চীনের সঙ্গে জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি ২০২৫ সালে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে। জার্মান পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এই ঘাটতি আরও বাড়ছে বলে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, স্বল্পমেয়াদে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম এবং এর জেরে সুরক্ষাবাদী প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
আমদানিতে চীনের আধিপত্য, রপ্তানিতে জার্মানির পতন
জার্মানির সবচেয়ে বড় আমদানি অংশীদার হিসেবে চীন ইতিমধ্যে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করছে। জার্মানির সরকারি অর্থনৈতিক সংস্থা জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে চীন থেকে জার্মানিতে রপ্তানি ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৬৮ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছাতে পারে। বিপরীতে, জার্মানি থেকে চীনে রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ কমে ৮১ বিলিয়ন ইউরোতে নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ইউরোতে।
স্বল্পমেয়াদে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন
কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গবেষণা বিভাগের পরিচালক হলগার গ্যর্গ বলেন, অদূর ভবিষ্যতে এই পতন ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন হবে। তাঁর মতে, কাঠামোগত কিছু সমস্যার কারণে জার্মান অর্থনীতি এখন চাপের মুখে।
প্রতিযোগিতার শক্তি হারাচ্ছে জার্মান শিল্প
এই সমস্যার মূল কেন্দ্রে রয়েছে জার্মান শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ক্ষয়। জার্মানির গর্ব হিসেবে পরিচিত গাড়ি শিল্পের বৈশ্বিক রপ্তানি চলতি বছরে ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে বলে জানিয়েছে জিটিএআই। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা শুধু নিজেদের দেশেই নয়, উদীয়মান এশীয় বাজারেও জার্মান ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
চীনে গাড়ি রপ্তানি কমছে
ডয়চে ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে চীনে জার্মান গাড়ি রপ্তানি বছরে প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। এই পতনকেই দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘চীনে উৎপাদন, চীনের জন্য’ কৌশলের প্রভাব
বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়াচ্ছে জার্মান বড় কোম্পানিগুলোর নতুন কৌশল। ভক্সওয়াগনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ‘চীনে উৎপাদন, চীনের জন্য’ নীতিতে স্থানীয়ভাবে কারখানা স্থাপন ও উৎপাদন বাড়াচ্ছে। বেইজিংয়ের উৎসাহে নেওয়া এই কৌশলের ফলে জার্মানি থেকে পণ্য রপ্তানির পরিবর্তে চীনের ভেতরেই উৎপাদিত পণ্য বাজারে আসছে।
নতুন বিনিয়োগ নয়, পুনর্বিনিয়োগে জোর
হলগার গ্যর্গ জানান, বর্তমানে চীনে জার্মান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বড় অংশই আসছে পুরোনো মুনাফা পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে। নতুন মূলধন আনার চেয়ে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো স্থানীয় কার্যক্রম বিস্তারে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এতে স্বল্পমেয়াদে জার্মান রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা আরও কমে যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















