শ্রী নিখিলনাথ রায়
আমরা মুতাক্ষরীন হইতে তাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান- করিতেছি। মুতাক্ষরীনকার বলেন যে, যৎকালে সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদে আনীত হন, তৎকালে মীরজাফর সিদ্ধিপানে বিভোর হইয়া মধ্যাহ্ন-নিদ্রায় অভিভূত ছিলেন। তাঁহার পুত্র মীরণ সিরাজ উদ্দৌলার উপস্থিতির সংবাদ শ্রবণমাত্র জাফরাগঞ্জের বাটীতে তাঁহাকে বন্দী করিয়া, একে একে অনুচরবর্গের নিকট হতভাগ্যের জীবন নাশের প্রস্তাব করে; কিন্তু কেহই তাহাতে সম্মত হইতে ইচ্ছা করিল না।
অবশেষে মহম্মদী বেগ নামে এক ব্যক্তি এই ভীষণ কাণ্ড সম্পা- দনের জন্য স্বীকৃত হইল। এই মহম্মদী বেগ সিরাজউদ্দৌলার পিতা ও মাতামহীর অন্নে প্রতিপালিত হয়। আলিবন্দীর বেগম একটি অনাথ- কুমারীর সহিত তাহার বিবাহও প্রদান করেন। মহম্মদী বেগ সে সমস্ত বিস্তৃত হইয়া, সিরাজের হত্যাসম্পাদনে প্রবৃত্ত হইল। পাষণ্ড অস্ত্রহস্তে সিরাজের কক্ষে প্রবেশ করিলে, তিনি বুঝিতে পারিলেন যে, তাঁহার জীবনবায়ুর অবসান হইতে আর বিলম্ব নাই। তখন তিনি অবনতভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রার্থনা করিয়া, তাঁহার অতীত কার্য্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন।
অবশেষে ঘাতকের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ: করিয়া স্খলিতকণ্ঠে বলিতে লাগিলেন,-“তাহারা কি আমাকে রাজ্যের কোন নির্জন প্রান্তে বাস করিয়া যৎসামান্য জীবিকার সময় অতিবাহিত করিতে দিবেনা।”
অতঃপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়া পুনর্ব্বার বলিয়া উঠিলেন,- “না, তাহারা তাহা করিবে না, আমি হোসেন কুলী খাঁর মৃত্যুর জন্য অবশ্যই প্রাণবিসর্জন দিব।” এই কয়েকটি কথা উচ্চারণ করিবামাত্র সেই কৃতা দূতস্বরূপ ঘাতক সিরাজের বঙ্গবিখ্যাত রূপলাবণ্যসম্পন্ন দেহযষ্টিতে উপর্যুপরি তরবারির আঘাত করিতে লাগিল! সিরাজের উত্তপ্ত শোণিতধারায় বসুন্ধরার বক্ষঃস্থল প্লাবিত হইল! “আমার কৃত কার্য্যের যথেষ্ট হইয়াছে, হোসেন কুলী খাঁর মৃত্যুর প্রতি-শোধ হইল,” এই কথা বলিতে বলিতে বিশ্বনিয়ন্তাকে স্মরণ করিয়া সিরাজ সর্ব্বংসহার ক্রোড়ে নিপতিত হইলেন।