াম ঘড়ির ছবি তুলি আমার ৩৫-মিলিমিটার কোডাক ক্যামেরায়। ১৯৯৮ সালে—শহরে আসার ঠিক এক বছর পর থেকে—ঘড়িটি ২০০০ সালের আগমনের ক্ষণ গুনছিল। দিনটির স্মৃতি ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। ছবিটা তুলে দ্বীপ (ম্যানহাটন) ছেড়ে তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরতে চাই; যদি ঠিক মধ্যরাতে পৃথিবী থেমে যায়—বা তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটে—তাহলে বাড়ির কাছেই থাকব।
২০০০ সালের ১ জানুয়ারির প্রথম প্রহরে, উইলিয়ামসবার্গের ঘাম ঝরানো এক বারে সারা রাত নেচে বাড়ি ফিরেই ডায়েরিতে ঝলমলে গোলাপি পেনে লিখলাম, “বেঁচে গেলাম!”
সবকিছু বদলে গেছে, অথচ কিছুই বদলায়নি।
ধরা যাক, ১৯৯৯-এর নববর্ষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ে আজ হঠাৎ ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’ ঢঙে জেগে উঠলাম—দেখব, সেদিনের বহু কিছুরই পুনরাবৃত্তি চলছে। আরবান আউটফিটার্সে এখনো বেবি-টি আর বেবি-ডল ড্রেস বিক্রি হচ্ছে। আমার সেই পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুট ক্যামেরা, ফ্লিপ ফোন, এমনকি ধূমপানও আবার ফিরেছে। সবচেয়ে চমকজনক, তখনকার বহু পরিচিত মুখই আজও ক্ষমতার মঞ্চে, বিশেষ করে নিউ ইয়র্কে। একটি ছোট তালিকা দেখলেই হবে: “সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি”-র স্পিন-অফ “অ্যান্ড জাস্ট লাইক দ্যাট”-এর তৃতীয় মৌসুম শুরু হয়েছে—ক্যারির এখনো এড্যানকে ঘিরে আকাশ-কুসুম ভাবনা। গুইনেথ প্যালট্রো ভ্যানিটি ফেয়ারের এপ্রিল সংখ্যার প্রচ্ছদে। জেনিফার লোপেজ আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস উদ্বোধন করেছেন। সামারের ব্লকবাস্টারে ব্র্যাড পিট ও টম ক্রুজ—দুজনেই মুখ্য ভূমিকায়। শন কম্বসের (ডিডি) বিচার সদ্য শেষ হয়েছে। টিকটকে ক্যারোলিন বেসেট-কেনেডি প্রায় অমর। রায়ান মারফির আসন্ন “আমেরিকান লাভ স্টোরি”-র বিষয় জন এফ. কেনেডি জুনিয়র ও বেসেটের ট্র্যাজিক সম্পর্ক। পোশাক পরীক্ষার ছবি ছড়িয়ে পড়তেই ইন্টারনেটের একাংশ কয়েক দিন ধরে এতটাই উত্তেজিত ছিল যে, মারফিকে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে।
শুধু পপ-সংস্কৃতি নয়। নিউ ইয়র্কাররা এখনো সিনেটের মঞ্চে চাক শুমারকে দেখছে; ১৯৯৯-এ নির্বাচিত হয়ে তিনি আর পেছনে তাকাননি। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট? নব্বইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পই তো সম্পদ আর বাড়াবাড়ির প্রতিমূর্তি ছিলেন। মনে হচ্ছে, জেন এক্স যেন অদ্ভুত এক প্রতিশোধ নিচ্ছে—আমরা যাদের ক্ষমতায় এনেছিলাম, যে সংস্কৃতি গড়েছিলাম, তারাই এখন বিশ্বের নিয়ামক।
নব্বইয়ের মোহের বড় অংশই একক সংস্কৃতির জন্য হাহাকার—স্মার্টফোন-পূর্ব যুগ, যখন সবাই একই সময়ে প্রায় একই অভিজ্ঞতা ভাগ করত। তবে বিষয়টি আরও গভীর।
২০০৪-এর “সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি”-র এক পর্বে লেক্সি ফেদারস্টোন (অভিনয়ে ক্রিস্টেন জনস্টন) আর্তি করে জিজ্ঞেস করে, “আনন্দ কোথায় গেল?” কথাটা বলেই স্টিলেটো পিছলে পড়ে সে মারা যায়। সহস্রাব্দ পেরোতে না পেরোতেই আমরা এক কল্পিত, দিব্যি উদাসীন অতীতে ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম। লোকেশন-ট্যাগিং-বিহীন, কয়েন-চালিত ফোনের যুগের সেই তুলনামূলক নিরাপদ, বাধাহীন স্বতঃস্ফূর্ততাই যেন নব্বইয়ে ফেলে এসেছি।
নব্বইয়ের শেষভাগের নিউ ইয়র্ক—বা অন্তত তার কল্পিত রূপ—আমাদের যা দিয়েছিল, আজও তাই তীব্রভাবে কাঙ্ক্ষিত: বাস্তব জীবনের সংযোগ এবং এর সঙ্গে সম্পদ, সৌন্দর্য ও ভালোবাসার সম্ভাবনা।
তৎকালীন ‘পাওয়ার’ রেস্টুরাঁ ব্যালথাজার ও পাস্তিসের স্রষ্টা কিথ ম্যাকন্যালি এখন ইনস্টাগ্রামে দারুণ সক্রিয়, সদ্য আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন। গ্রেডন কার্টার, যিনি ১৯৯২-এ ভ্যানিটি ফেয়ার সামলেছিলেন, এখন ‘এয়ার মেইল’ নামের জনপ্রিয় নিউজলেটার চালান। টিনা ব্রাউন—যাকে কার্টার সরিয়ে দিয়েছিলেন—১৯৯৯-এ স্বল্পায়ু ‘টক’ ম্যাগাজিনের উদ্বোধনী পার্টি দিয়ে শেষ বড় মিডিয়া আড্ডাগুলোর একটি করেছিলেন; এখন তিনিও সাবস্ট্যাকের তারকা। ১৯৮৮-এ ভোগের হাল ধরা আনা উইন্টুর সদ্যই সম্পাদকীয় পদ ছেড়েছেন; নব্বইতেই তিনিই ফ্যাশনের চোখ রচনা করেন।
রুডি জুলিয়ানির মেয়রকালে (১৯৯৪-২০০১) ম্যানহাটন যেন “মজা-নির্জন এক দাওয়াত” হয়ে উঠেছিল। ১৯৯৬-৯৯-এ অপরাধহারে বড় পতন, শেয়ারবাজারে ডাউ সূচকের ঊর্ধ্বগতি, রিয়েল-এস্টেটের দাম আকাশছোঁয়া। ১৯৯৬-এ এইডস মোকাবিলায় কার্যকর অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি আসায় সত্তরের দশকের যৌন স্বাধীনতার হেডোনিজম আবার জেগে ওঠে।
ট্যাবলয়েড-মাধ্যমের তীক্ষ্ণ নজর যখন নিউ ইয়র্কে পড়ে, তখন তারা গথামের চেয়ে এমেরাল্ড সিটি বেশি দেখে—অগাধ অর্থ, গাদা-গাদা এক্সপেন্স অ্যাকাউন্ট, অসংখ্য পার্টি। সহস্রাব্দের দোলাচলে এসবই যেন বাড়তি ঝাঁজ পায়।
এই নবরূপী শহর—চকচকে টাইমস স্কোয়ারসহ—তেমন অন্ধকার-শূন্য ছিল না। ১৯৯৭-এ জুলিয়ানির পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা হাইতিয়ান অভিবাসী অ্যাবনার লুইমাকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করে—যা ২০২০-এর বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের পূর্বাভাস। ১৯৯৯-এ পুলিশ ২৩-বছরের নিরস্ত্র অভিবাসী আমাদু ডায়ালোকে ৪১টি গুলি চালিয়ে হত্যা করে। শুধু পুলিশি নির্যাতনই নয়—১৯৯৯-এর শেষভাগে জুলিয়ানি হাতি-মল বসানো ক্রিস অফিলির ‘দ্য হলি ভার্জিন মেরি’ নিয়ে বিতর্কে ব্রুকলিন মিউজিয়ামকে উচ্ছেদেরও চেষ্টা করেছিলেন।
সেই সময়ের অনিবার্য বিপর্যয়-সংবেদন যেন আমরা আবার ফিরে পেয়েছি। ওয়াই-টু-কে ভয়ের সবটুকুই মিথ্যা ছিল; সত্যিকারের অশনি সংকেত আসে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর। তারপর থেকেই আমাদের দিন কাটছে হাতের তালুতে বন্দি বুদ্ধিমান পর্দাগুলোর সঙ্গে।
এখন আবার আমরা এক মহাপ্রলয়-সঙ্কুল মুহূর্তে—এক শহর দাঁতে দাঁত চেপে সেই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে লড়ছে, যিনি এখান থেকে উঠে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ভেঙে ফেলেছেন।
তারপরও ভাবি, এই নস্টালজিয়ার অবসান কোথায়?
এক ঝলক হয়তো আমরা দেখেছি ২৪ জুনের ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাইমারিতে, যেখানে ৩৩-বছরের গণতান্ত্রিক সমাজবাদী জোরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে—রাজনীতিতে যার অভিষেক, অনুমান করুন, নব্বইয়ের দশকেই—উড়িয়ে দেন। হঠাৎ মনে হলো, তরুণ সংস্কৃতি একেবারে নতুন ধরনের সমষ্টিকে সামনে আনতে পারে, যা এই মুহূর্তের উপযোগী। হয়তো আমরা অবশেষে নতুন যুগকে সৃজনশীলতায় স্বাগত জানাতে প্রস্তুত—আর সম্ভবত খানিকটা আনন্দও যোগ হবে।
লেখক: গ্লিনিস ম্যাকনিকল ‘আই’ম মোস্টলি হিয়ার টু এনজয় মাইসেলফ’-এর লেখক এবং ‘ওয়াইল্ডার: এ রেকনিং উইথ লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডার’ পডকাস্টের সঞ্চালক।