নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা’-এর মূল চরিত্র দেওয়ান গাজী সবকিছুই খেতে চান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার অদম্য ক্ষুধা, অতৃপ্তি এবং সবকিছু গ্রাস করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে এটি ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির একটি গভীর প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
ক্ষমতার লোভে অন্ধ: দেওয়ান গাজীর চরিত্র
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র দেওয়ান গোজী এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ক্ষমতা ও সম্পদের লোভে অন্ধ হয়ে পড়েন। তিনি কেবল খাদ্য নয়, অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা, এমনকি মানুষের আবেগ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাও আত্মসাৎ করতে চান। এ ধরনের লোভ কতটা নৈতিক অবক্ষয় ও দুর্নীতির দিকে নিয়ে যায়, নাটকটি তা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
বাস্তব বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতীক
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতা পেলে সর্বগ্রাসী মানসিকতার প্রকাশ ঘটে প্রায়শই। দেওয়ান গাজী এই রূপক প্রতীক; ক্ষমতার কেন্দ্রে আসা ব্যক্তিরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার অদম্য ইচ্ছায় মত্ত হয়ে পড়েন। এই আকাঙ্ক্ষা দুর্নীতিতে পরিণত হয়। নাটকে দেওয়ান গাজীর চরিত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অন্তর্নিহিত মনোভাবকে উৎকৃষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
লোভের পরিণতি: সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষয়
‘দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা’ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষুধা বা আকাঙ্ক্ষার গল্প নয়, এটি সামাজিক মূল্যবোধের পতনেরও দলিল। দেওয়ান গাজী যখন সবকিছু নিজের কব্জায় নিতে চান, তখন তার চারপাশের সমাজ নৈতিকভাবে ভেঙে পড়ে। দুর্নীতির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরে। এভাবেই নাটকটি ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সমাজে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে।
সচেতনতার আহ্বান
নাটকের মূল বার্তা স্পষ্ট—লোভ ও দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। দেওয়ান গাজীর চরিত্রের মাধ্যমে নাটকটি জনগণ ও রাজনীতিকদের প্রতি শক্তিশালী সতর্কবার্তা প্রেরণ করে। ক্ষমতার লাগামহীন ক্ষুধা কীভাবে সামাজিক কাঠামো ক্ষয়িষ্ঠ করে, তা উপলব্দি করানোই নাটকটির লক্ষ্য। ‘দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা’ কেবল একটি নাটক নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতীকী দলিল, যা দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় ক্ষমতার অতলান্ত ক্ষুধা শেষ পর্যন্ত পুরো সমাজকে গ্রাস করতে পারে।