০৪:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রিয়াদ: সংঘাত নিরসনে সৌদি আরবের সংজ্ঞায়িত বছর ইয়েমেনে বন্দিবিনিময়ে বড় অগ্রগতি, দুই হাজার নয়শ’ জনের মুক্তিতে সমঝোতা অর্থনীতি টিকে থাকলেও জীবনের চাপে ক্লান্ত আমেরিকা, দুশ্চিন্তায় নতুন বছর রাশিয়ার ভয়াবহ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো বিপর্যস্ত, শিশুসহ নিহত তিন আবু ধাবি–দুবাইয়ে বিদেশি ইয়ট চলাচল সহজ হচ্ছে জানুয়ারি থেকে কনটেন্ট ব্যয়ে নতুন হিসাব কষছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ঘন শহরে মানিয়ে নিচ্ছে নগর বন্যপ্রাণী কার্বন বাজার ঘিরে জলবায়ু আলোচনায় নতুন বিতর্ক ইন্দোনেশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সমঝোতা চূড়ান্তের পথে, জানুয়ারিতে স্বাক্ষরের সম্ভাবনা ইউরোপের নতুন এআই বিধি নিয়ে প্রস্তুতিতে প্রযুক্তি জায়ান্টরা

ম্যানচেস্টারে গণহত্যার ছক ভেস্তে গেল, গোপন অভিযানে ধরা আইএস ঘুমন্ত জঙ্গি চক্র

ম্যানচেস্টারের ব্যস্ত রাজপথে ভয়াবহ গণহত্যার পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ করে দিয়েছে ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনী। ইহুদি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত এই হামলা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এটি হতে পারত সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী আঘাত। দীর্ঘ গোপন নজরদারি ও এক সাহসী ছদ্মবেশী কর্মকর্তার ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় এই রক্তক্ষয়ী ষড়যন্ত্র

গোপনে তৈরি ভয়াবহ পরিকল্পনা
তদন্তে উঠে এসেছে, ওয়ালিদ সাদাউই ও আমর হুসেইন নামের দুই ব্যক্তি বহু বছর ধরে আইএসের ঘুমন্ত সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন। বাইরে থেকে সাধারণ জীবন যাপন করলেও ভেতরে ভেতরে তারা অপেক্ষা করছিল ‘শূন্য ঘণ্টা’র। পরিকল্পনা ছিল ইহুদি সেজে ম্যানচেস্টার শহরকেন্দ্রে ইহুদিবিদ্বেষবিরোধী এক সমাবেশে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালানো। একই সঙ্গে জরুরি নম্বরে ভুয়া ফোন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে গিয়ে আশপাশের এলাকায় হামলা চালানোর ছক ছিল।

শুধু ইহুদিরাই নয়, তদন্ত নথি অনুযায়ী খ্রিস্টানদের ওপর হামলার কথাও আলোচনায় ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই হামলার মধ্য দিয়েই তারা তথাকথিত শহীদ হবে।

ছদ্মবেশী কর্মকর্তার সাহসী ভূমিকা
এই পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন সাদাউই এক ব্যক্তিকে আইএস সমর্থক ভেবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। ওই ব্যক্তি আসলে ছিলেন পুলিশের ছদ্মবেশী কর্মকর্তা। অস্ত্র সংগ্রহের নামে তার সঙ্গে যোগাযোগ, টাকা লেনদেন ও হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা সবই পুলিশের নজরদারিতে চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বোল্টনের এক হোটেল পার্কিংয়ে অস্ত্র হস্তান্তরের মুহূর্তে সাদাউইকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে কর্মস্থল থেকে আটক হন হুসেইন।

আদালতের রায়ে প্রকাশ ভয়ংকর মানসিকতা
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় উঠে আসে তাদের চরমপন্থী মানসিকতার ভয়াবহ দিক। প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সাদাউই শিশু হত্যা করতেও প্রস্তুত ছিলেন এবং ভবিষ্যতে তার সন্তানকেও এই পথে ঠেলে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। আদালতে প্রমাণিত হয়, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতেন এবং সহিংস হামলার প্রশংসা করতেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্ত
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুরুতেই অনলাইনে উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে গ্রেপ্তার করলে হয়তো তারা দ্রুত মুক্তি পেয়ে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারত। তাই দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকি নিয়ে এই গোপন অভিযান চালানো হয়। কর্মকর্তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ছিল মানসিকভাবে অত্যন্ত চাপের, তবে এর ফলেই একটি বড় সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।

বিচারে দোষী সাব্যস্ত
শেষ পর্যন্ত সাদাউই ও হুসেইনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সাদাউইয়ের ভাই বিলেল সাদাউইকেও ষড়যন্ত্রের তথ্য গোপন করার অপরাধে দণ্ডিত করা হয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, নীরবে গড়ে ওঠা চরমপন্থী নেটওয়ার্ক কতটা ভয়ংকর হতে পারে এবং তা ঠেকাতে গোয়েন্দা তৎপরতার গুরুত্ব কতখানি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রিয়াদ: সংঘাত নিরসনে সৌদি আরবের সংজ্ঞায়িত বছর

ম্যানচেস্টারে গণহত্যার ছক ভেস্তে গেল, গোপন অভিযানে ধরা আইএস ঘুমন্ত জঙ্গি চক্র

০২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

ম্যানচেস্টারের ব্যস্ত রাজপথে ভয়াবহ গণহত্যার পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ করে দিয়েছে ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনী। ইহুদি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিত এই হামলা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এটি হতে পারত সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী আঘাত। দীর্ঘ গোপন নজরদারি ও এক সাহসী ছদ্মবেশী কর্মকর্তার ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় এই রক্তক্ষয়ী ষড়যন্ত্র

গোপনে তৈরি ভয়াবহ পরিকল্পনা
তদন্তে উঠে এসেছে, ওয়ালিদ সাদাউই ও আমর হুসেইন নামের দুই ব্যক্তি বহু বছর ধরে আইএসের ঘুমন্ত সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন। বাইরে থেকে সাধারণ জীবন যাপন করলেও ভেতরে ভেতরে তারা অপেক্ষা করছিল ‘শূন্য ঘণ্টা’র। পরিকল্পনা ছিল ইহুদি সেজে ম্যানচেস্টার শহরকেন্দ্রে ইহুদিবিদ্বেষবিরোধী এক সমাবেশে ঢুকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালানো। একই সঙ্গে জরুরি নম্বরে ভুয়া ফোন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পালিয়ে গিয়ে আশপাশের এলাকায় হামলা চালানোর ছক ছিল।

শুধু ইহুদিরাই নয়, তদন্ত নথি অনুযায়ী খ্রিস্টানদের ওপর হামলার কথাও আলোচনায় ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই হামলার মধ্য দিয়েই তারা তথাকথিত শহীদ হবে।

ছদ্মবেশী কর্মকর্তার সাহসী ভূমিকা
এই পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন সাদাউই এক ব্যক্তিকে আইএস সমর্থক ভেবে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। ওই ব্যক্তি আসলে ছিলেন পুলিশের ছদ্মবেশী কর্মকর্তা। অস্ত্র সংগ্রহের নামে তার সঙ্গে যোগাযোগ, টাকা লেনদেন ও হামলার বিস্তারিত পরিকল্পনা সবই পুলিশের নজরদারিতে চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বোল্টনের এক হোটেল পার্কিংয়ে অস্ত্র হস্তান্তরের মুহূর্তে সাদাউইকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে কর্মস্থল থেকে আটক হন হুসেইন।

আদালতের রায়ে প্রকাশ ভয়ংকর মানসিকতা
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় উঠে আসে তাদের চরমপন্থী মানসিকতার ভয়াবহ দিক। প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সাদাউই শিশু হত্যা করতেও প্রস্তুত ছিলেন এবং ভবিষ্যতে তার সন্তানকেও এই পথে ঠেলে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন। আদালতে প্রমাণিত হয়, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতেন এবং সহিংস হামলার প্রশংসা করতেন।

নিরাপত্তা বাহিনীর কঠিন সিদ্ধান্ত
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুরুতেই অনলাইনে উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে গ্রেপ্তার করলে হয়তো তারা দ্রুত মুক্তি পেয়ে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারত। তাই দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকি নিয়ে এই গোপন অভিযান চালানো হয়। কর্মকর্তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ছিল মানসিকভাবে অত্যন্ত চাপের, তবে এর ফলেই একটি বড় সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।

বিচারে দোষী সাব্যস্ত
শেষ পর্যন্ত সাদাউই ও হুসেইনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সাদাউইয়ের ভাই বিলেল সাদাউইকেও ষড়যন্ত্রের তথ্য গোপন করার অপরাধে দণ্ডিত করা হয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, নীরবে গড়ে ওঠা চরমপন্থী নেটওয়ার্ক কতটা ভয়ংকর হতে পারে এবং তা ঠেকাতে গোয়েন্দা তৎপরতার গুরুত্ব কতখানি।