০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়ে হতাশ নারী শিক্ষার্থীরা, মৌলবাদীদের উত্থানে বাড়ছে শঙ্কা

সারাংশ

  • • জুলাই ২০২৪ সালের আন্দোলনে নারীরা নেতৃত্ব দিলেও আন্দোলনের পর মৌলবাদী প্রবণতা বেড়েছে
  • • শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নারীরা সবচেয়ে বেশি হামলা, হুমকি ও সামাজিক ঘৃণার শিকার হচ্ছেন
  • • মৌলবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ, নারীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মতপ্রকাশ নিশ্চিত করা জরুরি

জুলাই আন্দোলনের উত্তাল সময় পার হয়ে গেছে প্রায় এক বছর। কিন্তু আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদানকারী নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন হতাশাগ্রস্ত। এই হতাশার অন্যতম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশে মৌলবাদী প্রবণতার বৃদ্ধি। এর ফলে বিশেষ করে শিক্ষিত নারীরা গভীর আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

হতাশার কারণ

গত বছরের জুলাইয়ে তরুণ-তরুণীরা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নারীর অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমেছিলেন। নারী শিক্ষার্থীরা এসব ইস্যুতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দেখলেন, তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার বদলে উল্টো দেশে মৌলবাদী শক্তিগুলো আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তানিয়া রহমান( মূল নাম পরিবর্তন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্যে)  বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমরা সাম্যের স্বপ্ন দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম দেশের রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি উল্টো মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, নারীর স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত হচ্ছে।”

মৌলবাদের উত্থান ও নারীদের আতঙ্ক

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে মৌলবাদী প্রবণতার একটি নতুন তরঙ্গ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর মৌলবাদীদের হামলা ও হুমকি বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নারীরা।

মানবাধিকার কর্মী ও নারীবাদী গবেষকদের মতে, “মৌলবাদ সবসময় নারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নারীর স্বাধীনতাই তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু। শিক্ষিত নারীরা মৌলবাদীদের কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি, কারণ তারা অধিকার সচেতন এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ফলে শিক্ষিত নারীরা সবসময় মৌলবাদীদের প্রথম টার্গেট হয়।”

কেন শিক্ষিত নারীরাই বেশি শঙ্কিত?

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিক্ষিত নারীরা সাধারণত আত্মসচেতন ও অধিকার সচেতন হন। তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে খোলাখুলি মত প্রকাশ করেন। এই স্বাধীন ও প্রগতিশীল মনোভাব মৌলবাদীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্যই মৌলবাদীরা শিক্ষিত নারীদের চাপে রাখতে ও তাদের স্বাধীনতা সংকুচিত করতে চায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “নারীরা শিক্ষার মাধ্যমে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন, যা মৌলবাদী গোষ্ঠীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। এজন্য শিক্ষিত নারীরা মৌলবাদীদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন এবং তারা বেশি আতঙ্কে থাকেন।”

ভবিষ্যতের পথে করণীয়

নারী শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে রাষ্ট্র ও সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। মৌলবাদ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, নারী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করাই হবে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাঁচিয়ে রাখতে হলে নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়ে হতাশ নারী শিক্ষার্থীরা, মৌলবাদীদের উত্থানে বাড়ছে শঙ্কা

০৫:০৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

সারাংশ

  • • জুলাই ২০২৪ সালের আন্দোলনে নারীরা নেতৃত্ব দিলেও আন্দোলনের পর মৌলবাদী প্রবণতা বেড়েছে
  • • শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নারীরা সবচেয়ে বেশি হামলা, হুমকি ও সামাজিক ঘৃণার শিকার হচ্ছেন
  • • মৌলবাদ প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ, নারীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মতপ্রকাশ নিশ্চিত করা জরুরি

জুলাই আন্দোলনের উত্তাল সময় পার হয়ে গেছে প্রায় এক বছর। কিন্তু আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদানকারী নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন হতাশাগ্রস্ত। এই হতাশার অন্যতম কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশে মৌলবাদী প্রবণতার বৃদ্ধি। এর ফলে বিশেষ করে শিক্ষিত নারীরা গভীর আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

হতাশার কারণ

গত বছরের জুলাইয়ে তরুণ-তরুণীরা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং নারীর অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমেছিলেন। নারী শিক্ষার্থীরা এসব ইস্যুতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দেখলেন, তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার বদলে উল্টো দেশে মৌলবাদী শক্তিগুলো আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তানিয়া রহমান( মূল নাম পরিবর্তন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্যে)  বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমরা সাম্যের স্বপ্ন দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম দেশের রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি উল্টো মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হচ্ছে, নারীর স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত হচ্ছে।”

মৌলবাদের উত্থান ও নারীদের আতঙ্ক

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে মৌলবাদী প্রবণতার একটি নতুন তরঙ্গ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর মৌলবাদীদের হামলা ও হুমকি বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষিত ও প্রগতিশীল নারীরা।

মানবাধিকার কর্মী ও নারীবাদী গবেষকদের মতে, “মৌলবাদ সবসময় নারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। নারীর স্বাধীনতাই তাদের প্রথম লক্ষ্যবস্তু। শিক্ষিত নারীরা মৌলবাদীদের কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি, কারণ তারা অধিকার সচেতন এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ফলে শিক্ষিত নারীরা সবসময় মৌলবাদীদের প্রথম টার্গেট হয়।”

কেন শিক্ষিত নারীরাই বেশি শঙ্কিত?

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিক্ষিত নারীরা সাধারণত আত্মসচেতন ও অধিকার সচেতন হন। তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে খোলাখুলি মত প্রকাশ করেন। এই স্বাধীন ও প্রগতিশীল মনোভাব মৌলবাদীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্যই মৌলবাদীরা শিক্ষিত নারীদের চাপে রাখতে ও তাদের স্বাধীনতা সংকুচিত করতে চায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “নারীরা শিক্ষার মাধ্যমে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন, যা মৌলবাদী গোষ্ঠীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। এজন্য শিক্ষিত নারীরা মৌলবাদীদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন এবং তারা বেশি আতঙ্কে থাকেন।”

ভবিষ্যতের পথে করণীয়

নারী শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে রাষ্ট্র ও সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। মৌলবাদ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, নারী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করাই হবে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। জুলাই আন্দোলনের চেতনা বাঁচিয়ে রাখতে হলে নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।