১০:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
অর্থনৈতিক চাপে ম্লান ইয়ালদা, তবু পারিবারিক বন্ধনই ইরানিদের উৎসব ভারী ডিসেম্বরের বৃষ্টিতে জেবেল জাইস সাময়িকভাবে বন্ধ, নিরাপত্তা যাচাই চলবে মার্কিন ডলার ভুলে যান, বরং পানি ও জ্বালানি সম্পদের দিকে নজর দিন পরিষ্কার জ্বালানির অগ্রগতি সত্ত্বেও বৈশ্বিক নির্গমন কমছে ধীরগতিতে এআই বিনিয়োগে টেক জায়ান্টদের সামনে নতুন প্রশ্ন শীতের চাপে ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল ও কূটনীতি নতুন মোড়ে ভবিষ্যৎ গেমিংয়ের মঞ্চে আবুধাবি বিশ্ববিদ্যালয়, তরুণ প্রতিভায় নতুন দিগন্ত দুবাইয়ে প্রকৃতিনির্ভর পর্যটনের নতুন দিগন্ত, আরভি রুটে পাহাড়–সমুদ্র–মরুভূমির অভিজ্ঞতা চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি নতুন উচ্চতার পথে, সতর্ক করছেন বিশ্লেষকেরা প্রাকযুদ্ধের বিএমডব্লিউ ক্যাব্রিওলেট পেবল বিচে গৌরব, ইতিহাসের গাড়িতে মঞ্চ জয়

নাজরানের ঐতিহ্যে মিশে থাকা প্রাচীন পামবাগান ও কাদা বাড়ির গ্রাম

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক

সৌদি আরবের নাজরান প্রদেশের আল-কাবিল গ্রাম যেন এক জীবন্ত ইতিহাসের চিত্রপট। প্রাচীন খেজুরগাছগুলো আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর কাদা দিয়ে নির্মিত পুরনো বাড়িগুলো প্রকাশ করছে এক গভীর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সৌন্দর্য।
এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে বহু প্রাচীন কূপকে কেন্দ্র করে, যা একসময় ছিল এখানকার জীবনের প্রধান উৎস। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে আল-হুসাইন খামার থেকে শুরু করে পশ্চিমের আল-জারবা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চল। দক্ষিণে রয়েছে ঐতিহাসিক আল-উখদুদ প্রত্নস্থল এবং উত্তরে নাজরান উপত্যকার তীরে মিশে গেছে এর সীমানা—যেন ইতিহাস ও প্রকৃতির এক অনবদ্য মিশেল।


৩৫০ বছরের পুরনো কাদা প্রাসাদ

নাজরান প্রাচীন নিদর্শন ও ইতিহাস সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আল-হাতেলা জানান, আল-কাবিল গ্রামের কাদা প্রাসাদগুলোর অনেকগুলোর বয়স ৩৫০ বছরেরও বেশি।
গ্রামজুড়ে, ছড়িয়ে আছে ২০০টিরও বেশি কাদা বাড়ি—কোনোটি উঁচু, কোনোটি নিচু, আবার নকশাতেও বৈচিত্র্য রয়েছে। এগুলো শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং প্রতিটি বাড়ি সময়ের সাক্ষী, যা নাজরান অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্য তুলে ধরে।

এখানকার প্রাচীন ভাঁজকৃত কূপগুলো ঘিরে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন খেজুরগাছ, যা গ্রামটিকে দিয়েছে এক অনন্য সৌন্দর্য। এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কারণে আল-কাবিলসহ নাজরানের বহু গ্রামকে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো “আল-লিজাম” গ্রাম—নাজরানের ৩৪টি ঐতিহ্যবাহী গ্রামের একটি।

Al Qabil Village: An oasis of ancient palms and historic mud homes in Najran

আল-লিজাম গ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য

আল-হাতেলা’র মতে, আল-লিজাম গ্রামটি তার পুরনো কাদা প্রাসাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শত শত বছর আগের এই স্থাপনাগুলোর মধ্যে প্রায় ২০টি প্রাসাদ এখনো টিকে আছে।
এখানে একদিকে দেখা যায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, অন্যদিকে আধুনিক ছোঁয়ার সংমিশ্রণ। গ্রামটিতে রয়েছে বহু প্রাচীন “আল-দুরুব” নামে পরিচিত বাড়ি, যেগুলো তাদের ঐতিহাসিক গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাজরান উপত্যকার তীরে। এগুলো শুধু স্থাপত্য নয়, বরং নাজরানের নগর সংস্কৃতির গভীর পরিচয় বহন করে।


স্থানীয়দের গর্ব ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা

আল-কাবিল গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ বালহারিথ জানান, গ্রামের মানুষ তাদের কাদা বাড়িগুলো নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। তারা এগুলো সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে সচেষ্ট, কারণ এগুলোই তাদের ঐতিহ্যের মূল প্রতীক।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, আল-কাবিলের স্থাপত্যে পাওয়া যায় প্রাচীন কাদা নির্মাণশৈলীর নানা ধরন—যেমন “আল-মুরাব্বা”, “আল-মাশুলক” ও “আল-মুকাদ্দাম”। এগুলো পুরনো খেজুরবাগানের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছে এক স্বতন্ত্র স্থাপত্যপরিচয়, যার বৈশিষ্ট্য হলো নকশার জ্যামিতিক বৈচিত্র্য ও আকারের পার্থক্য।

Al Qabil Village: An oasis of ancient palms and historic mud homes in Najran

ঐতিহাসিক কূপ ও গ্রামীণ স্মৃতি

বালহারিথ আরও উল্লেখ করেন, গ্রামের পুরনো বৃহস্পতিবার বাজার, প্রাচীন কূপ ও আশপাশের গ্রামগুলোর নাম আজও স্থানীয়দের মুখে উচ্চারিত হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে আল-জাদিদাহ, বাইহান, উম্ম আল-জাওইয়া, বাহজা, আস-সারুফ, রকীবাহ, আল-জুজাজ ও সাঈদাহ—যাদের প্রত্যেকটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও স্মৃতি।


ঐতিহ্যের ধারক আল-কাবিল

আল-কাবিল গ্রাম আজও সৌদি আরবের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক। এখানে প্রতিটি প্রাসাদ, কূপ ও খেজুরগাছ যেন প্রাচীন নাজরানের গল্প বলে যায়—যেখানে সময় থেমে থাকলেও ঐতিহ্য এখনো বেঁচে আছে মানুষের মনে, মাটির ঘ্রাণে।


নাজরান, আল-কাবিল, সৌদি আরব, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সংস্কৃতি, কাদাবাড়ি, স্থাপত্য, ইতিহাস, আল-লিজাম

জনপ্রিয় সংবাদ

অর্থনৈতিক চাপে ম্লান ইয়ালদা, তবু পারিবারিক বন্ধনই ইরানিদের উৎসব

নাজরানের ঐতিহ্যে মিশে থাকা প্রাচীন পামবাগান ও কাদা বাড়ির গ্রাম

০৫:০০:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক

সৌদি আরবের নাজরান প্রদেশের আল-কাবিল গ্রাম যেন এক জীবন্ত ইতিহাসের চিত্রপট। প্রাচীন খেজুরগাছগুলো আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর কাদা দিয়ে নির্মিত পুরনো বাড়িগুলো প্রকাশ করছে এক গভীর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সৌন্দর্য।
এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে বহু প্রাচীন কূপকে কেন্দ্র করে, যা একসময় ছিল এখানকার জীবনের প্রধান উৎস। গ্রামের পূর্ব প্রান্তে আল-হুসাইন খামার থেকে শুরু করে পশ্চিমের আল-জারবা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত এই অঞ্চল। দক্ষিণে রয়েছে ঐতিহাসিক আল-উখদুদ প্রত্নস্থল এবং উত্তরে নাজরান উপত্যকার তীরে মিশে গেছে এর সীমানা—যেন ইতিহাস ও প্রকৃতির এক অনবদ্য মিশেল।


৩৫০ বছরের পুরনো কাদা প্রাসাদ

নাজরান প্রাচীন নিদর্শন ও ইতিহাস সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আল-হাতেলা জানান, আল-কাবিল গ্রামের কাদা প্রাসাদগুলোর অনেকগুলোর বয়স ৩৫০ বছরেরও বেশি।
গ্রামজুড়ে, ছড়িয়ে আছে ২০০টিরও বেশি কাদা বাড়ি—কোনোটি উঁচু, কোনোটি নিচু, আবার নকশাতেও বৈচিত্র্য রয়েছে। এগুলো শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং প্রতিটি বাড়ি সময়ের সাক্ষী, যা নাজরান অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্য তুলে ধরে।

এখানকার প্রাচীন ভাঁজকৃত কূপগুলো ঘিরে রয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন খেজুরগাছ, যা গ্রামটিকে দিয়েছে এক অনন্য সৌন্দর্য। এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্যের কারণে আল-কাবিলসহ নাজরানের বহু গ্রামকে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো “আল-লিজাম” গ্রাম—নাজরানের ৩৪টি ঐতিহ্যবাহী গ্রামের একটি।

Al Qabil Village: An oasis of ancient palms and historic mud homes in Najran

আল-লিজাম গ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য

আল-হাতেলা’র মতে, আল-লিজাম গ্রামটি তার পুরনো কাদা প্রাসাদের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। শত শত বছর আগের এই স্থাপনাগুলোর মধ্যে প্রায় ২০টি প্রাসাদ এখনো টিকে আছে।
এখানে একদিকে দেখা যায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য, অন্যদিকে আধুনিক ছোঁয়ার সংমিশ্রণ। গ্রামটিতে রয়েছে বহু প্রাচীন “আল-দুরুব” নামে পরিচিত বাড়ি, যেগুলো তাদের ঐতিহাসিক গম্বুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নাজরান উপত্যকার তীরে। এগুলো শুধু স্থাপত্য নয়, বরং নাজরানের নগর সংস্কৃতির গভীর পরিচয় বহন করে।


স্থানীয়দের গর্ব ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা

আল-কাবিল গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ বালহারিথ জানান, গ্রামের মানুষ তাদের কাদা বাড়িগুলো নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। তারা এগুলো সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে সচেষ্ট, কারণ এগুলোই তাদের ঐতিহ্যের মূল প্রতীক।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, আল-কাবিলের স্থাপত্যে পাওয়া যায় প্রাচীন কাদা নির্মাণশৈলীর নানা ধরন—যেমন “আল-মুরাব্বা”, “আল-মাশুলক” ও “আল-মুকাদ্দাম”। এগুলো পুরনো খেজুরবাগানের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছে এক স্বতন্ত্র স্থাপত্যপরিচয়, যার বৈশিষ্ট্য হলো নকশার জ্যামিতিক বৈচিত্র্য ও আকারের পার্থক্য।

Al Qabil Village: An oasis of ancient palms and historic mud homes in Najran

ঐতিহাসিক কূপ ও গ্রামীণ স্মৃতি

বালহারিথ আরও উল্লেখ করেন, গ্রামের পুরনো বৃহস্পতিবার বাজার, প্রাচীন কূপ ও আশপাশের গ্রামগুলোর নাম আজও স্থানীয়দের মুখে উচ্চারিত হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে আল-জাদিদাহ, বাইহান, উম্ম আল-জাওইয়া, বাহজা, আস-সারুফ, রকীবাহ, আল-জুজাজ ও সাঈদাহ—যাদের প্রত্যেকটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও স্মৃতি।


ঐতিহ্যের ধারক আল-কাবিল

আল-কাবিল গ্রাম আজও সৌদি আরবের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতীক। এখানে প্রতিটি প্রাসাদ, কূপ ও খেজুরগাছ যেন প্রাচীন নাজরানের গল্প বলে যায়—যেখানে সময় থেমে থাকলেও ঐতিহ্য এখনো বেঁচে আছে মানুষের মনে, মাটির ঘ্রাণে।


নাজরান, আল-কাবিল, সৌদি আরব, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সংস্কৃতি, কাদাবাড়ি, স্থাপত্য, ইতিহাস, আল-লিজাম