শিবলী আহম্মেদ সুজন
সাপের পা দেখা
সাপের পা দেখা একটা অসম্ভব ভাগ্যের কথা। সমাজে প্রচলিত আছে এ ধরনের প্রবাদ ও উক্তি। বাস্তবত ব্যাপারটা সে অর্থে সত্য নয়। সাপের পা হয় না-এটা এই সরীসৃপ সম্প্রদায়ের বর্গ-পরিচয়। অথচ আজগুবি হলেও কেউ কেউ দাবি করে থাকেন যে তাঁরা সাপের পা দেখেছেন।
কোনো রম্য ধরনের পত্রপত্রিকায় সাপের পাসহ ছবিও ছাপা হতে দেখা গেছে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, মুদ্রিত ছবিতে সাপের যে ছবি আছে, তা কি আদৌ সাপ? নাকি অন্য কোনো সরীসৃপজাতীয় প্রাণী! ব্যাপারটা কি কোনো বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে দেখেছেন? সাধারণ দৃষ্টিতে চিহ্নবৎ পা-ধারী সরু লম্বা কোনো টিকটিকিজাতীয় প্রাণী আর সাপের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা সহজ নয়।
তবে আমাদের অজগরজাতীয় পুরুষ সাপের এক জোড়া চিহ্নবৎ পেছনের পা রয়েছে। সাধারণত সেটা আমাদের চোখে পড়ার মতো নয়। এই লুপ্তপ্রায় পাগুলোর যৌনোদ্দীপক ভূমিকা রয়েছে। অন্যদিকে কিছু কিছু সাপের পায়ুপথের দুই ধারে দেহের অভ্যন্তরে দুটি জননেন্দ্রিয় রয়েছে।
যৌন মিলনের সময় সেগুলো শক্ত হয়ে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে এবং মিলন শেষে তা আবার দেহাবরণের ভেতরে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, কেউ হয়তো ও রকম উত্তেজনাকর অবস্থায় সাপটিকে দেখেছে এবং এর ছবি তুলেছে।
মিলনাবস্থায় সেই পুরুষ সাপ নিহত হলে বেরিয়ে থাকা জননেন্দ্রিয় আর দেহের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে জননেন্দ্রিয়কেই সাপের পা বলে ভুল হওয়াটা খুব আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
এ ধরনের প্রচারণার আরেকটি সম্ভাব্য বিশ্লেষণ এও হতে পারে যে,সাপ যখন পুরোনো দেহাবরণ বা খোলস পাল্টায় (নির্মোচন) বা যখন পুরোনো চামড়ার আবরণ থেকে নতুন চামড়াধারী সাপটি বেরিয়ে আসতে থাকে,তখন যদি কোনো সাধারণ দর্শক এ দৃশ্য দেখে ,তখন তার চোখে নতুন চামড়ার গায়ে কিছুক্ষণ লেগে থাকা বর্জ্য খোলসটিকে পা বলে ভুল হতে পারে।
প্রখ্যাত লেখক রেজাউর রহমান–এর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
সাপ নিয়ে কিছু প্রবাদ ও কুসংস্কার (পর্ব-৫)
Leave a Reply