ইরানের ঘরে ঘরে শীতের দীর্ঘতম রাত ইয়ালদা মানেই পরিবার, স্মৃতি আর কবিতার উষ্ণতা। নানা ধর্ম ও শ্রেণির মানুষ এই প্রাচীন পারস্য উৎসবটি পালন করলেও এ বছর অর্থনৈতিক সংকট ও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব উৎসবের আনন্দকে কিছুটা ম্লান করেছে। তবু পারিবারিক একতার শক্তিতে ইয়ালদা টিকে আছে।
শীতের দীর্ঘ রাতের ঐতিহ্য
শীতকালীন অয়নান্তে পালিত ইয়ালদায় পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসেন, মৌসুমি ফল, বাদাম আর মিষ্টি খাওয়া হয়। কবি হাফেজের কবিতা থেকে ভাগ্যপাঠ নেওয়ার রীতি ইয়ালদার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তেহরানের তাজরিশ বাজারে এক শিক্ষার্থী জানায়, দাদা-দাদির বাড়িতে সবাই মিলে চা খায়, কবিতা পড়ে, গল্পে ডুবে যায়। এই মিলনই ইয়ালদার আসল অর্থ।

মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্য বৃদ্ধির চাপ
উৎসবের টেবিল সাজাতে গিয়ে অনেক পরিবারই এবার হিসাব কষছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, জাতীয় মুদ্রার দর কমেছে, ফলে কেনাকাটার ক্ষমতা কমেছে। অভ্যন্তরীণ নকশাবিদ এক ক্রেতার কথায়, যুদ্ধ ও ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতিতে আগের মতো সব আইটেম আর টেবিলে ওঠে না। বাজারে ডালিমসহ ফলের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ায় বিক্রি কমেছে।
শহরে সাজ, বাড়িতে সংযম
তেহরানের কিছু শপিং সেন্টারে ইয়ালদা উপলক্ষে কৃত্রিম গাছ, ঝুলন্ত ডালিম আর বড় ফলের থালা সাজানো হয়েছে। বাইরে সাজ থাকলেও ঘরে ঘরে সংযমের ছাপ স্পষ্ট। ফল বিক্রেতারা বলছেন, উচ্চ দামের কারণে বড় পারিবারিক নিমন্ত্রণ কমেছে, ছোট পরিসরে উৎসব হচ্ছে।
সংস্কৃতির শক্তিতে টিকে থাকা
সংবাদপত্রের কার্টুনে দরিদ্র মানুষের চাঁদে ঝুলন্ত ফলের ঝুড়ির দিকে হাত বাড়ানোর দৃশ্য যেমন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, তেমনি ইয়ালদার গল্প বলে দেয়—অভাবের মধ্যেও মানুষ একত্রে থাকার পথ খুঁজে নেয়। অর্থনৈতিক চাপ থাকলেও পরিবার, স্মৃতি আর কবিতার শক্তিতে ইরানের ইয়ালদা বেঁচে আছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















