সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ পাহাড়ি পর্যটন গন্তব্য জেবেল জাইস সাময়িকভাবে সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। ডিসেম্বর মাসে টানা ভারী বৃষ্টি ও তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় সাময়িক বন্ধ
রাস আল খাইমাহ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বৃষ্টির পর পাহাড়ি এলাকায় জমে থাকা পানি, মাটির অস্থিতিশীলতা ও পাথর সরে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় আগাম সতর্কতামূলকভাবে জেবেল জাইস বন্ধ রাখা হয়েছে। পুরো এলাকায় বিস্তৃত নিরাপত্তা পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সড়কও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
কোন কোন কার্যক্রম বন্ধ
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেবেল জাইসের সব ধরনের আকর্ষণ ও কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে জাইস ফ্লাইট জিপলাইন, ১৪৮৪ বাই পুরো রেস্তোরাঁ, রেড রক বারবিকিউ, ভিয়া ফেরাটা রুট, বেয়ার গ্রিলস এক্সপ্লোরার্স ক্যাম্প এবং জাইস ভিউইং ডেক পার্কের যোগা সেশন।
হাইকিং ও ক্যাম্পিং নিয়ে সতর্কতা
যদিও হাইকিং ও ক্লাইম্বিং এলাকা আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি, তবুও কর্তৃপক্ষ চরম সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। বৃষ্টির কারণে পিচ্ছিল পথ ও ঢিলা পাথরের ঝুঁকি থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত রুট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান অস্থির আবহাওয়ায় ওয়াদিতে ক্যাম্পিং না করতেও কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার
শীতকাল জেবেল জাইসের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। শীতল আবহাওয়া, পাহাড়ি ট্রেইল ও নানা অভিজ্ঞতার জন্য এ সময় ভিড় বাড়ে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মারজান লাইফস্টাইলের প্রধান নির্বাহী ডোনাল্ড ব্রেমনার। তাঁর ভাষায়, দায়িত্বশীল পর্যটনের অর্থ হলো মানুষ, প্রকৃতি ও নিরাপত্তাকে সবার আগে রাখা। পর্যায়ক্রমে পুনরায় চালু করা হবে কার্যক্রম, তবে প্রতিটি এলাকা কঠোর নিরাপত্তা মান পূরণ করার পরই খুলবে।
স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি
মিনা সাকর বন্দরে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। জেবেল জাইস ও জেবেল আল রাহিবা এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১৫ মিলিমিটারের বেশি। এর ফলে সড়ক ও আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুলিশি টহলও বাড়ানো হয়েছে। সাধারণত আমিরাতে বছরে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৫০ মিলিমিটারের নিচে নেমে গিয়েছিল। ব্যতিক্রম ছিল ২০২৪ সালের এপ্রিল, যখন ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়।
শীতল আবহাওয়া থাকবে আরও কিছুদিন
জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রধান বৃষ্টির ধাপ শেষ হলেও সপ্তাহান্ত পর্যন্ত শীতল ও অস্থির আবহাওয়া থাকবে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দিনে তাপমাত্রা সহনীয় থাকলেও রাতের বেলা ঠান্ডা বাড়বে, বিশেষ করে পাহাড়ি ও অভ্যন্তরীণ এলাকায়। উপকূলে দিনে তাপমাত্রা থাকবে প্রায় ২০ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাতে নেমে আসবে ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রিতে। পাহাড়ি এলাকায় রাতের তাপমাত্রা থাকতে পারে ৮ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে।
পরবর্তী করণীয়
কর্তৃপক্ষ বাসিন্দা ও পর্যটকদের জেবেল জাইসের সরকারি তথ্য চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে সর্বশেষ আপডেট জানার আহ্বান জানিয়েছে। নিরাপত্তা উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ শেষ হলে চলতি শীত মৌসুমের বাকি সময় জেবেল জাইস উপভোগের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















