শশাঙ্ক মণ্ডল
প্রথম অধ্যায়
এসব এলাকার কুটির শিল্পীরা ইংরেজের শিল্প-বাণিজ্য নীতির ফলে জীবিকাচ্যুত হয়ে পড়ার সাথে সাথে বাধ্য হয়েছে সুন্দরবনে গিয়ে চাষের কাজে নিয়োজিত হতে। নতুন এসব জমিদারিতে কামার কুমোর প্রভৃতি বিভিন্ন পেশার মানুষদের আকৃষ্ট করে নিয়ে গেছে জমিদাররা। “খাচ্ছিল তাঁতী তাঁত বুনে, বাঁধালো বিপদ এঁড়ে গোরু কিনে” এ প্রবাদটি এই ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইংরাজ রাজত্বে বিভিন্ন সময়ে প্রজাবিদ্রোহ ঘটেছে, তা ইংরাজের দানবীয় অত্যাচারে দমন করা হয়েছে।
অত্যাচারিত মানুষগুলি পুরনো আশ্রয় ফেলে সুন্দরবনের নব উঠিত ভূমিকে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ১৮৩১-এর পর তিতুমীরের অনেক শিষ্য সরফরাজপুর কুশদহ পরগণা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে, তাদের বংশধররা সুন্দরবনের বিভিন্ন থানায় এখনও বসবাস করছে। ফারজী আন্দোলন পরবর্তীকালে অনেক মানুষ খুলনা বরিশালের দক্ষিণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। এর সাথে সামাজিক অপরাধীরা, মগজলদস্যুরা সুন্দরবনের বিভিন্নপ্রান্তে নিরাপদ ভূমি হিসাবে বসবাস শুরু করে।
মেদিনীপুরের ভয়ঙ্কর বন্যা বাধ্য করেছিল অনেক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সুন্দরবনে এসে বসতি গড়ে তুলতে; স্থানীয় মানুষের কাছে এখনও এরা ভাসা নামে পরিচিত হতে বাধ্য হয়েছে। এককথায় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে- সকলকে ঠাঁই দিয়ে ব্রিটিশ রাজত্বে বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের মধ্যে সুন্দরবন এক বিশাল ভূখণ্ড হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন ব্রিটিশযুগে সুন্দরবনের দক্ষিণের যে স্থানগুলিতে নতুনভাবে বসবাস শুরু হল তা নবসৃষ্ট ভূমি।
ঊনিশ শতকের পূর্বে সেখানে কোন মনুষ্য বসবাসের চিহ্ন ছিল না। ভৌগোলিকরা বলেছেন- নদীর জোয়ারের জল অতি সহজে পার্শ্ববর্তী এলাকাকে প্লাবিত করতে পারে। জমি পলি পড়ে উঁচু হবার আগেই বসতি তৈরি হয়েছে- সেজন্য বাঁধ দিতে হচ্ছে- এসব এলাকা নবসৃষ্ট ভূমি; গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের পলিতে গঠিত- ইংরাজ রাজত্বের পূর্বে সভ্যতার কোন চিহ্ন ছিল না।কিন্তু বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত প্রত্নসামগ্রী আবিষ্কার এই কথাই প্রমাণ করে প্রাচীন সভ্যতা কৃষ্টির উত্তরাধিকার নিয়ে সুন্দরবনের এক বিশাল এলাকা এখনও তার অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে।
Leave a Reply