০৯:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩) কলম্বিয়ার সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ সাকিব ও মাশরাফি ছাড়া পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের পর পথ কি? রাষ্ট্রে কখন ও কেন সংখ্যালঘুরা সংগঠিত ধর্ষণের শিকার হয় গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের আয়রন ঘাটতি: অর্ধেকের বেশি রক্তস্বল্পতায় আরব আমিরাত, মরুভূমি শহরে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ: ‘এরপর সরকার ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়’—জাপা চেয়ারম্যান ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগানদের গণনির্বাসনে উদ্বেগ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতের, প্রভাব কেমন হবে ইরানে চীনা বিনিয়োগ অনিশ্চিত, তবু মধ্যপ্রাচ্যের আহ্বান অটুট

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-২)

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 24

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়াসভ্যতার ভৌগোলিক পরিচয়

মায়া জনজাতির সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রধান অংশ হল দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার উত্তর অঞ্চল। মায়ারা এমন একটি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত যারা একটি সমগোত্রের ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক সূত্র থেকে এসেছে।মেক্সিকো উপত্যকা বাদ দিয়ে বলা যায় শহরকেন্দ্রিক অঞ্চলে মায়াদের প্রাথমিক কাল হল ৩০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ।

তবে এইসঙ্গে একথাও বলা হয় ক্লাসিক পিরিয়ড বা প্রাথমিক কাল থেকে এখন পর্যন্ত মায়াদের জনসমাজ এবং সংস্কৃতি খুব লক্ষ্যণীয়ভাবে পাল্টায়নি। এবং একথাও বলা হয় মায়া-সংস্কৃতি প্রধানত শ্রমকেন্দ্রিক এবং এদের মধ্যে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অবদান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর।

এক্ষেত্রে আমার পোস্ট ক্লাসিক সময় বা যুগের কথা উল্লেখ করব। এবং এই দুই পর্বের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল শহরকেন্দ্রিকতার প্রভাব। উত্তর ক্লাসিক পর্বে মায়া জনজাতি এবং সভ্যতা-সংস্কৃতিতে নগরায়ন বা নগর সংস্কৃতির প্রাধান্য শুরু হয়। এবং এই শহরগুলি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

সেই কারণে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে যখন নগর বা শহর কমে গেল তার প্রভাব সামাজিক পরিবর্তনে খুব একটা লক্ষা করা যায়নি। অনেক সমাজ-ঐতিহাসিক মনে করেন শহরের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হল উত্তর মেক্সিকোতে ঘটে যাওয়া ধর্মত্যাগ করে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ।

কিন্তু তা সত্বেও একথা মানতে হবে মায়াদের ক্লাসিক পর্বে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক চিন্তাকর্ম একটি লক্ষ্যণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এই সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশটিই হল মূলত মায়া জনজাতিভুক্ত।

মায়ারা একদিকে নানা গোত্রের সংস্কৃতি যেমন গ্রহণ করেছিল ঠিক তেমনি তারা নানাবিধ সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতারও জন্ম দিয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে মেসোআমেরিকা অঞ্চলের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। মায়া-সংস্কৃতি মূলত মেসোআমেরিকার তিনটি অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছিল।

কিন্তু নগরকেন্দ্রক মায়া সভ্যতার উন্নতি প্রধানত দক্ষিণ গুয়াতেমালার মধ্যাঞ্চলে ঘটেছিল। এই অঞ্চলটি প্রায় ৬০ মাইল লম্বা এবং ২০ মাইল চওড়া এবং তা বৃষ্টিভেজা ক্রান্তিয় বনাঞ্চল দ্বারা ঘেরা। এই অঞ্চলে মায়া জনজাতির প্রধান শহর হল তিকাল। এছাড়া দক্ষিণদিকে ছড়িয়েছিল হন্ডুরাস পর্যন্ত। এবং এই উত্তর হন্ডুরাসের দক্ষিণপ্রান্তের শহর গড়ে উঠেছিল। এবং এর নাম হল কোপান।

গুয়াতেমালার পার্বত্য অঞ্চলে মায়া-সংস্কৃতি বিশেষভাবে ছড়াতে পারেনি। সবচেয়ে বড় এবং সম্পূর্ণ শহর বলতে যা বোঝায় তার নাম হল পালেঙ্কে (Palenque)। এই অঞ্চল ছাড়া মায়া- সভ্যতা-সংস্কৃতি যেখানে ভালভাবে উন্মোচিত হয়েছিল তার নাম হল ইউকাতান (Yucatan) উপদ্বীপ। এই অঞ্চলটিকে আমরা এখন আধুনিক মেক্সিকোর পূর্ব অংশ বলে জানি।

এই অঞ্চলটি অনেকটা শুকনো এবং চিচেন ইতজা (Chichen Itza) এবং উকসমাল সহ এই অঞ্চলে মায়াদের নগর-সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অনেক লাতিন আমেরিকা বিশেষজ্ঞ মনে করেন এইসব অঞ্চলের সংস্কৃতি খুব উঁচু মানের ছিল না।

তবে ক্লাসিক মায়াপর্বের শহরগুলির পতন ঘটে যাওয়ার পর ইউকাতান উপদ্বীপই তলতেক মায়া জনজাতির (Toltec Mayan) প্রধান অঞ্চল হয়ে উঠেছিল। এই বিশেষ জনজাতি গড়ে উঠেছিল উত্তরদিক থেকে আসা তলতেকদের সঙ্গে মূল মায়া অধিবাসীদের মিশ্রণ প্রক্রিয়ায়।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-২)

০৬:০০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়াসভ্যতার ভৌগোলিক পরিচয়

মায়া জনজাতির সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রধান অংশ হল দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার উত্তর অঞ্চল। মায়ারা এমন একটি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত যারা একটি সমগোত্রের ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক সূত্র থেকে এসেছে।মেক্সিকো উপত্যকা বাদ দিয়ে বলা যায় শহরকেন্দ্রিক অঞ্চলে মায়াদের প্রাথমিক কাল হল ৩০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ।

তবে এইসঙ্গে একথাও বলা হয় ক্লাসিক পিরিয়ড বা প্রাথমিক কাল থেকে এখন পর্যন্ত মায়াদের জনসমাজ এবং সংস্কৃতি খুব লক্ষ্যণীয়ভাবে পাল্টায়নি। এবং একথাও বলা হয় মায়া-সংস্কৃতি প্রধানত শ্রমকেন্দ্রিক এবং এদের মধ্যে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অবদান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর।

এক্ষেত্রে আমার পোস্ট ক্লাসিক সময় বা যুগের কথা উল্লেখ করব। এবং এই দুই পর্বের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল শহরকেন্দ্রিকতার প্রভাব। উত্তর ক্লাসিক পর্বে মায়া জনজাতি এবং সভ্যতা-সংস্কৃতিতে নগরায়ন বা নগর সংস্কৃতির প্রাধান্য শুরু হয়। এবং এই শহরগুলি গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

সেই কারণে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে যখন নগর বা শহর কমে গেল তার প্রভাব সামাজিক পরিবর্তনে খুব একটা লক্ষা করা যায়নি। অনেক সমাজ-ঐতিহাসিক মনে করেন শহরের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হল উত্তর মেক্সিকোতে ঘটে যাওয়া ধর্মত্যাগ করে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ।

কিন্তু তা সত্বেও একথা মানতে হবে মায়াদের ক্লাসিক পর্বে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক চিন্তাকর্ম একটি লক্ষ্যণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এই সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশটিই হল মূলত মায়া জনজাতিভুক্ত।

মায়ারা একদিকে নানা গোত্রের সংস্কৃতি যেমন গ্রহণ করেছিল ঠিক তেমনি তারা নানাবিধ সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতারও জন্ম দিয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে মেসোআমেরিকা অঞ্চলের সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। মায়া-সংস্কৃতি মূলত মেসোআমেরিকার তিনটি অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছিল।

কিন্তু নগরকেন্দ্রক মায়া সভ্যতার উন্নতি প্রধানত দক্ষিণ গুয়াতেমালার মধ্যাঞ্চলে ঘটেছিল। এই অঞ্চলটি প্রায় ৬০ মাইল লম্বা এবং ২০ মাইল চওড়া এবং তা বৃষ্টিভেজা ক্রান্তিয় বনাঞ্চল দ্বারা ঘেরা। এই অঞ্চলে মায়া জনজাতির প্রধান শহর হল তিকাল। এছাড়া দক্ষিণদিকে ছড়িয়েছিল হন্ডুরাস পর্যন্ত। এবং এই উত্তর হন্ডুরাসের দক্ষিণপ্রান্তের শহর গড়ে উঠেছিল। এবং এর নাম হল কোপান।

গুয়াতেমালার পার্বত্য অঞ্চলে মায়া-সংস্কৃতি বিশেষভাবে ছড়াতে পারেনি। সবচেয়ে বড় এবং সম্পূর্ণ শহর বলতে যা বোঝায় তার নাম হল পালেঙ্কে (Palenque)। এই অঞ্চল ছাড়া মায়া- সভ্যতা-সংস্কৃতি যেখানে ভালভাবে উন্মোচিত হয়েছিল তার নাম হল ইউকাতান (Yucatan) উপদ্বীপ। এই অঞ্চলটিকে আমরা এখন আধুনিক মেক্সিকোর পূর্ব অংশ বলে জানি।

এই অঞ্চলটি অনেকটা শুকনো এবং চিচেন ইতজা (Chichen Itza) এবং উকসমাল সহ এই অঞ্চলে মায়াদের নগর-সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অনেক লাতিন আমেরিকা বিশেষজ্ঞ মনে করেন এইসব অঞ্চলের সংস্কৃতি খুব উঁচু মানের ছিল না।

তবে ক্লাসিক মায়াপর্বের শহরগুলির পতন ঘটে যাওয়ার পর ইউকাতান উপদ্বীপই তলতেক মায়া জনজাতির (Toltec Mayan) প্রধান অঞ্চল হয়ে উঠেছিল। এই বিশেষ জনজাতি গড়ে উঠেছিল উত্তরদিক থেকে আসা তলতেকদের সঙ্গে মূল মায়া অধিবাসীদের মিশ্রণ প্রক্রিয়ায়।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১)