২০১৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত বর্বরোচিত জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে নিহত হন ২৯ জন। এদের মধ্যে তিনজন ছিলেন বাংলাদেশি সাধারণ নাগরিক। এঁদের পরিচিতি, প্রোফাইল ও পারিবারিক তথ্য নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন:
নিহতদের পরিচিতি
১. ফারাজ আইয়াজ হোসেন
ফারাজ আইয়াজ হোসেনের বয়স ছিল ২০ বছর। জন্ম ১৫ এপ্রিল ১৯৯৬। ফারাজ ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত লতিফুর রহমানের নাতি। তাঁর বাবা মুহাম্মদ ওয়াকের বিন হোসেন ও মা সিমীন রহমান। বড় ভাই জারাইফ আয়াত হোসেন। ফারাজ যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টার এমরি ইউনিভার্সিটির গোইজুয়েটা বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। হামলার সময় তিনি গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।
হামলার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে তিনি হোলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসীরা তাকে চলে যেতে দিলেও বন্ধুদের ফেলে তিনি বের হতে রাজি হননি বলে কথিত আছে। আবার তাকে নিয়ে অন্য ন্যারেটিভও আছে।
২. সাইফুল ইসলাম
সাইফুল ইসলাম হোলি আর্টিজান বেকারির একজন রন্ধনকর্মী ছিলেন। বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। তাঁর পরিচিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি। পারিবারিক সূত্রও তেমন পাওয়া যায়নি। হামলার রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় ভুলক্রমে তাকে হামলাকারী মনে করে গুলি করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, সাইফুল একজন নিরীহ নাগরিক ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক ভুল।
৩. অজ্ঞাত বাংলাদেশি নাগরিক
নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। গণমাধ্যম ও সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনেও তাঁর পরিচিতি বা পরিবারের তথ্য প্রকাশিত হয়নি। হামলার পর থেকে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, তৃতীয় বাংলাদেশি নিহতের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এখনও রহস্যাবৃত রয়ে গেছে।
হামলার পটভূমি ও প্রতিক্রিয়া
২০১৬ সালের এই নৃশংস জঙ্গি হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। সারা বিশ্বে এই ঘটনা আলোড়ন তোলে এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অভিযান চালানোর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জানানো হয় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা
বাংলাদেশের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো হামলার পরবর্তী দিন থেকে নিহতদের পরিচয় ও তাঁদের পরিবারের বিষয়ে ব্যাপক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সাইফুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও আলোচিত হয় ।
এই হামলা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদ দমনে নতুন নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগে অনুপ্রাণিত করে। নিহত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতি আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে দেশের মানুষের মনে।