টিএন্ডটির সিইও টিনা লি: একজন যাত্রা

টিনা লি বর্তমানে টিএন্ডটি সুপারমার্কেটের সিইও, যা তার তাইওয়ানী অভিবাসী মা সিন্ডি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং টিনা ও তার বোন টিফানি নামের সাথে মিলিয়ে এই নামকরণ করা হয়।

টিনা লি যখন আমাকে এগ টার্টের স্বাদ নিতে বলছিলেন, তখন তার মেজাজ ছিল একদম উচ্ছ্বসিত। “এটা আসলেই অতুলনীয়,” তিনি বলেছিলেন। এই বিশেষ এগ টার্টের শেলের মধ্যে ছিল ১৬টি স্তরের পাফ পেস্ট্রি, যা খুবই সুস্বাদু এবং একদম অন্যরকম ছিল। এটি তৈরি হয় টিএন্ডটি সুপারমার্কেটেরই একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন, এবং টিনা লি নিজেই তার সিইও।

অথচ টিনা লির এই অবসর সময়ে এগ টার্ট নিয়ে এত কথা বলা, তা একটু অস্বাভাবিক। তার কর্মদিবস সাধারণত রাত ৮টার আগে শেষ হয় না, যার কারণে তিনি বাড়িতে নিজের পরিবার নিয়ে খাবার খাওয়ার সময় পান না। তবে এই বিশেষ দিনে, তিনি শুধুমাত্র এটাই আলোচনা করতে চেয়েছিলেন—এগ টার্ট। “আরেকটা খাবারের সুযোগ,” তিনি হাসতে হাসতে বললেন, “এটাই আমাকে খুশি করে।”

যদি আপনি আগে কখনও টিনা লির নাম না শুনে থাকেন, তবে আপনি একা নন। টিএন্ডটি হলো কানাডার সবচেয়ে বড় এশীয় গ্রোসারি চেইন, যা উত্তর আমেরিকার ৩৮টি দোকানে প্রসারিত। যদিও টিনা লি এই ব্যবসাকে সাধারণত কম প্রকাশ্যে পরিচালনা করতেন, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে, তার নামই টিএন্ডটির প্রথম “টি”।

টিনা লির পথচলা

টিনা লি ১৯৯৩ সালে যখন টিএন্ডটির প্রথম দোকান খোলা হয়, তখন তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সী ছিলেন। প্রথম দোকানটি ছিল মেট্রোটাউন সেন্টারে, বার্নাবি, বিসি। তখন থেকেই টিএন্ডটি চাইনিজ-কানাডিয়ান পরিবারগুলোর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। টিনা তার কৈশোরকাল কাটিয়েছেন দোকানে গ্রোসারি ব্যাগ ভরার কাজ করে, কিন্তু তিনি এবং তার ভাই-বোনদের উপর কখনও পরিবার ব্যবসায় জোর করা হয়নি।

এমনকি, টিনা লি নিজেই একটি এমবিএ শেষ করে ডেলইটে স্ট্রাটেজি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন। তবে ২০০৯ সালে লোবলাও যখন টিএন্ডটির বেশিরভাগ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়, তখন তিনি কানাডায় ফিরে আসেন।

মা এবং মেয়ের সম্পর্ক

২০১৪ সালে, যখন টিনা লি মাত্র ৩৪ বছর বয়সে সিইও পদ গ্রহণ করেন, তার মা সিন্ডি প্রথমে চাননি যে টিনা তার স্থানে বসুক। সিন্ডি নিজে মেয়েকে এই দায়িত্বে রাখতে চাননি, যদিও তিনি জানতেন যে তার অবসর সময় চলে এসেছে। তবে লোবলাও কর্মকর্তারা তাকে সিইও হিসেবে পদে বসানোর জন্য চাপ দেন।

চ্যালেঞ্জ এবং শিখন

টিনা লি তার সিইও হওয়ার পর বলেছেন, “আপনি কখনো প্রস্তুত নন।” তবে তিনি মনে করেন যে, নিজের দুর্বলতা এবং সততা প্রকাশ করার মাধ্যমে তার দল তাকে সমর্থন করেছে। “এটাই আমাদের শেখার বিষয়,” তিনি বলেন, “কখন কাকে কোন ভূমিকা নিতে হবে, কখন আপনাকে নীরব থাকতে হবে, আর কখন আপনাকে আপনার কণ্ঠ তুলে বলতে হবে।”

টিএন্ডটির আন্তর্জাতিক প্রসার

বর্তমানে, টিএন্ডটি তার ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। গত বছর, টিএন্ডটি প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার দোকান খোলার ঘোষণা দিয়েছিল, এবং আগামী দুই বছরে আরও নয়টি নতুন দোকান খুলবে। এই সময়ে, টিনা লি তার ব্যবসাকে নতুন বাজার এবং নতুন শ্রোতাদের কাছে পরিচিত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন।

টিনা লি তার সম্প্রসারণের ঘোষণা দেওয়ার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে, নতুন শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রক বাধাগুলি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে, তিনি জানান যে তাকে একসাথে পরিবারের ব্যবসার গুরুত্ব এবং তার নিজের অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরতে হচ্ছে।

টিনা লি তার ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং সৎ প্রকাশের মাধ্যমে ব্যবসায়িক নেতা হিসেবে নতুন পথ তৈরি করেছেন, যা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য করেছে। তার ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলির পাশাপাশি, তার মানবিক দিকও তাকে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।