বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৫)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৭.০৩ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মায়াদের ভাষা

মায়া জনগোষ্ঠীদের ভাষার প্রসঙ্গে বলা যায় প্রায় ২৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে মায়াদের একটি আদি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ছিল। ঐতিহাসিক তথা প্রত্নতাত্ত্বিক ভাষায় এদের প্রোটো-মায়াগোষ্ঠী বলা হয়। এবং এই গোষ্ঠীভুক্ত ভাষাভাষী মানুষ সাধারণভাবে এখনকার গুয়াতেমালার হুয়েহুয়েতেনাঙ্গো (Huehuetenango) অঞ্চলে বাস করত।

এই প্রোটো মায়ার ভাষা পরবর্তীকালে ক্রমশ নানাভাষায় ভাগ হয়ে যায়। এবং এইসব ভাষায় কথা বলা মানুষ পরে নানা অঞ্চলে চলে যায়। এবং এইসব অঞ্চলকেই এখন আমরা উন্নত মায়া-সংস্কৃতিসম্পন্ন বলি। তবে মায়া-সভ্যতার উৎস সম্পর্কে সম্পূর্ণ একমত বলে কোনো কথা নেই। একদল নৃপ্রত্নতাত্ত্বিক মনে করেন উত্তর তাবাসকো এবং দক্ষিণ ভেরাক্রুজ শহরেই মায়া-সভ্যতার প্রথম আলো দেখা গিয়েছিল। আবার এই সঙ্গে অন্য মত হল গুয়াতেমালার নির্জন গম্ভীর পাহাড়ী মায়া-সভ্যতার উৎস।

এই সভ্যতার প্রাধান্য ছিল কৃষি, শস্যজাত দ্রব্যের। এরপরে তারা উত্তর ও পশ্চিম দিকে ছড়িয়ে যায় এবং ওলমেল (Olmec) সহ অন্যান্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ওলমেক সংস্কৃতিকে প্রথম উৎস বলা হয়। কেননা মেসো আমেরিকা অঞ্চলের নানা সমাজ সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল। ওলমেক সংস্কৃতির যে দিকটি মায়া জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল স্থাপত্যশৈলীর কিছু নমুনা, সংখ্যা এবং ক্যালেন্ডার পদ্ধতি।

এবং এই পদ্ধতি পরবর্তীকালে মায়া-ক্যালেন্ডার-এর মূল আকার ধারণ করে। মায়া জনগোষ্ঠীর ভাষার দিকটি সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে জানা যায় ৩০০০-২৫০০ খ্রিঃ পূর্ব সময়ে মায়াদের মধ্যে প্রধানত একটি ভাষাই চালু ছিল। পরবর্তীকালে নানা ধরনের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার ফলে আরো ২৩টি ভাষার সৃষ্টি হয়। এছাড়া হুয়াসতেক, পোটোসিন এবং ভেরাক্রুজ এলাকায় আরো দুটি ভাষায় মানুষ কথা বলত।

তাজের নামে এক আভিধানিক বলেছেন যে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার মানুষ যে ভাষায় কথা বলে তার থেকে আলাদা। কেউ কেউ একথাও বলেন যে জাপোতেক (Zapotec) ভাষা মায়া-ভাষার কাছাকাছি। মায়া-ভাষা উচ্চারণ এবং কানে শোনার ক্ষেত্রে বেশ সুন্দর। মায়ারণভাবে ভাষার গঠন একস্বর বিশিষ্ট। প্রচলিত কয়েকটি শব্দ তার ইংরেজিতে উচ্চারণ এবং তার অর্থ উল্লেখ করা যাক। তুলনামূলকভাবে

শব্দ                                                  ইংরেজিতে                                             অর্থ

Pol                                                      (Pole)                                                   মাথা

Uich                                                   (Weech)                                                মুখ

Ich                                                      (Eetch)                                                 চোখ

Chi                                                     (Chee)                                                    মুখ

Tzem                                                  (Tsem)                                                  বুক

Nak                                                    (Nahk)                                              পাকস্থলী

Ka                                                        (Kah)                                                   হাত

Pix                                                       (Peesh)                                                 হাঁটু

Ok                                                        (Oak)                                                    পা

Cal                                                        (Kahl)                                                  গলা

Ni                                                        (Nee)                                                   নাক

Yak                                                        (Yahk)                                                  জিভ

মায়া লিপিচিত্র: মায়া জনগোষ্ঠীর ভাষার মত তাদের লিপির বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং লক্ষ্যণীয়। এদের লেখা বা লিপিপদ্ধতির সঙ্গে সুমেরু, মিশর হরপ্পা এবং চীনের মিল পাওয়া যায়। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ক্রিস্টোফার জোনস গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে মায়াদের লিপির শব্দপ্রক্ষেপণ খুব সুন্দরভাবে সাজানো। শব্দের (sound) জন্য একটি অংশ এবং অন্য অংশটি কথার (words) জন্য।

একটি শব্দ ধ্বনির কথা সূচিত না করে ভাব নির্দেশ করেই লেখা যায়। এই বিষয়টির সঙ্গে চীনা ভাষার একটি মিল পাওয়া যায়। সপ্তম শতকের মায়া রাজা (পালেঙ্কে প্রদেশের) পাকাল (Pacal)-এর নামটি কখনো কেবল ধবনিচিত্র দিয়ে বোঝানো হত। আবার অন্য সময়ে তিনটি ভাগে আলাদা করে পা (Pa), কা (Ca), লা (La) লেখা হত। ভাষা এবং লিপি সম্পর্কে একটা নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ মত-এর সূচনা ঘটে ১৯৬০ সালে।

এই নতুন গবেষণামূলক মতামত হাজির করেন ফার্নেসী ইনস্টিটিউশন-এর গবেষক প্রসকোইকফ (Tatiana Proskowikoff)। তিনি বলেন চিত্রলিপিতে ব্যবহৃত বর্ণমালা বিশ্লেষণ করে মায়া শাসকদের সময়কাল ধরা গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় এরকম শতকরা ৮০ ভাগ চিত্রলিপির বর্ণমালা বোঝা গেছে। গবেষকদের মত অনুযায়ী বলা যায় এই ধরনের চিত্রলিপিতে কর্তা, কর্ম, ক্রিয়াপদের ব্যবহার স্পষ্টভাবেই অনুধাবন করা যায়।

এমনকি মায়াদের মধ্যে চালু সংখ্যা উত্তর-পূর্ব ভারতে মেইতিদের (Meitee) M ব্যবহৃত পদ্ধতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। এর থেকে অনেকে মনে করেন মায়া লিপির সঙ্গে মেইতি লিপির একটি উৎসগত মিল আছে। মায়াদের মধ্যে ব্যবহৃত নানা আঞ্চলিক বাচন বা ভাষা (dialect)-এর একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল।

আঞ্চলিক ভাষা

আকুয়াতাক (Aquatac)                          কাকাচিকেল (Cakachiquel)

চট (Chot)                                             চোনতাল (Chontal)

চু (Chuh)                                                  চোর্তি (Chorti)

ইক্সিল (Ixil)                                             জাকালতেক (Jacaltec)

কানজোবল (Kanjobol)                              কিকচি (Kikchi)

লাকানডন (Lacandon)                               মাম (Mam)

পাকনচি (Pakonchi)                                 পোকোনান (Pokonan)

কিচে (Quiche)                                          রাবিনাল (Rabinal)

সোলোমেক (Solomec)                             তোজোলবাল (Tojolban)

তেলতাল (Tzeltal)                                     তোতজিল (Tzotzil)

তুতুহিল (Tzutuhil)                             উসপানতেক (Uspantec)

                                                                                     উকুতেক (Yucutec)

মায়াদের মধ্যে প্রচলিত নানা বাচন ও ভাষা সময় বিশেষে আগন্তুক জনজাতি বা আদিবাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশেছে। এর ফলে দুই ভাষাকোষই কিছুটা পরিমাণে পাল্টেছে। সেক্ষেত্রে মায়া অঞ্চলে যে জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য বেশি তার প্রভাবই স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৪)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৪)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024